Image description

আমরা এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না। প্রতিবছর এই সময় মিডিয়া থেকে ফোন দেয়, আমাদের কষ্ট আরো বাড়ে।’ বেদনার্ত এসব কথা সিলেট অঞ্চলের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর। ২০১২ সালের আজকের এই দিন ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হন তিনি। সেই ঘটনার ১৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। গতকাল তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কালের কণ্ঠ থেকে টেলিফোনে কথা বলার সময় তিনি ওই অনুভূতি জানান।

ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যরা অনেক চেষ্টা করেও, বহু জায়গায় ধরনা দিয়েও তাঁর কোনো খোঁজ পাননি। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে তাঁর স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানান। এর পরও ইলিয়াস আলীর খোঁজ মেলেনি। গত বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশেই ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে।

তবে তাঁকে যে হত্যা করা হয়েছেএমন তথ্য সরকারের তরফ থেকে প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।

ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তাঁরা বলতে পারবেন।

এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী বলেন, তাঁকে হত্যা করা হয়েছেএমন তথ্য আমরা জানি না। আমাদেরকে সরকারের তরফ থেকে কিছু জানানো হয়নি। অনেকের মতো আমরাও গুম কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত গুম কমিশন থেকে কিছু জানানো হয়নি।আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসিনা তো শুধু আমাদের সঙ্গে নয়, সারা দেশের সঙ্গেই নাটক করেছে।

জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যার পর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ইলিয়াস আলী সভা করেন তৎকালীন শেরাটন হোটেলে (বর্তমান ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল)। সভা শেষে রাত ১১টায় তিনি বের হন। এরপর তিনি আর বাসায় ফেরেননি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কয়েকটি সংবাদপত্রে ওই সময় র‌্যাবে দায়িত্ব পালনকারী তাহেরুল ইসলাম নামের এক কর্মকর্তা গুম কমিশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশন করেছেন। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলিয়াস আলীকে অপহরণের লক্ষ্যে র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা কারাবন্দি জিয়াউল আহসানের নির্দেশে শেরাটন থেকেই অনুসরণ করছিলেন র‌্যাব সদস্য সার্জেন্ট তাহেরুল ইসলাম। একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তিনি (তাহেরুল) তদন্ত সংস্থাকে জানান, এম ইলিয়াস আলীকে গুম করার পর হত্যা করে জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে একটি কিলিং স্কোয়াড। হত্যার পর খুনিচক্র ইলিয়াস আলীর লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। জিয়াউল আহসানের নির্দেশে ঘটনার রাতে শেরাটন হোটেল থেকে তাহেরুল ইলিয়াস আলীকে অনুসরণ করেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল শেরাটন থেকে অনুসরণ করা এবং বেতার বার্তায় গতিপথ জিয়াউলকে জানানো।

নির্দেশ অনুযায়ী তিনি ইলিয়াস আলীর গাড়ি অনুসরণ করেন এবং প্রতিটি মুহূর্তে গাড়ির গতিপথ জিয়াউলকে অবহিত করেন। মহাখালী পৌঁছার পর ইলিয়াস আলীর গাড়ি সরাসরি অনুসরণ শুরু করে জিয়ার টিম। মহাখালী জলখাবার হোটেলের অদূরে বনানীর ২ নম্বর সড়কে গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে থামানোর পর ড্রাইভার আনসারসহ ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করে এই টিমের সদস্যরা। এর পরই জিয়া তাহেরুলকে বলেন, তোমার ডিউটি শেষ, চলে যাও। নির্দেশ অনুযায়ী দায়িত্ব শেষে তিনি ফিরে যান। জিয়ার টিম ইলিয়াস আলীকে নিয়ে যাওয়ার পর কী হয়েছে, সেটা তিনি বলতে পারবেন না।