
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল নওরিন উর্মি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নওরিনের বড় বোন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সহ-মানবাধিকার সম্পাদক ফাতেমা তুজ জোহরা বিষয়টি জানিয়েছেন। চিকিৎসাধীন নওরিনের পাশে বসে তার ফেসবুক আইডি থেকেই বিষয়টি জানান তিনি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমি ফাতেমা তুজ জোহরা, জান্নাতুল নওরিনের বড় বোন। আজ আমি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীর হিসাবে নয়, একজন বড় বোন হয়ে হাসপাতালে ছোট বোনের বেডের পাশে বসে লিখছি।
আজ সকালে আমার বোন আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছে। ও এখন অনেক অসুস্থ। একটা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমি জানি এখন আপনারা অনেকে হয়তো বাজে মন্তব্য করা শুরু করবেন, করেন তাতে আমাদের এখন আর কিছু যায় আসেনা। কারন আমরা এখন অনলাইন বিস্ফোরণ মধ্যেই বসবাস করছি। আপনারাই বলেন দল থেকে যৌক্তিক সমালোচনা করতে তার পর তার দায় নেন না।
আমার বাবা মা ভাই বোন বিগত ১৭ বছর জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছে। আমার ছোট বোন #নওরিন জেল জুলুম ছাত্রলীগের নির্যাতন সহ্য করেও নতুন সূর্যের অপেক্ষায় সাহসীকতার সাথে রাজপথে টিকে ছিলো। কিন্তু ৫ আগষ্টের পরে আজকে বড়ই হতাশ, এতো কষ্টের স্বাধীনতা অর্জনের পরেও আমরা স্বাধীন নই। সে ধরে নিয়েছে এই অন্ধকার আর কখনোই কাটবেনা। এভাবেই মজলুম কর্মীদের দীর্ঘশ্বাসে ধ্বংস হয়ে যায় ট্রয় সাম্রাজ্য।
দলের প্রয়োজনে কর্মীদের ব্যবহার করবেন, সে কর্মীরা দলের কাজ করতে গিয়ে বিপদে পরলে তখন সেই কর্মীকে বেওয়ারিশ বানিয়ে দেবেন। যেনো শিয়াল কুকুর বেশি করে ছিঁড়ে খেতে পারে। ১৭ বছর যাদের রক্ত, ঘাম ও শ্রমের উপরে দাঁড়িয়ে আপনারা নেতা হয়েছেন সুসময়ে তাদের গলায় ছুরি বসিয়ে স্বৈরাচার এবং স্বৈরাচারের সাথে আঁতাত করা ব্যক্তিদের নিয়ে আপনারা নিজের কোমর প্রতিষ্ঠা করেন খুবই দুঃখজনক।
এনসিপির বড় বড় নেতারা একজন হবু ধর্ষকের পক্ষে নিউজ করানোর জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়, বিবৃতি দেয়। কারন এদের কর্মী এদের কাছে রত্ন। অন্য দিকে আপনারা আপনাদের একজন নির্যাতিত নারী কর্মীরও পক্ষ নিয়ে একটা #বিবৃতি দিয়ে বলতে পারেন না ও আমাদের কর্মী আমরা এর পাশে আছি। নেতারা নাকি কর্মীদের মাথার উপরে ছাতার মতো। যে ছাতা ছায়া দেয় না তার প্রয়োজনীতা কি বলতে পারেন। ধিক্কার জানাই এমন কোরম সন্ত্রাসীদের। যারা নিজের স্বার্থ অন্য কোরাম হওয়ার কারনে প্রতিভাবান কর্মীকে ধ্বংস করে দেয়। আমার পুরো পরিবার আমার বোনের নিরাপত্তা চাই আমাদের দরকার নাই আপনাদের পরিচয় বা আপনাদের সহানুভূতির। অনেক হয়েছে আর না।
আমার পরিবারের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে এটা শুধু মাত্র আমরাই জানি। কর্মী হিসাবে #নওরিন আপনাদের কাছে অযোগ্য হতে পারে কিন্তু সন্তান হিসাবে আমার পরিবারের কাছে রত্ন। সেক্ষেত্রে আমরা শুধু ওর নিরাপত্তা চাই। দয়া করে আমার বোনটাকে বাঁচতে দেন। প্রয়োজনে আমাদের বোনটাকে আর রাজনীতি করতে দিব না। ও কখনো প্রতিহিংসার পরায়ন নয়। তবুও এ নিকৃষ্ট রাজনৈতিক খেলায় আমরা আমাদের বোন কে হারাতে চাইনা।
ফাতেমা তুজ জোহরা। সহ মানবাধিকার সম্পাদক, কেন্দ্রীয় মহিলা দল।
নওরিনের বড় বোন।
আমার বোনের এমন সিদ্ধান্তের কিছু কারন জাতি কে জানাচ্ছি।’
এর আগে গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বরিশাল শাখার দুই নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের পর হত্যার হুমকির অভিযোগ তুলেন জান্নাতুল নওরিন উর্মি। ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এই অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া ফেসবুকের ইনবক্সে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে একাধিক মেসেজ, পাশাপাশি তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালও করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন নওরিন। সঙ্গে কিছু স্ক্রিনশর্ট যুক্ত করে দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলা আউটলুক সংবাদও প্রকাশ করেছিল।
পরবর্তীতে রবিবার (৬ এপ্রিল) এনসিপির বরিশাল শাখা থেকে একটি প্রতিবাদ পাঠানো হয়। এনসিপির বরিশাল শাখা প্রেরিত ওই প্রতিবাদে বলা হয়, নিজেই আইডি খুলে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিলেন নওরিন। ওই প্রতিবাদ জানানোর পরই নওরিন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে। >
এদিকে, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব তার ফেসবুকে ওই প্রতিবাদলিপি পোস্ট করেছিলেন। সেই প্রতিবাদ নিয়েও নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। ওই প্রতিবাদে উল্লেখ করা স্ক্রিনশর্ট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। নেত্র নিউজের ডিজাইন ডিরেক্টর সুবিনয় মুস্তফী ইরন এই ব্যাপারে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে Ratul Mohammad-এর শেয়ার করা একটা পষ্ট দেখতে পাই। পোস্টটা এনসিপি নেতা Ariful Islam Adeeb-এর। তিনি দাবি করেছিলেন Jannatul Nawrin Urmi নাকি নিজেই ফেক আইডি তৈরি করে ধর্ষণের হুমকির নাটক সাজাচ্ছেন। এর পিছনে প্রমাণ হিসেবে ইনি একটি স্ক্রিনশট সংযুক্ত করেন, যেটা কিনা তিনি Urmi'র পোস্টে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এবং সেখানে উপড়ে প্রোফাইলে গেলে আইডি নাম, কোন নোটিফিকেশনের সংখ্যা আর ড্রপডাউন আইকন দেখিয়ে দাবি করেন যে এটা তার নিজের আইডি। কিন্তু তখনই আমার এটাতে খটকা লাগে। তাই আমি ট্রাই করে দেখি যে অন্যের আইডিতে গেলেই যেই আইডিতে যাওয়া হয়েছে তার নাম দেখায়। আবার, একেক ইন্টারফেসে সেটার এদিক সেদিক হতে পারে। নাম নাও থাকতে পারে। আবার নাম থাকলেই যে আইডি তার নিজেরই সেটা প্রমাণ হয় না। নিজের আইডি হলে এড ফ্রেন্ড হবারও কথা না। অন্য আইডি দিয়ে দেখলে এটা ফেইক তাও প্রমাণ করা যায় না।
এছাড়া বাকি যেই প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন Adeeb, সেগুলো বেশিরভাগই তার নিজের সন্দেহ বা ব্যাখ্যা, কোন প্রমাণ না।
আমি এটা দেখে সকালেই রাতুল ভাইকে জানাই যে এটা ফেক হবার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু তিনি সেটা সরান নাই তখনও। উল্টা আমাকে বলেন এটা নিয়ে লিখতে তাহলে সে সরাবে। কিন্তু আমি তো তাকে কারণ অলরেডিই বলেছি ইনবক্সে।
তারপর আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে এটা নিয়ে আর ঘাটানো হয়নি। এরপর কিছুক্ষণ আগে দেখলাম আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন Jannatul Nawrin Urmi। তখন মনে হলো আবার একটু ঘেটে দেখি।
তাই আমি আবার Urmi এবং Adeeb দুজনেরই আইডিতে গিয়ে পোস্টগুলো দেখি। এবং দেখতে পাই Adeeb-এর পোস্ট করা স্ক্রিনশট আলাদা। Urmi'r স্ক্রিনশটে উপরে কারও নাম নাই। হতে পারে Urmi হয়তো ক্রপ করে দিয়েছেন এডিট করে। কিন্তু তার এডিট হিস্ট্রিতে আলাদা সেরকম কিছু পেলাম না। তারপর ফটোশপে নিয়ে খেয়াল করে দেখলাম দুইটার কালাপ প্যালেট আলাদা। অর্থাৎ, Adeeb এর পোস্ট করা স্ক্রিনশট, আর Urmi-এর পোস্ট করা স্ক্রিনশট আলাদাভাবে রেন্ডার করা হয়েছে। অথবা আলাদাভাবে তোলা হয়েছে, কিংবা কোনোরকম মডিফিকেশন করা হয়েছে। নাহলে কালার প্যালেট একই থাকবার কথা। দুই স্ক্রিনশটের Add Friend বাটনের রঙের তফাৎ দেখলেই বিষয়টা ভালো করে বোঝা যাবে।
এইটা করতে করতে দেখলাম রাতুল মোহাম্মদের পাশাপাশি মোহাম্মদ ইশরাকও শেয়ার দিয়েছেন। ইশরাক অবশ্য সুন্দর করে লিখে দিয়েছেন সত্যি কিনা জানেন না। স্ট্যাটাস কপি পেস্ট করার সাথে তিনি এটাকে মিলিয়ে লিখেছেন। অথচ এটা খুবই বেসিক ব্যাপার যে প্রোফাইলের হেডার ট্যাবে নাম থাকুক বা না থাকুক— তা দিয়ে এই স্ক্রিনশটটা যে ফেইক, বা নিজেরই আইডি তা বোঝা যায় না, বা প্রমাণ হয় না। তিনি হয়তো এখন বলবেন যে তিনি নিশ্চিত না উল্লেখ করেছেন। টেকনিক্যালি হয়তো ধরাও যায় না। কিন্তু তিনি আবার পরের টেক্সটগুলাতে আদিবের দাবিগুলাকেই সমর্থন করে বা মানুষ এই ধারণা পাবে সেইভাবেই ক্যাপশন লিখেছেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাইয়ান ফেরদৌস আবার একাধিকবার এই পোস্ট শেয়ার দিয়েছেন।
এরপর আবার দেখি কালবেলাও নিউজ করে বসে আছে। সেই নিউজে মূলত আদিবের কথাই তুলে ধরেছে তারা। অথচ এধরণের অভিযোগের ক্ষেত্রে একটা বেসিক নিয়ম হলো ROR— Right of Reply। অর্থাৎ, অভিযুক্তের জবাব চেয়ে যোগাযোগ করতে হয়। যদি সে রিপ্লাই না দেয় তাহলে সেটাও উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু কালবেলা তার কিছুই করেনি। জার্নালিজমের অত্যন্ত বেসিক একটা এথিক্যাল ভায়োলেশন করেছে তারা।
রাজনৈতিক পরিসরে বিএনপি নেত্রীদের বিরুদ্ধে টেকনোলোজি ফ্যাসিলেটেড জেন্ডার বেইজড ভায়োলেন্সের ইতিহাস অনেক আগেরই, এবং ভয়ংকর। এই নিয়ে আমার নিজের কাজ করা প্রকাশিত একটা রিপোর্ট আছে গত বছরের। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখছি বিএনপি নেত্রীদের এখনও আগের মতোই আক্রমণ করা হচ্ছে। এবার করছে আরও নানা পক্ষ। এবং, বিএনপির বাইরের নেত্রীদেরকেও বিএনপির লোকজন একই ধরনের কাজ করছে। অর্থাৎ সব দলের নারীরাই এই ধরনের আক্রমণের শিকার।
নোট: Rafi Ahmed-এর প্রোফাইলের এই পার্টিকুলার স্ক্রিনশটের ক্ষেত্রে আদিব বা উর্মীর কারও দাবির প্রতিই আমি কোনও সিদ্ধান্ত দিচ্ছি না। কেবল বললাম যে আদিবের দেওয়া প্রমাণ উপযুক্ত না।’