
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ইউনিট প্রধানদের কাছে ‘বিশেষ চিঠি’ পাঠানো হয়েছে। সূক্ষ্ম, নিরপেক্ষ ও ভালো মানের তদন্ত করতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। এমনকি নিখুঁতভাবে তদন্ত করতে পারলে মিলবে পদোন্নতি ও পদায়নও। মামলায় নিরীহ লোকজন যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে।
তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ‘অদৃশ্য শক্তির’ হস্তক্ষেপের শিকার হচ্ছেন তারা। চার্জশিটে কাকে রাখতে হবে, কাকে বাদ দিতে হবে তা নিয়েও মৌখিকভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি তারা পুলিশ সদর দপ্তরকে অবহিত করেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো শক্তির কাছে মাথা নত করা যাবে না। নিরপরাধ লোকদের হয়রানি করা যাবে না। মিথ্যা মামলার প্রমাণ মিললে বাদীর বিরুদ্ধেও নিতে হবে আইনগত ব্যবস্থা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ঢাকাসহ সারা দেশে ১৪৯৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ৫৯৯টি হত্যামামলা। চলতি মাসে ১৫ থেকে ২০টি মামলার চার্জশিট দেওয়ার কথা রয়েছে। আগামী মে মাসে চার্জশিটের সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মিথ্যা মামলার বিষয়টি সত্য। অনেকে আছেন যাদের নাম এজাহারে আছে কিন্তু তারা জড়িত নন। এমন অনেকেই আছেন যারা ঘটনার সময় দেশের বাইরে ছিলেন। তাই সঠিকভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। শুধু থানার তদন্ত নয়, এর জন্য আলাদা কমিটিও করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষভাবেই মামলার তদন্ত করতে বলা হয়েছে। কেউ মামলার তদন্তে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এটাও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন কোনো সন্ত্রাসী ও অপরাধী ছাড় না পায়।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজপি) বাহারুল আলম জানান, স্বচ্ছ ও যথাযথভাবে যেন মামলাগুলোর তদন্ত হয় এ জন্য তিনি নিজেই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক করছেন। এসব মামলা তদন্তকালে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ছে। আমরা এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ঠিক করে দ্রুত তদন্ত শেষ করতে জোর চেষ্টা করছি। নিরীহ কেউ অভিযুক্ত না হয় সেদিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো অপরাধী যেন পার পেয়ে না যায় সেদিকেও নজরে রাখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মামলার তদন্ত দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য নানাভাবে আমরা মামলাগুলোর তদন্ত তদারকি করছি। ইতিমধ্যে হত্যামামলার তদন্তের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আশা করছি, এপ্রিলের শেষ দিকে কিছু মামলা তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা যাবে। মে মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলার তদন্ত শেষ হবে।
অযাচিত হস্তক্ষেপে গলদঘর্ম তদন্ত কর্মকর্তারা: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর যেসব মামলা হয়েছে সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লোকজনকে আসামি করা হয়েছে। শুরু থেকেই মামলায় আসামি করা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়ে আসছে। যারা কখনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বা ঘটনার সময় দেশের বাইরে ছিলেন তাদেরও আসামি করা হয়েছে। নিরপরাধ ব্যবসায়ীদেরও করা হয় আসামি। এসব মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কর্মকর্তারা ‘অদৃশ্য শক্তির’ হস্তক্ষেপের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে ইউনিট প্রধানদের মাধ্যমে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মামলার তদন্তকাজে অনেকে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন তা সত্য। থানাগুলোতে কিছু অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। তারা চার্জশিটে কাকে আসামি রাখতে হবে আবার কাকে বাদ দিতে হবে তার পরামর্শ দিচ্ছে। এতে তদন্তকারী কর্মকর্তারা ত্যক্ত-বিরক্ত হচ্ছেন। আমরা নির্দেশ দিয়েছি কারও কথায় মামলার তদন্ত করা যাবে না। হামলার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদেরই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে।
তিনি আরও বলেন, তদন্তকালে মামলাগুলোর নানা ফাঁকফোকর বেরিয়ে আসছে। এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশ প্রধান মামলাগুলোর তদন্ত তদারকি করতে ঘাটে ঘাটে তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। গঠন করেছেন একাধিক টিম। তারপরও তদন্তের নানা ফাঁকফোকর বা ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে। এ সবের তদন্ত করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তাদের। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সঠিকভাবে মামলার তদন্ত করতে।
ত্রুটিপূর্ণ মামলা সুরাহা করতে প্রতিদিনই বৈঠক আইজপির: মামলার তদন্ত নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ইউনিট প্রধানদের সঙ্গে অনলাইনে জুম মিটিং করছেন। কোনো মামলার ধারা বা অন্য কোনো আইন নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে তা সুরাহা করার চেষ্টা করছেন তিনি। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হতাহতের ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে, ওইসব মামলার বেশিরভাগ এজাহারই ত্রুটি-বিচ্যুতিতে ভরপুর বলে পুলিশ সদর দপ্তর নিশ্চিত হয়েছে। ফলে তদন্ত কর্মকর্তা এবং তদন্ত তদারকি কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে ব্রিফ করছেন আইজিপি। এতে সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর তদন্ত নিষ্পত্তির পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
পুলিশের মহাপরিদর্শক ঢাকার বাইরের মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য নিচ্ছেন ভার্চুয়ালি, ঢাকাসহ আশপাশের জেলার মামলাগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছেন সশরীরে গিয়েও। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা, তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা, পুলিশ সদর দপ্তরের ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজিরাও উপস্থিত থাকছেন।
প্রথম দিকে রেঞ্জভিত্তিক মামলা তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ভার্চুয়ালি ও সশরীরে ব্রিফ করতেন আইজিপি। কিন্তু অধিকসংখ্যক মামলা থাকায় এতে দীর্ঘসময় লাগার কারণে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আইজিপি অভ্যুত্থানের মামলাগুলোর জেলাভিত্তিক তদন্তের অগ্রগতি শুনছেন। আর তদন্তের কোথাও কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়লে সেগুলোর সুরাহা করতে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সারা দেশে ১৪৯৯টি মামলার মধ্যে হত্যা মামলা ৫৯৯টি: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ঢাকাসহ সারা দেশে মোট মামলা হয়েছে ১৪৯৯টি। এরমধ্যে হত্যামামলা হয় ৫৯৯টি। আগামী দুই মাসের মধ্যে এসব মামলার চার্জশিট দাখিল করতে বলা হয়েছে। চার্জশিটে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তা ও আমলাদের বিরুদ্ধে হত্যাকা-ে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে।
হত্যামামলার মধ্যে ঢাকায় সর্বাধিক ৩৩৩টি মামলা হয়েছে। তাছাড়া ঢাকা রেঞ্জে ১৪৮টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ২০টি, রাজশাহী রেঞ্জে ২২টি, সিলেট রেঞ্জে ১৫টি, জিএমপিতে ১৬টি, সিএমপিতে ১০টি, এসএমপিতে ৩টি, খুলনা রেঞ্জে ১০টি, রংপুর রেঞ্জে ৮টি, আরএমপিতে ৫টি এবং ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৭টি মামলা রুজু হয়।
মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আইজিপি, স্বরাষ্ট্র সচিব ও অ্যাটর্নি জেনারেলের উপস্থিতিতে স্থানীয় রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটনের তদন্ত কর্মকর্তা, পিপি, বিজ্ঞ আইনজীবী ও বিচারকদের সমন্বয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক আইনগত পরামর্শ দিতে একজন অভিজ্ঞ আইন বিশারদকে অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘স্পেশাল প্রসিকিউটোরিয়াল অ্যাডভাইজার’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ত্রুটিমুক্ত তদন্ত করলেই মিলবে পদোন্নতি-পদায়ন: মামলার সঠিক ও সূক্ষ্মভাবে তদন্ত করলে পুলিশ কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হবে। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর ইউনিট প্রধানদের জানিয়ে দিয়েছে। মামলার কর্মকর্তাদের নির্ভয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভালো কাজ করার চেষ্টা করছি। জনগণকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা জানতে পেরেছি। বিশেষ করে দায়ের হওয়া গণঅভ্যুত্থানের মামলাগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করতে পারলে আমাদের পুরস্কৃত করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। নির্ভুল তদন্ত করতে পারলে পদায়ন ও পদোন্নতিও মিলবে বলে বলা হয়েছে। মামলার তদন্তকাজে ব্যাঘাত ঘটার বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করা হয়েছে। কারোর কথায় তদন্ত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।
ইউনিট প্রধানদের কাছে আইজিপির চিঠি: গত মাসে আইজিপি বাহারুল আলম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছ পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সফলতা-ব্যর্থতা তাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হবে। এটি তাদের পদায়নের ক্ষেত্রেও বিবেচনা করা হবে বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন। অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা পুলিশের একটি অন্যতম দায়িত্ব। বাংলাদেশ পুলিশ মাঠ পর্যায়ে তদন্তের পাশাপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তাসহ নানা কাজ করে। এতে করে মামলা তদন্তে তারা অনেক সময়ই মনোযোগ দেয় না। ফলে তদন্তের গুণগত মানের ক্রমাবনতি হচ্ছে। এই পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে পুলিশের সদস্যদের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা তদন্তে মনোনিবেশ করতে হবে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত ঘটনাবলি থেকে উদ্ভূত মামলাসমূহ তদন্তকারী, তদারককারী ও ইউনিট প্রধানদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
প্রমাণ মিললে মামলার বাদীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা: ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের মারধর ও গুলিতে নিহত হন সাকিব হাসান ও জাহাঙ্গীর আলম। ঘটনার দেড় মাস পর ঢাকা মহানগর বিচারিক আদালতে মামলা করেন মো. আবু বক্কর নামে এক ব্যক্তি। একই দিনে দায়ের করা আলাদা দুটি মামলায় একই নাম, ঠিকানা ও পরিচয়ে ৪৪২ জন করে ৮৮৪ জনকে আসামি করা হয়। বাদীর পরিচয়ে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিক দলের আহ্বায়ক। যদিও মামলার ব্যাপারে নিহতদের পরিবারের কেউ কিছু জানেন না।
নাম প্রকাশ না করে বাড্ডা ও মতিঝিল এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত সরকারের পতনের আগে ও পরে এলাকাতে অনেক মামলা হয়েছে। হাতেগোনা কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেও হাজার হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা করা হয়েছে। এতে করে পুলিশকে ধরপাকড়ের নামে নতুন করে বাণিজ্যের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় অনেকে প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বিষয়টিও এসব রাজনৈতিক মামলায় নাম যুক্ত করে ফায়দা নিতে চাচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, তদন্তে মিথ্যা প্রমাণ মিললে বাদীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নিরপরাধ আসামিদের মামলা থেকেও বাদ দেওয়া হবে। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না।
তদন্তের স্বার্থে কবর থেকেও লাশ উত্তোলন: মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করতে তাদের ওপর নির্দেশ রয়েছে বলে জানান ঢাকার কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্ত শেষ করা হবে। এ জন্য মামলার এজাহারে যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই করাটাই এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, অধিকাংশ মামলাতেই একশ থেকে শুরু করে সহস্রাধিক আসামি। আবার আসামিদের ঠিকানাও পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে তা যাচাই করতে হচ্ছে। এই জন্য আসামিদের ঠিকানায় অনুসন্ধান স্লিপ পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ মামলাতেই অনুসন্ধান স্লিপের জবাব আসতে বিলম্ব হচ্ছে। মামলায় আসামিদের হত্যাকাণ্ডের সময় কার কী ভূমিকা বা দায়দায়িত্ব ছিল, তাও বের করতে হচ্ছে। ঘটনাস্থলে কে গুলি চালাল, কে গুলির নির্দেশ দিল, চাক্ষুস সাক্ষী আছে কি না, ঘটনার কোনো ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র আছে কি না, তা বের করতে হচ্ছে। আবার জব্দকৃত ডিজিটাল আলামতের ফরেনসিক করতে হচ্ছে। নিহতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যাদের ময়নাতদন্ত হয়নি, তাদের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এমনকি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্তকরণের কাজটিও করতে হচ্ছে।
মামলায় অজ্ঞাত আসামিই বেশি: সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার থানাগুলোর মামলায় অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকহারে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রতিপক্ষকে হয়রানির জন্য এসব মামলা করা হচ্ছে। জমিসহ ব্যক্তিগত বিরোধের ঘটনায়ও প্রতিপক্ষকে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ জড়ানো হচ্ছে। অজ্ঞাত আসামি করে মামলার হার বেড়ে যাওয়ায় ভিন্নমত, পথ ও তুলনামূলক কম সংখ্যা আর প্রভাবশালী মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোনো এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকান্ডের পর মামলা হলে বেশিরভাগ আসামি রাখা হয় ‘অজ্ঞাত’। যদিও কিছু অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে মামলায়। এতে অপরাধে জড়িত না থাকলেও হয়রানি পোহাতে হচ্ছে অনেককেই। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ পর্যায়, জেলা, থানা ও ইউনিয়নের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকজনকে আসামি করা হয়েছে। তাছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫৮০।