
মারামারি মামলার আটককৃত আসামি পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আহত করার অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জ সিংগাইর থানার একজন এসআই’র বিরুদ্ধে।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে ভুক্তভোগী ওই নারী মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর সিংগাইর থানার এসআই পার্থ শেখর ঘোষের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এছাড়া, একই মামলার আরেক আসামিকে ধরতে না পেরে তার মেয়ে এবং মেয়ের দেড় বছর বয়সী এক শিশুকে ২১ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জে ও এম তৌফিক আজমের বিরুদ্ধে।
এসআই পার্থ শেখর ঘোষের ধাক্কায় আহত অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর নাম সায়মা আক্তার ওরফে সালমা। তিনি সাংবাদিক মাসুম বাদশাকে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অন্যতম আসামি সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের হুমায়ুনের স্ত্রী। ধাক্কায় আহত হওয়ার পর সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নেন তিনি।
অপরদিকে, দেড় বছরের শিশুসন্তানসহ ২১ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা নারীর নাম সোনিয়া আক্তার। তিনি একই মামলার আরেক আসামী ওয়াজউদ্দিনের মেয়ে।
পুলিশ সুপার বরাবর অন্তঃসত্ত্বা সায়মা আক্তার ওরফে সালমার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত শনিবার দুপুর ৩টার দিকে সিংগাইর থানার এসআই পার্থ শেখর ঘোষ এবং সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মারামারি মামলার আসামি হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করতে যান। কিন্তু আসামি হুমায়ুন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যায়। সে পালিয়ে যাওয়ার কারণে এসআই পার্থ ক্ষীপ্ত হয়ে হুমায়ুনের স্ত্রী সায়মা আক্তারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
সালমা অভিযোগে উল্লেখ করেন, সায়মা আক্তার এসআই পার্থকে বলেন তিনি ৮ মাসের গর্ভবতী, একথা শোনার পরও এসআই পার্থ তাকে গালিগালাজ করতে থাকে এবং একপর্যায়ে সায়মা আক্তারকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। ধাক্কা খেয়ে সায়মা আক্তার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়দের সহযোগীতায় সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন সায়মা আক্তার সালমা।
অভিযোগে আরো বলা হয়, এ ঘটনার পর সিংগাইর থানার ওসি জে ও এম তৌফিক আজম সায়মা আক্তারের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হুমকি প্রদান করে বলেন, “হুমায়ুন আত্মসমর্পণ না করলে পরিবারের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে।”
এসময় অসুস্থ সায়মাকে সহযোগিতা করতে আসা পাশের বাড়ির সোনিয়া আক্তার ও আরিফ নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ওসির নির্দেশে। পরবর্তীতে সোনিয়া আক্তারের দেড় বছরের সন্তান থাকায় ২১ ঘণ্টা থানায় আটকে রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় ও আরিফকে আদালতে চালান করে দেয়।
সিংগাইর থানা সূত্রে জানা যায়, আসামি হুমায়ুন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হুমায়ুনের ভাই আক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনসহ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে এসআই এসআই পার্থ শেখর ঘোষ।
পুলিশ জানায়, হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার পরিবারের সদস্যরাসহ আশপাশের লোকজন পুলিশকে বাধা প্রদান করে এবং পুলিশের উপর হামলা চালায়। হামলায় এসআই পার্থ শেখর ঘোষ, পুলিশ সদস্য মাহবুবুর রহমান ও মো. শহীদুল ইসলাম আহত হয়। এ ঘটনায় এসআই পার্থ শেখর ঘোষ বাদি হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলার আসামি আক্তার হোসেন, ইয়াসমিন আক্তার চায়না, আরিফ হোসেনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এসআই পার্থ শেখর ঘোষ অন্তঃসত্ত্বা সায়মা আক্তার ওরফে সালমাকে ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “সাংবাদিক মাসুম বাদশাকে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার পরিবারে সদস্যরা এবং আশপাশের বহু লোক এগিয়ে এসে মব জাস্টিস পরিস্থিতি তৈরি করে হুমায়ুনকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে এবং আমাদের উপর হামলা চালায়। হুমায়ুনের স্ত্রী সায়মা আক্তার ওরফে সালমাকে ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি অসত্য। আমার নামে তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আর সোনিয়া আক্তারকে থানায় নিয়ে আসা হলেও ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
আসামি সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে ও এম তৌফিক আজম বলেন, “আসামি হুমায়ুনের হাতে হাতকড়া পড়ানোর আগেই সে পালিয়ে যায়। আসামী পলায়নে সহযোগিতা, পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় তদন্তে সোনিয়া আক্তারের সম্পৃক্ততা না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর বাকি চারজন সম্পৃক্ত থাকায় তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোসা. ইয়াছমিন খাতুন বলেন, “একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”