Image description
প্রতিদিন গড়ে ১৫টির বেশি বৈঠক

দফায় দফায় বিদেশি কূটনীতিকদের আগমনে সরগরম হয়ে উঠেছে ঢাকার কূটনৈতিকপাড়া। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার, গণতন্ত্র ও পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বিদেশি মিশনগুলোর কূটনীতিকরাও নিজেদের মধ্যে নানা ইস্যুতে বৈঠক করছেন।

গত আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত উচ্চপর্যায়ের ২০টিরও বেশি বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। গত ৪ অক্টোবর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকা সফর করেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ছিল কোনো বিদেশি সরকারপ্রধানের প্রথম ঢাকা সফর। তিনি দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তার পাশাপাশি দেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপরও গুরুত্ব দেন। একই মাসে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্গের নেতৃত্বে আসা একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে গুরুত্ব দেয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য রূপা হক এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে কথা বলেন।

বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল অ্যান চুলিক ও তার সফরসঙ্গীরা। তাদের সফরের মূল এজেন্ডা নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করা। প্রতিনিধিদলটি এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বেলুচের নেতৃত্বে আসা একটি প্রতিনিধিদলও অবস্থান করছে ঢাকায়।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা যত এগোবে, দেশে কূটনৈতিক তৎপরতাও তত বাড়বে। নির্বাচন কীভাবে হবে, কারা অংশ নেবে কিংবা নির্বাচনের পরে কী হবে—এ নিয়ে এখন রোডম্যাপ চান বিদেশি কূটনীতিকরাও। তাই সব পক্ষের সঙ্গেই বসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫টির বেশি কূটনৈতিক বৈঠক হচ্ছে। বিদেশি মিশনের রাষ্ট্রদূত ও পলিটিক্যাল কাউন্সিলররা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় বসছেন, যেখানে নির্বাচনের রোডম্যাপ, সংস্কার এবং ক্ষমতায় এলে তাদের দেশ পরিচালনার রূপরেখা কেমন হবে—তা নিয়ে কথা হচ্ছে। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে নানা ইস্যুতে আলোচনা করছেন বিদেশি মিশনের কূটনীতিকরা।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘যারা আসছে তারা স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন চাইবে। অনেকেই দেশে আসছেন, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন; কিন্তু বিনিয়োগ করছেন না। কারণ, নির্বাচন না হলে কেউ বিনিয়োগ করবে না। ব্যবসায়ীরা তাদের মূলধন নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকারের সময়ে এর আগে যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সফরে এসেছেন, তারা ছিলেন ডেমোক্র্যাট। এই প্রথম দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা এসেছেন তারা রিপাবলিকান। ডেমোক্র্যাটরা থাকলে একটু ফ্লেক্সিবল সিচুয়েশন হতেও পারত, কারণ অনেকের সঙ্গেই প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তবে রিপাবলিকানদের বেলায় একটু ভিন্ন। রিপাবলিকানরা এখন নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এখন সংখ্যালঘু ইস্যুতেও কথা বলবে। আমেরিকা জানতে চাইবে সংখ্যালঘু ইস্যুতে কী করা হচ্ছে। যতক্ষণ দেশে নির্বাচনের রোডম্যাপ না আসবে, ততদিন বিদেশিরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলবেই।’

ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকরা নিয়মিত বৈঠকে বসছেন। কারণ, বাংলাদেশে বিদেশি যত মিশন আছে তারা তো জানতে চাইবেই নির্বাচন কবে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কী অবস্থা বা তারা কীভাবে নির্বাচন করার কথা ভাবছে, নির্বাচনে কারা অংশ নেবে, নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক (ইনক্লুসিভ) হবে কি না—এ বিষয়গুলো তারা জানতে চায়, কারণ তাদের এ দেশে ইনভেস্টমেন্ট আছে। তারা আমাদের নিয়ে যতটা না চিন্তিত, তার চেয়ে বেশি ভাবছে নিজেদের বিনিয়োগ নিয়ে। কারণ, এখন তারা কোনো চুক্তিতে গেলে পরবর্তী সরকার এসে যদি তা বাতিল করে দেয়! তাই বিভিন্ন দেশ তৎপরতা বাড়াচ্ছে এবং চাইছে যেন নির্বাচিত সরকার আসে।’