
যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দিনের জন্য বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক স্থগিত করলেও এই সিদ্ধান্তকে সাময়িক স্বস্তি হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্তরে কীভাবে এগোনো যাবে, সেটির একটি সুস্পষ্ট কৌশলপত্র তৈরি করা জরুরি। অন্যথায়, সময়সীমা শেষ হওয়ার পর হঠাৎ করে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে তা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ওপর বড় ধরনের ধাক্কা আনতে পারে।
শনিবার গুলশান ক্লাবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত আলোচনায় এমন উদ্বেগ ও করণীয় তুলে ধরেন দেশের শিল্প ও রপ্তানি খাতের নেতারা। ‘বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক: পাল্টা কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি ও আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার ভবিষ্যৎ পথনকশা’ শীর্ষক এ আলোচনায় তাঁরা বলেন, শুধু সময়ক্ষেপণ নয়, এখনই প্রস্তুতি না নিলে ভবিষ্যতে এই শুল্ক নীতি বাংলাদেশের জন্য কঠিন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের সাময়িক স্থগিতাদেশকে আমরা স্বাগত জানাই, কিন্তু এটি চূড়ান্ত নয়। আগামী ৯০ দিনে কী হবে, সেটি পরিষ্কার নয়। তাই আমাদের কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে—কী সুযোগ আছে, কী প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে, সেটি নির্ধারণ করতে হবে।’ বিটিএমএ সভাপতি আরও বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে সামনে রেখে আমাদের যেসব সুযোগ-সুবিধা উঠে যাবে, তা মাথায় রেখেই স্ট্র্যাটেজি সাজাতে হবে।’
নীতি বিশ্লেষক মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘এই শুল্কের খাতভিত্তিক প্রভাব নির্ধারণ করতে হবে। কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে, আর কোন কোন পথে আমরা উত্তরণ খুঁজে পেতে পারি—এসব বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও জানান, ইউএস রিটেইলারদের সঙ্গে অতিরিক্ত খরচ ভাগ করে নেওয়ার বিষয়েও দ্রুত আলোচনা শুরু করা উচিত।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটা এখন কেবল ট্রেড নয়, বরং অর্থনৈতিক রাজনীতির অংশ। তাই কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান খুঁজে নিতে হবে।’
বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, উচ্চ শ্রম খরচের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস বা প্লাস্টিক কারখানা গড়া সম্ভব নয়, ফলে আমদানিই তাদের জন্য বাস্তব পথ। তাই আগে থেকেই যারা আলোচনা এগিয়ে নেবে, তারাই সুবিধা পাবে। তিনি তিন মাস সময়কে অপ্রতুল উল্লেখ করে দ্রুত অগ্রগতির তাগিদ দেন।
বিসিআই সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘আমাদের উৎপাদনদক্ষতা কম, জ্বালানির দাম বেশি, আবার সরবরাহও নিশ্চিত নয়। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা না বাড়ালে শুধু আলোচনায় লাভ হবে না।’
এফবিসিসিআই প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ট্রাম্প শুধু পণ্য রপ্তানির হিসাব ধরে শুল্ক বসিয়েছেন, কিন্তু সেবা বা ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি যুক্ত করেননি। এটি একধরনের কৌশল।’
ওষুধশিল্প নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এসিআই লিমিটেডের সিওও এম মহিবুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আমরা ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট হারালে আমাদের ওষুধশিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’