Image description

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘‌বিশ্বের অনেক দেশে ইন্টারনেট সেবাকে একটি নাগরিক অধিকার স্বীকৃতি দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারও এটিকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। আপনাদের মনে আছে জুলাইয়ে ইন্টারনেট বন্ধ একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। আমরা ইন্টারনেট বন্ধ করার কালাকানুন বন্ধ করে দেব। ফ্রিল্যান্সাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিনিয়োগে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের বিশ্বকে দেখানো দরকার আছে যে ইন্টারনেট আর বন্ধ হবে না। এটা বিনিয়োগকারীদের দেখানোর বাধ্যবাধকতা আছে, সেটা আমাদের দেখাতে হবে।’

 

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ‘‌বাংলাদেশে যে ইন্টারনেট কোয়ালিটি সেটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট। এ নিকৃষ্ট পণ্য আপনি (ব্রডব্যান্ড ব্যবসায়ী) একটি মধ্যমানের মূল্যে বিক্রি করেন। অর্থাৎ আপনি যদি এটির কোয়ালিটি না বাড়ান তাহলে বর্তমান বাজারের মূল্য অনুযায়ী এটির দাম অনেক বেশি পড়ে। সেদিক থেকে কোয়ালিটি বিবেচনায় বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম সবচেয়ে বেশি। সে জন্য আমি ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলছি।’

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অডিটোরিয়ামে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘‌ইন্টারনেট সেবা: সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা জানান ।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘‌ইন্টারনেট সেবায় যে স্পিড সেটিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এক্ষেত্রে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে ডি রেভুলেশন ও উদ্ভাবন। আজকে আইএসপিএবি ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো যে সেবাটা দিচ্ছে এটি হচ্ছে ক্যাশিং। এর কারণ হচ্ছে আমরা উদ্ভাবন করতে পারি নাই। আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ, নাগরিক সেবা, হাসপাতালের জন্য আলাদা ইন্টারনেট সেবা নেই। আমরা এখনো পুরনো ভয়েস কলের ওপর ব্যবসা করছি। আমরা যেহেতু পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে পারছি না, তাই এটাকে একটি অলাভজনক খাত হিসেবে দেখছি। অথচ পৃথিবী ভয়েস কল থেকে সরে এসে ডিজিটাল কনটেন্টের দিকে চলে গেছে। সুতরাং বৈশ্বিক মানে নিজেকে বিবেচনা করতে পারি না।’

 

ডিজিটাল সেবায় ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সেজন্য টেলিকম সেবায় টপোলজি পরিবর্তন করবে বিটিআরসি। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘‌এখন আমরা টপোলজিতে পরিবর্তন আনব ও ডি রেভুলেশনের পথে হাটঁব। এখানে একটি বড় বিষয় হচ্ছে যে এখন আমরা অনেকগুলো লাইসেন্স আমরা তুলে ফেলব। লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় দেয়া হবে এর মধ্যে আপনাকে (প্রতিষ্ঠান) কিছু মাইলস্টোন সেট করতে হবে। তিন বছর পরও যদি সেটি ফিলআপ না করতে পারেন তাহলে আপনার লাইসেন্স নিয়ে নেয়া হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আপনার কার্যকারিতা দেখা হবে।’

 

এদিকে ৫০০ টাকায় ৫ এমবিপিএসের পরিবর্তে এখন থেকে ১০ এমপিবিএস দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আইএসপিএবির সভাপতি মো. ইমদাদুল হক। এ ঘোষণাকে যথাযথভাবে নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব। তিনি বলেন, ‘‌আপনাদের এ ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাই। তবে এটি যে দিচ্ছেন সেটি আমি নিশ্চিত হব কিভাবে। তাই এ দায়িত্বটাও আপনাদেরকে নিতে হবে। যে অঙ্গীকারটা করছেন সেটি আপনিই সম্পন্ন করবেন।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলন দমনে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। যার ফলে এ দেশের বিনিয়োগকারী, ফ্রিল্যান্সারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে আগামীতে বিনিয়োগকারীদের সে নিশ্চিয়তা দিতে চায় সরকার। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘‌বিশ্বের অনেক দেশে ইন্টারনেট সেবাকে একটি নাগরিক অধিকার স্বীকৃতি দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারও এটিকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। আপনাদের মনে আছে জুলাইয়ে ইন্টারনেট বন্ধ একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। আমরা ইন্টারনেট বন্ধ করার কালাকানুন বন্ধ করে দেব। ফ্রিল্যান্সাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিনিয়োগে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের বিশ্বকে দেখানো দরকার আছে যে ইন্টারনেট আর বন্ধ হবে না। এটা বিনিয়োগকারীদের দেখানোর বাধ্যবাধকতা আছে, সেটা আমাদের দেখাতে হবে।’

বাংলাদেশের সকল স্তরে আগামী দুই বছরের মধ্যে বিশ্বের ৩০টি দেশের মধ্যে আসতে চান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এ বিশেষ সহকারী বলেন, ‘‌ই-গর্ভনেন্স, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট. মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো পেরিয়ে আসতে চাই। আমরা ফাইবারকে মাটির নিচ দিয়ে স্থাপনে কাজ করছি। আগামী দুই বছরে বৈশ্বিক সব সূচকে ৩০-এর মধ্যে আনা হবে। এ কাজে নীতি হালনাগাদ করা হবে। এক্ষেত্রে যারা টাকার বস্তা নিয়ে প্রভাবিত করবে, তারা নিজেদের ধ্বংস ডেকে নেবে। এছাড়া আগামী জুন থেকে টেলিকম খাতের সব নিয়ন্ত্রণ নেবে সরকার। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকলে সেগুলো বন্ধ করা হবে। ইন্টারনেট ব্যবসায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না।’

টিআরএনবির সভাপতি সমীর কুমার দের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী, আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঞা, ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী, ইন্টারনেট অপারেট কোম্পানি রবির কোম্পানি সেক্রেটারি ও চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার তাইমুর রহমান, টেলিটকের এজিএম সাইফুর রহমান, টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমীন দেওয়ানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।