Image description

দুর্নীতির অভিযোগে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এ পরোয়ানা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি। বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও উল্লেখ করেন টিউলিপ। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের একটি আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ বলে অভিহিত করেছেন। গত সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে টিউলিপ বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কেউই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা পুরো সময়টা মিডিয়ার মাধ্যমে বিচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আমার আইনজীবীরা আগেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের চিঠি দিয়েছেন, কিন্তু তারা কোনো জবাব দেননি। টিউলিপ বলেন, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এটি সম্পূর্ণরূপে হয়রানিমূলক, আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, আমি কিছু ভুল করেছি।

বাংলাদেশি গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার একটি আদালত শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টে বিক্ষোভ দমনের পর পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। টিউলিপের এক মুখপাত্র জানান, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনার কোনো ভিত্তি নেই এবং তিনি অবৈধভাবে ঢাকায় কোনো জমি পেয়েছেন-এই অভিযোগেরও কোনো সত্যতা নেই। টিউলিপ চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের ট্রেজারিতে অর্থনৈতিক সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। কারণ তার ও তার পরিবারের নামে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের উপহার হিসেবে পাওয়া সম্পত্তি নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই তীব্র হচ্ছিল। লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টারমারের নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তদন্ত করে জানান, টিউলিপ কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেননি এবং তার কোনো সম্পদ অবৈধভাবে অর্জিত হয়েছে-এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে কিছু সম্পত্তিসংক্রান্ত রেকর্ডের ঘাটতি ছিল।

অন্যদিকে, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারে ইন্টারপোল। বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির হুমকি দিয়েছে ঢাকা। গত সোমবার (১৪ এপ্রিল) ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর একটি আদালত রোববার টিউলিপ ও তার পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। আগামী ২৭ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে তাকে জামিন চাইতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তিনি আদালতে হাজির না হলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তাকে খুঁজে বের করে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, যদি অভিযুক্ত টিউলিপ আদালতে আত্মসমর্পণ না করেন, তাহলে বাংলাদেশ পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে। দুদকের অভিযোগ, টিউলিপ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকা পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে তার মা, ভাইবোনের নামে ৩টি প্লট বরাদ্দ নেন। এসব ব্যক্তি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ জাকির হোসেন এ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেন এবং টিউলিপকে আদালতে পলাতক হিসেবে ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে তার মা শেখ রেহানা (৬৯), ভাই রাদওয়ান (৪৪) ও বোন আজমিনা (৩৪)-র বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপ ও তার পরিবার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এটা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগকে কোনো মর্যাদা দিতে চাই না। আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, আমি কিছু ভুল করেছি।

এর আগে জড়িত জানুয়ারিতে সিটি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ। ওই সময়ে ডেইলি মেইল প্রকাশ করে, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে রাশিয়া-নির্মিত পারমাণবিক প্রকল্প থেকে তিন দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি এই অভিযোগও অস্বীকার করেন। টিউলিপের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি লন্ডনের কিংস ক্রসে যে ফ্ল্যাটে থাকেন, সেটি তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক ডেভেলপারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন। যদিও এর আগে বাবা-মা কিনে দিয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন তিনি। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার যদি ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করে, তবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ও বিচারকদের কাছে পরিষ্কার প্রমাণ পেশ করতে হবে। কারণ যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ২-বি শ্রেণির প্রত্যর্পণযোগ্য দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।