
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় মনট্রিমস কারখানায় শ্রমিকের আত্মহত্যার ঘটনায় শোক জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সকালেই কারখানার সামনে অব্যাহতির নোটিশ ও শোকাহত ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম চালু হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ওই কারখানার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়ে কারখানাতেই মো. ইদ্রিস আলী (২৩) নামে এক শ্রমিক বিষাক্ত কেমিক্যাল পান করে আত্মহত্যা করেন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক অনুসন্ধানে জেনেছেন ওই শ্রমিক অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড নামে বিষাক্ত পদার্থ সেবন করেছেন, যা তাদের প্রতিষ্ঠানে ছিল না।
মারা যাওয়া মো. ইদ্রিস আলী উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সপরিবার ভাড়া বাসায় থেকে মনট্রিমস লিমিটেড কারখানার কাজ করতেন।
কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা জানান, শ্রমিক ইদ্রিস আলী বৃহস্পতিবার রাতে তার ফেসবুক আইডিতে কারখানার অনিয়মের অভিযোগ ও কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্লানিং) কামরুল ইসলাম ও উপব্যবস্থাপক (কার্টুন সেকশন) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন। তিনি ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দেওয়ার পর আত্মহত্যা করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে ওই দুই কর্মকর্তাকে রাতেই চাকুরি থেকে অব্যাহিত প্রদান করে। এছাড়া সকালে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে একটি নোটিশ টাঙিয়ে দেন।
এতে লেখা আছে, আমাদের সহকর্মী মো. ইদ্রিস আলীর অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
এছাড়া আরেকটি অফিস আদেশ দিয়েছেন। এতে লেখা আছে, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের স্বার্থে কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্লানিং) কামরুল ইসলাম ও উপব্যবস্থাপক (কার্টুন সেকশন) হারুন অর রশিদকে চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার বন্ধ থাকার পর শনিবার সকাল থেকে কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন।
ওই কারখানা শ্রমিক লাবিব হোসেন বলেন, ইদ্রিসের মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। ইতোমধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তার পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ একটি লিখিত নোটিশে জানান, ইদ্রিসের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি গত ১৮ এপ্রিল মধ্যরাতের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে আমাদের প্রতিনিধি দল তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয় কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নোটিশে বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে সন্দেহ করা হচ্ছে ইদ্রিস 'অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড, একটি বিষাক্ত পদার্থ সেবন করেছেন। স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি অনুসরণ করে, স্থানীয় পুলিশ একটি পরীক্ষা (সুরতহাল) করেছে এবং প্রাথমিকভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে যে মৃত্যুর কারণ বিষ খাওয়ার ফলে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ইদ্রিসের পরিবারের সঙ্গে প্রাথমিক কথোপকথনে আমরা জানতে পেরেছি যে তিনি ব্যক্তিগত সমস্যায় ভুগছিলেন; যা মানসিক যন্ত্রণার কারণ ছিল। আমরা তার পরিবারকে ইতোমধ্যে ৪ লাখ টাকা প্রদান করেছি। এছাড়াও তার পরিবারের যোগ্য সদস্য বিশেষ করে তার স্ত্রী-ইচ্ছুক এবং সক্ষম যে কাউকে উপযুক্ত চাকরি দেওয়া হবে।
মনট্রিমস লিমিটেড কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) গোলাম সারওয়ার বলেন, ওই দুই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে এবং শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তার পরিবারের তিনদিনের যাবতীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্ত্রী ও পরিবারের সদস্য কেউ কারখানায় কাজ করতে চাইলে সেটিও ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি অপারেশন মো. যোবায়ের বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়নি, শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন।