Image description

প্রশাসনে ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা। তাও নিলর্জ্জ, দলকানা। শপথের সাথে বেইমানী করে দেশ ও সাধারন জনগনের অধিকার বিরোধী কার্যক্রমে আওয়ামীলীগ ফ্যাসিস্টদের সাথে মিলেমিশে হয়েছিল একাকার।
তারাই আ'লীগকে স্বৈরাচার হতে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল নৈপথ্য ভূমিকায়। জুলাই আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র জনতাকে নির্মম আঘাতে মেতে উঠেছিল তারা-ই। জনগনের সেবকের এমন বিশ্বাসহীনতায়, দীর্ঘায়িত হয়েছিল ভারতের তাবেদর আ'লীগের পতন। ৫ আগস্ট মাদার অব স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ও পলায়ন নিশ্চিত হলেও এখন প্রশাসন যন্ত্রে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তারা।
সেকারনে সারাদেশের মতো সিলেটেও ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তাদের চিন্থিতসহ তাদের কু-র্কীতির আমলনামা তুলে ধরে অপসারন ও প্রশাসনের আওতায় নিয়ে আসার দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। তারপরও এই কর্মকর্তাদের চেয়ার বহালে খুব কৌশলী ভূমিকা রাখছেন তাদের গডফাদার শীর্ষ কর্তারাও। বিশেষ করে নারী কর্মকর্তা হলে, দূর্বলতায় কাত হয়ে যান তারা। সুন্দরী নারী কর্মকর্তাদের ছলনায় সিক্ত হয়ে কাছাকাছি রেখে নিতে যান উঞ্চতা। এরকম উঞ্চনতা ছড়ানোদের একজন হলেন সুনামগঞ্জ দোয়ারাবাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু। এই তনুতে কাল বৈশাখীর ঝড় বইছে দোয়ারাবাসীর মন মেজাজ।

স্বৈরাচার হাসিনার ল্যাসপেন্সার তনুকে ৫ আগস্টের পর হবিগঞ্জের বাহুবলে বদল করা হলে তার বিরোধীতায় প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে সেখানকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। এরপর তাকে প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল রাখা হয় দোয়ারাবাজারে। গত বছরের ২৭ নভেম্বর ফাসিস্টের অন্যতম সহযোগী তৎকালীন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বাহুবলে বদলি বাতিল করে স্বপদে ফিরিয়ে নেন তাকে। কিন্তু তনুর এই অবস্থান গায়ে জ্বালার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন ফ্যাসিস্ট বিরোধী দোয়ারাবাসীর। কারন ফাসিস্ট আওয়ামীলীগ ঘরোনার তনু মুক্তিযোদ্ধা কোটার বদৌলতে নিয়েছিল সরকারী চাকুরী। এছাড়া সে ছিল ছাত্রলীগের নেত্রী।

জনশ্রুতি রয়েছে, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগের নিষ্টুর নির্মমতার মদদেও ছিল তার প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভূমিকা। রাষ্ট্রের চেয়ারে বসে, সেখান থেকে-ই ছাত্রলীগের জল্লাদদের বিভিন্নভাবে কু-পরামর্শ দিয়ে লেলিয়ে দিয়েছিলন ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে। স্বৈরাচার পতনের পর তার অবস্থান যেন রক্তপিপাসু ভ্যাম্পায়ার। ভৌতিক চরিত্র হলও বাস্তবের ভ্যাম্পয়ারদের একজন তনু। ভয়ার্থ দাঁত কেলিয়ে, জুলাই চেতনার বিরুদ্ধে অট্রহাসি দিয়ে খামছে রাখছে জনতার চেয়ার। সেই জনতার খুনে এখনও তাজা দেশের রাজপথ, হাতপাতালে কাতরাচ্ছে অসংখ্যা ছাত্র জনতা, পঙ্গুত্ববরণ করেছে অগুনতি প্রতিবাদী মানুষ।

সেকারনে চাপা ক্ষোভ ছড়াচ্ছে দোয়ারাবাসীর মাঝে। এরমধ্যে তাকে প্রত্যাহারের দাবীতে গত ১৭ এপ্রিল সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দােলন, সম্মিলিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ন সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় আহবায়ক মহিদ হাসান শান্ত।

স্থানীয় তথ্য ও আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফ্যাসিস্ট আ'লীগের অন্যতম সদস্য সাবেক এমপি, মুহিবুর রহমান মানিক ওরফে বোমা মানিকের তদবিরের কারনে এখনও দোয়ারা উপেজলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তনু।

তনু বোমা মানিকের প্রিয় তনু হিসেবে এলাকায় পরিচিত পেয়েছেন এমন, তথ্য সচেতন মহলে। তার দায়িত্ব পালনে পক্ষপাতমুলক সিদ্ধান্ত সহ প্রশাসনকে ফ্যাসিস্টদের পক্ষে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ই-মেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, তার দায়িত্বধীন এলাকায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান আশরাফী চৌধুরী বাবুকে দিয়ে বালু মহালসহ বিভিন্ন খাতে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রকাশ্য লুটপাট, চাঁদাবাজী চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান, চাঁদাবাজীতে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নামে মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে বাড়িয়ে দেন চাঁদাবাজীর রেটও। তার অতীত কর্মকান্ডের আমলনামা গা শিহরে উঠে এলাকার মানুষের চোখে। তারপরও বির্তকিত ইমেজ নিয়ে বেপরোয়াভাবে চালাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি রাতে ভোটে নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন তনু। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২য় বারের মত আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান আশরাফী বাবুকে তৎকালীন এমপি মানিকের নির্দেশে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তিনি। ফলাফলে বিএনপি নেতা আরিফুল ইসলাম জুয়েল ২১ হাজার ২২৯ ভোট এবং বাবুকে ২৫ হাজার ৬৬১ ভোট দেখিয়ে বিজয়ী করার নায়িকা ছিলেন তিনি। দোয়ারাবাজার সদর ও বাবুর কেন্দ্র এলাকায় জাল ভোটের মহোৎসব ঘটে তার ছকে।

৫ আগস্ট পট পরিবর্তন হলেও এখনো দোয়ারাবাজার উপজেলায় চলছে ফ্যাসিস্ট আমলের একতরফা শাসন নজিরে। উপজেলা প্রকল্প কমিটিতে (পিআইসি) বিএনপি জামায়াতের লোকদের বাহ্যিকভাবে তোষামোদি করলেও প্রকৃত সুবিধা ও গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন ফ্যাসিস্ট আ'লীগের কর্মী সমর্থকদের। স্থানীয় বোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আ'লীগ নেতা মিলন খান সীমান্তে চোরাচালানের গড ফাদার হলেও এখন, সে রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারন অবৈধ অর্থের সুবিধা নিচ্ছেন ইউএনও। এছাড়া বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দমনে অর্থ যোগানদাতা হিসেব চিন্তিত হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান আশরাফী বাবুকে টোটালি আগলে রেখেছেন তিনি। সাবেক এমপি বোমা মানিকের সাথে রয়েছে তার নিয়মিত যোগাযোগ। তার পরামর্শে আ'লীগ পুনর্বাসিত করে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু। সেকারনে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা,আস্থাশীল আইনশৃংখলা ও ফ্যাসিস্টদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে বির্তকিত এই ইউএনও প্রত্যাহারের দাবী এখন জনদাবীতে পরিণত হয়েছে এমন কথা এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার।
স্থানীয় প্রশাসনিক সূত্র বলছে, অতীতের পোস্টিং সহ কর্মকান্ডের কারনে ইউএনও এর চাকুরী ভবিষ্যত ঝুঁকিতে। সেকারনে শেষ মুর্হুতের লুটপাটে কোমর বেঁধে নেমেছেন তিনি। তাই আ'লীগের নেতাকর্মীদের জন্য, চেয়ারের সর্বশেষ ক্ষমতা ব্যবহারে অনেকটা একগুয়েমীভাবে রয়েছেন তনু। অধীনস্থদের বলছেন, ইউনুস সরকারের খাতায় ভালো হওয়ার সুযোগ নেই, তাই নিজের লোকদের জন্য যা করা যায় তাই করে যাবো আমি। এমনকি মাঝে মধ্যে বলেন, আমাকে যারা পোস্টিং দেন, তাদের মনযোগে থাকতে চায় আমি। বৈষম্যবিরোধী বা আ'লীগ বিরোধীদের পাত্তা দেয়া আমার কাজ না। তার কারনে দোয়ারাবাজারে ফ্যাসিস্টরা বেপরোয়া। পুলিশ প্রশাসনে পূর্বের মতোই তাদের প্রভাব। পুলিশ প্রশাসনের একাধিক সূত্র বলছে, অপারেশন ডেভিল হান্টে, আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে বাধা ইউএনও তনু। মুলত আ'লীগের রাগববোয়ালদের ব্যাপারে তদবির তার ।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বদলি ঠিকই হয়েছে, পরবর্তীতে কমিশনার স্যার আমাকে স্বপদে রেখেছেন। তার উপর আরোপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কর্তৃপক্ষ আমার ব্যাপারে সন্তুষ্ট।
সূত্র বলছে, সেই ফ্যাসিস্ট সহযোগী আবু আহমদ ছিদ্দীকী সিলেট বিভাগীয় কমিশনার পদ থেকে বদলি করা হলেও তার পছন্দের ও ফ্যাসিস্ট সহযোগী অনেক ইউএনও বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় বসে জুলাই চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে খুব কৌশলে। তারা আ'লীগ নেতাকর্মীদের আগলে রেখে, অপর্কমে জড়িয়ে রাখছে বিভিন্ন খাতে।

অথচ সেই ইউএনদের ব্যাপারে বর্তমান দায়িত্বশীলরা রহস্যজনকভাবে নির্লিপ্ত। এই সুযোগে বৈষম্যবিরোধী চেতনাকে আঘাত করছে পদে পদে, এতে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় ছাত্র-জনতার মধ্যে। বিভিন্ন থানাগুলোতে তৎকালীন ওসিদের নিয়ে যেভাবে তৎপর ছিল, ৫ আগস্ট পরবর্তী বর্তমান সরকার।

কিন্তু বৃদ্ধিবৃত্তিক অনিয়ম দুর্নীতি ও দিনের ভোট রাতের ভোটে ফ্যাসিস্ট তৈরীর কারিগর ইউএনওদের ব্যাপারে কার্যত অমনযোগী তারা। সেকারনে অপরাধ করেও তারা অনুতপ্তের বদলে, জুলাই বিপ্লবের চেতনা বিরোধীদের সাথে পূর্বের মতো আঁতাতে আখের গোছাচ্ছে।