Image description

একটি প্রকল্পে ভূমি-আউটসোর্সিং খাতে বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও দুই কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আউটসোর্সিং খাতে কর্মচারীদের বেতন খাতেও কোনো বরাদ্দ ছিল না। এ খাতেও জুন ২০১৪ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় পাঁচ লাখ ৫১ হাজার টাকা। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের পরিপত্র-২০২২ অনুযায়ী, অননুমোদিত অঙ্গে ব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই।

‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে ঘটেছে এমনটি। আউটসোর্সিং কর্মচারীদের নিয়োগের বিষয়ে অর্থবিভাগের অনাপত্তি নিয়ে এ খাতে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। একইভাবে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে মূল অনুমোদিত প্রকল্পে বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে দুই কোটি ২৩ লাখ টাকা। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত পরিপত্র মোতাবেক অতিরিক্ত ব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই।

 

বরাদ্দ ছাড়া কখনো টাকা খরচ করা যায় না। পরিকল্পনা কমিশন থেকে লিখিত অনুমোদনও হয়নি। এটা হলে কোনো সমস্যা হতো না। এই টাকা পিডি নয়, ডিসি ব্যয় করেছেন। সরকার টু সরকার মানি ট্রান্সফার হয়েছে। এখানে কোনো ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমি মনে করি না।-প্রকল্প পরিচালক ওবায়দুল ইসলাম

এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এমন ব্যয় যাতে না হয় সেজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।

বরাদ্দ ছাড়াই বাড়তি টাকা খরচ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ওবায়দুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বরাদ্দ ছাড়া কখনো টাকা খরচ করা যায় না। পরিকল্পনা কমিশন থেকে লিখিত অনুমোদনও হয়নি। এটা হলে কোনো সমস্যা হতো না। এই টাকা পিডি নয়, ডিসি ব্যয় করেছেন। সরকার টু সরকার মানি ট্রান্সফার হয়েছে। এখানে কোনো ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমি মনে করি না।’

আউটসোর্সিং খাতে বরাদ্দ না থাকলেও সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ প্রসঙ্গে পিডি বলেন, ‘কর্মচারী খাত থেকে এই ব্যয় করেছি।’

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে ৪৫১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে জুন ২০২২ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। পরবর্তীসময়ে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয় আড়াই বছর। কতিপয় অঙ্গের ব্যয় কমানো, বাড়ানো, নতুন অঙ্গের অন্তর্ভুক্তি, নির্মাণ ও পূর্তকাজের প্রাক্কলিত ব্যয় পিডব্লিউডির রেট শিডিউল ২০২২ অনুযায়ী নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। প্রকল্পের অবশিষ্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য মোট ৪২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।

আলোচ্য প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ডিপিপির তুলনায় ব্যয় ২৫ কোটি ১৪ লাখ বা ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের উদ্দেশ্য, মূল কার্যক্রম, প্রকল্প সংশোধনের যৌক্তিকতা, অঙ্গভিত্তিক ব্যয় প্রাক্কলন, ক্রয় পরিকল্পনার বিষয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য পরিকল্পনা কমিশনে উপস্থাপন করা হয়।

প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ জানায়, প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে যে সব অঙ্গের বাস্তবায়ন কাজ এখনো শুরু হয়নি সে সব অঙ্গ বাদ দেওয়া হয়েছে। এ মুহূর্তে যে সব নির্মাণকাজ আবশ্যক নয় তা বাদ দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের সংশোধন সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্প পরিচালক সংশোধনের কারণগুলো পর্যায়ক্রমে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করেন কমিশনে। প্রকল্পের বেশকিছু নির্মাণকাজ পিডব্লিউডি রেট শিডিউল ২০১৮ অনুযায়ী চলমান। অবশিষ্ট নির্মাণকাজের ব্যয় পিডব্লিউডি রেট শিডিউল ২০২২ অনুযায়ী প্রাক্কলন করা হয়েছে।

 

বরাদ্দ-অনুমোদন ছাড়াই ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়

বেশকিছু ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, নির্মাণ পরামর্শদাতার সম্মানি খাতে মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে জুন ২০২৪ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সংশোধনে প্রস্তাব করা হয়েছে পাঁচ কোটি ৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের অধিকাংশ নির্মাণকাজের ডিজাইন/ড্রয়িং সম্পন্ন হলেও অতিরিক্ত এক কোটি ৮৮ লাখ টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব অযৌক্তিক বলে দাবি কমিশনের।

এ খাতে বরাদ্দ না বাড়িয়ে মূল অনুমোদিত ডিপিপির মতো অপরিবর্তিত রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করেছে কমিশন। প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন অঙ্গের অর্থনৈতিক কোডের বিপরীতে যে নাম ব্যবহার করা হয়েছে তা সঠিক নয়। উদাহরণস্বরূপ- আপ্যায়ন ভাতা, সম্মানি ভাতা, টিএ/ডিএ ভাতা- এসব অঙ্গের নাম পরিবর্তন করে সঠিক নাম ব্যবহারের বিষয়ে মত দিয়েছে কমিশন। কুরিয়ার খাতটি সংশোধনে নতুন অঙ্গ হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে কোনো ব্যয় না হওয়ায় এবং ডাক বাবদ বরাদ্দ থাকায় কুরিয়ার খাতটি বাদ দেওয়ার বিষয়ে একমত কমিশন।

মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে গবেষণাগারের এক হাজার ৮৫৩টি যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ইতোমধ্যে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। সংশোধনে যন্ত্রপাতির সংখ্যা ৩০৪টি কমালেও অতিরিক্ত সাত কোটি ৫৯ লাখ টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। এর যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হলে প্রাথমিকভাবে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের বিষয় উল্লেখ করা হয়। ডলারের নতুন রেট বিবেচনায় বরাদ্দ বাড়ানো যৌক্তিক বলে মনে করে না কমিশন।

 

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবহিত করা হয়, বিভিন্ন বিভাগের প্রয়োজনীয় গবেষণাগারের জন্য নতুন করে যন্ত্রপাতির চাহিদা নিরূপণ করায় কম প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বাদ দিয়ে অধিক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি অন্তর্ভুক্ত করায় ব্যয় প্রাক্কলন বেড়েছে। এ খাতের বাস্তব অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ, সংখ্যা বিবেচনায় প্রায় এক হাজার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতির তালিকা থেকে দেখা যায়, যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে মাত্র ৪৭৩টি। অর্থাৎ, বাস্তব অগ্রগতির তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি কমিশনের।

পরিকল্পনা কমিশন আরও জানায়, কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলের প্রেয়ার রুমের জন্য ৪৮ বুক সেলফের সংস্থান রাখা হয়েছে, যা অস্বাভাবিক। এছাড়া বিভিন্ন আবাসিক ভবনের জন্য আসবাবপত্রের সংখ্যা প্রাপ্যতা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হয়েছে। আসবাবপত্রের সংখ্যা বিল্ডিংয়ের লে-আউট, ব্যবহারকারী প্রাপ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে নির্ধারণ এবং আসবাবপত্রের দর বাজারদর কমিটির মাধ্যমে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করে কমিটির প্রতিবেদনসহ ব্যয় প্রাক্কলন করতে বলা হয়েছে।