Image description

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, আমাদের যথেষ্ট শক্তি আছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছি। আমাদের ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত এত কম হবে কেন। ভিয়েতনামে ১৯ শতাংশ, ভুটানে ১১-১৩ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ১৫ শতাংশ। এখানে আমরা এখনো ৬-৭ শতাংশে থাকব তা তো হয় না। আমাদের ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত বাড়াতে পারলে বিদেশী সহায়তা লাগবে না।
মঙ্গলবার স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর কথা অবান্তর। আমরা যে শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা পাচ্ছি, ২০২৬ সালে সেটা কিন্তু বন্ধ হয়ে যাবে না। ইতোমধ্যে অনেক দেশ আমাদের বলেছে, আমাদের জন্য জটিল একটা মার্কেট ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেই দিয়েছে ২০২৯ সাল পর্যন্ত সুবিধা দেবে। তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে দেব। অস্ট্রেলিয়া বলেছে গ্র্যাজুয়েশন করুক আর নাই করুক, সুবিধা যা আছে সেগুলো চলবে। ইউকে একই কথা বলেছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা চীনে গেলেন, সেখানেও চীন বলল যে, সুবিধা দিতে থাকবে। তাহলে যে জায়গায় আমাদের ব্যবসায়ী বন্ধুরা চিন্তিত, সেটা কিন্তু ইতোমধ্যে উত্তরণ হয়ে গেছে। এটা একটা বোঝার সমস্যা।
তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় দুর্বলতা আছে। যেমন- আমাদের আলাদা কোনো বাণিজ্য সংস্থা নেই। এজন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি আলাদা সেল করার, তারা শুধু বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজ করবে। আমরা শক্ত একটা ট্রেড নেগোসিয়েশন বডি তৈরি করব।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা কোনো বড় ইস্যু না। এই বিদেশী সহায়তা আমাদের কলোনিয়াল নির্ভরতা। জিডিপির তুলনায় সহায়তার আনুপাতিক হার আমরা কমিয়ে এনেছি। এটার পরিমাণ খুব অল্প। এটা না পেলেও আমাদের অসুবিধা হবে না। বিদেশী সহায়তার ওপর নির্ভর করলে আমাদের অলসতা বেড়ে যায়। গত সরকারের আমলে বিদেশী সহায়তার ওপর নির্ভরতা বেড়েছে ২০১০ সাল থেকে। তখন থেকে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আমাদের ১০ শতাংশ থেকে ছয় শতাংশে নেমেছে। এজন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এনবিআর সংস্কার করা হচ্ছে, পুলিশে সংস্কারে হাত দেওয়া হয়েছে।     
প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহাকারী বলেন, আজকের (মঙ্গলবার) মিটিংয়ে আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেছি। আমরা চিহ্নিত করেছি যে কোনো জায়গায় আমরা শক্ত অবস্থানে আছি, কোথায় আমাদের আরও শক্ত হতে হবে, আমরা আজকে পর্যালোচনা করেছি। আলোচনা করে আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট। আমাদের ‘প্লেন’ চলবে, ক্র্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নাই। ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করতে পারব। এজন্য আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে আগে থেকে। তিনি বলেন, আমাদের কর্মসংস্থানের ওপর চাপ আসতে পারে, প্রাইভেট সেক্টর চাপে পড়তে পারে, এ রকম কোন কোন জায়গায় আমাদের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। আমরা যে নীতিমালা করব, সেখানে আমাদের সম্ভাব্য দুর্যোগ হতে পারে সেগুলো আমরা তালিকা করেছি, আমরা সেভাবে প্রস্তুত থাকব, ইনশাল্লাহ। একটা উচ্চপর্যায়ের কমিটি হচ্ছে, তারা সার্বক্ষণিক এটাকে মনিটর করবে। আমাদের এখানে পর্যবেক্ষক হিসেবে শুধু সরকারি কর্মকর্তা থাকবে না, আমরা প্রাইভেট সেক্টর থেকে লোক রাখব, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসব। প্রয়োজনে আমরা স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) যারা আছে, সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এই যাত্রা করব।
ড. আনিসুজ্জামান আরও বলেন, মনে রাখতে হবে আমাদের থেকে অনেক দুর্বল দেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করে ফেলেছে। সম্প্রতি ভুটান করোনার পরপরই বেরিয়ে গেছে। ওরা পারলে আমরা পারব না কেন। সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের থাকতে হবে। প্যাসিফিক আইল্যান্ডের দেশ সামোয়াও বেরিয়ে গেছে। এখন এই মুহূর্তে ফিরে আসার বিষয়ে আমরা আজকে আলোচনা করেছি, আমাদের যথেষ্ট সামর্থ্য আছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আজকের (মঙ্গলবার) বৈঠকে বলেছেন, ‘আমাদের কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। আমাদের পূর্ণগতিতে এগিয়ে যেতে হবে।’ যত ধরনের প্রস্তুতি  দরকার সেটি প্রধান উপদেষ্টা নিতে বলেছেন। যাতে কোনো সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, বরং এটা থেকে আমরা কীভাবে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করতে পারি, সেই বিষয়টা উনি বলেছেন। 
প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশকে এই অঞ্চলের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা  বলেছেন, এলডিসি উত্তরণের পর আরও শক্তভাবে যাতে আমরা কাজ করতে পারি। সেজন্য উনি (প্রধান উপদেষ্টা) পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। এ ছাড়া কোথায় কী হচ্ছে সেটি মনিটরিং করতে বলেছেন।