
একসময় ঢাকা মহানগর পুলিশে ( ডিএমপি ) পদায়নকে গর্বের মনে করতেন পুলিশ সদস্যরা । তাই ডিএমপিতে বদলি হতে চেষ্টা , তদবির , চিঠি , সুপারিশের অন্ত ছিল না । অথচ এখন ডিএমপিতে কর্মরত পুলিশের অনেক অধস্তন সদস্য ঢাকার বাইরে বদলি হতে চাইছেন । পুলিশ সদর দপ্তরে ডিএমপি থেকে ঢাকার বাইরে বদলি চেয়ে সাড়ে সাত হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে । সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে । বদলির আবেদনকারী এই সদস্যদের মধ্যে আছেন কনস্টেবল , সহকারী উপপরিদর্শক ( এএসআই ) ও উপপরিদর্শক ( এসআই ) পদের কর্মকর্তারা । তাঁরা বলছেন , ডিএমপির চাকরিতে এখন কাজের চাপ ও মানসিক চাপ- দুটিই বেশি । এ জন্য তাঁরা রাজধানীর বাইরে যেতে চাইছেন ।
আবেদনের এই হিড়িকে পুলিশ সদর দপ্তর এ মুহূর্তে কনস্টেবল , এএসআই ও এসআইদের বদলির সব আবেদন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । ডিএমপি থেকে কাউকে সরানো যাবে না বলে সব বিভাগকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে । এরপরও চেষ্টা - তদবির থামছে না । সূত্র বলেছে , গত বছরের জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন , ছাত্র - জনতার অভ্যুত্থান- পরবর্তী ঘটনাবলি ডিএমপির অধস্তন পুলিশ সদস্যদের মানসিকতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে । আন্দোলন চলাকালে এবং ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশে সবচেয়ে বেশি পুলিশের স্থাপনায় হামলা হয় রাজধানীতে ।
ডিএমপির সদর দপ্তর সূত্র জানায় , ডিএমপির মোট অনুমোদিত সদস্য ৩২ হাজার ৯৮৭ জন । এর মধ্যে এসআই ২ হাজার ৫০০ , সার্জেন্ট ১ হাজার ৩৩ , এসআই ( সশস্ত্র ) ৪৮৯ , টাউন সাব - ইন্সপেক্টর ৬৮ , এএসআই ৪ হাজার ৮৬ , সহকারী টাউন সাব- ইন্সপেক্টর ২৩৮ , নায়েক ১ হাজার ৫৫৪ এবং কনস্টেবল ২২ হাজার ৪২ জন । ডিএমপিতে কর্মরতদের ৫ আগস্টের পর ঢাকার বাইরে বদলি করা হয় । বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে অন্য সদস্যদের ডিএমপিতে আনা হয় । ওই সদস্যরাই কয়েক মাস পরই ঢাকায় থাকতে চাইছেন না । পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায় , গত অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ডিএমপির সাড়ে ৭ হাজারের বেশি সদস্য বদলির জন্য আবেদন করেছেন । যাঁদের বেশির ভাগ কনস্টেবল ও এএসআই । এসআইরাও রয়েছেন । এ ছাড়া দেশের অন্যান্য রেঞ্জ , মহানগর ও ইউনিট থেকেও বদলির অসংখ্য আবেদন জমা পড়েছে । ১২ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক ( ডিআইজি ) কাজী মো . ফজলুল করিম স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় ডিসেম্বর পর্যন্ত সবার আবেদন বাতিল করা হয় । ওই নির্দেশনায় বলা হয় , বিভিন্ন স্মারকের মূলে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত পদের পুলিশ সদস্য , যাঁরা অন্যত্র বদলি হওয়ার আবেদন করেছিলেন , ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁদের আবেদন বিবেচিত হয়নি । শুধু পিআরএলে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের আবেদন বিবেচনায় নেওয়া হয় । রেঞ্জ , মেট্রোপলিটন ইউনিটের কনস্টেবল , এএসআই ও এসআইদের এই তথ্য জানাতে বলা হয় । এরপরও কেউ অন্যত্র বদলি হতে চাইলে তাঁদের আবার আবেদন করার নির্দেশ দেওয়া হয় ।
১৯ মার্চ ডিআইজি কাজী মো . ফজলুল করিম স্বাক্ষরিত আরেক নির্দেশনায় কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত বদলির বিষয়ে আবার আবেদন বাতিলের বিষয়টি জানানো হয় । পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায় , এতসংখ্যক আবেদন জমা পড়ায় সব আবেদন মূল্যায়ন করলে বিভিন্ন ইউনিটে ফোর্স ও জনবলের ঘাটতি হতো । তাই সমন্বয় করে সব সময় বদলির আবেদন গ্রহণ করা হয় । অবশ্য পুলিশ সদর দপ্তরের প্রশাসন বিভাগ বলছে , বদলির এই আবেদন স্বাভাবিক । ডিএমপির সূত্র বলেছে , ৫ আগস্টের পর ডিএমপির কনস্টেবল থেকে কমিশনার পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়েছে । ডিএমপিতে ঢাকার বাইরের ইউনিট , রেঞ্জ ও বিভাগ থেকে পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয় । তাঁদের অনেকের পরিবার , সন্তান ও বাবা - মা বিভিন্ন জেলায় রয়েছেন । সন্তানেরা আগের কর্মস্থলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে । তাই বেশির ভাগ সদস্য আবার বদলি হতে চাইছেন । রাজধানীতে একজন কনস্টেবল দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বেশি বাড়িভাড়া পান । এই সুবিধার চেয়ে বেশির ভাগ আবেদনকারী পরিবারের থাকাটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন । বদলির আবেদনেও পরিবারের সঙ্গে থাকার কথাই বলেছেন তাঁরা ।
সূত্র জানায় , একই জায়গায় পাঁচ বছরের বেশি চাকরি করছেন এমন এসআইদের তথ্য চেয়ে ২৪ ডিসেম্বর ডিআইজি কাজী মো . ফজলুল করিম স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা সারা দেশে পুলিশের সব ইউনিটে পাঠানো হয় । ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁদের হালনাগাদ তথ্য নেওয়া হয় । তথ্য সংগ্রহের পর গত দুই মাস ধরে তাঁদের রদবদল করা
ডিএমপির মুখপাত্র এবং জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার ( ডিসি ) মো . তালেবুর রহমান বলেন , অনেকে পারিবারিক কারণে যেতে চান । তবে অনেকে আবার থাকতেও চাইছেন । দুটি বিষয়ই রয়েছে ।