Image description
 

ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘট কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবে আজ কর্মবিরতি পালন করেছে। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত গণহত্যা এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারও। ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যখন বিক্ষুব্ধ, ঠিক তখনই গাজা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন আলেম ও উদ্যোক্তা জামশেদ মজুমদার।  

 

রোববার রাতে নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে জামশেদ বলেন, ‘একটা সত্যি কথা বলবেন? ফিলিস্তিন নিয়ে আপনার অন্তরে রক্তক্ষরণ হয়েছে, বিষণ্নতা কাজ করছে, এর মধ্যেও আপনি আজকে নামাজ পড়েননি এমন কেউ কি আছেন? না না আমি মোটেও বলছি না- আপনি বেনামাজি হলে আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবেন না। জাস্ট আমরা কতটুকু আল্লাহকে মানি সেটা বোঝার চেষ্টা করা যদিও বোঝা সম্ভব না। আসলে যে ঈমান আমারই কাজে আসে না, সে বিষয়ে অন্যের কী কাজে আসতে পারে’।  

জামশেদের এমন মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। তারা এই আলেমের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ঘরের বাজার’ বয়কটের আহ্বান জানান। ফেসবুকে তোপের মুখে একপর্যায়ে জামশেদ তার বিতর্কিত পোস্টটি ডিলিট করে পেজটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেন। 

এর আগে ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর লাইভে এসে ফিলিস্তিন ইস্যু তুলে অযাচিতভাবে বিভিন্ন মন্তব্য করেন জামশেদ; যা মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হানে। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে ক্ষমা চান তিনি। 

 

জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান বলেন, ‘ফিলিস্তিনের পক্ষের ভাইদের হেয় করতে জামশেদের অপচেষ্টাকে নিন্দা জানাই। আমরা যারা নামাজ পড়ি এবং  ফিলিস্তিনকে সমর্থন করি তারা সব মুসলিম অমুসলিমের ফিলিস্তিনপন্থাকে শ্রদ্ধা করি। জামশেদের জানা উচিত ফিলিস্তিনের জমিনে ৬ হাজার বাংলাদেশি শহিদের কবর আছে; যারা কমিউনিস্ট মুসলমান ছিলেন। আমরা জামশেদদের এই কমিউনিস্ট শহিদদের জুতার সমানও মনে করি না’। 

জামশেদ ও তার ব্যবসা ঘরের বাজার বয়কট করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানান খোমেনী।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আশিক মাহমুদ বলেন, ‘জামশেদ মজুমদার যতই জোব্বা পরে ভিডিও বানাক, উনার আসল পরিচয় উনি ব্যবসায়ী। ২৩ সালের কোনো এক  জানুয়ারিতে ক্রিসমাসের সময় #break fastwithsantaট্যাগ ইউজ করে পোস্ট প্রমোট করে উনার প্রতিষ্ঠান Ghorerbazar. মূলত ওই পোস্টের ক্রিম হানির প্রচারণার পরই উনার বিজনেস ফুলেফেঁপে উঠে।  ওই ট্যাগওয়ালা পোস্ট এখনো আছে। যেই লোক সুন্নতি লেবাস ধরে ‘স্যান্টার’ ট্যাগ লাগায়ে বিজনেস প্রমোট করে, উনি গাজায় আগ্রাসনের বিপক্ষে কথা বলবে না- এটাই কি স্বাভাবিক না?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মারুফুর সিদ্দিকী বলেন, জামশেদ মজুমদারের মতো সালাফি মাদখালিরা বিভিন্ন অজুহাতে মুসলিমদের বিভক্ত করেছে। হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে জামশেদ মজুমদারসহ অনেক আহলে খবিশ বিরোধিতা করেছিল। কেন জানেন? এরা হাসিনাকে মুসলিম সরকার মানতো আর মুসলিম সরকারের বিরুদ্ধে নাকি আন্দোলন করা যাবে না- এভাবেই হাদিসের রেফারেন্স দেয়। এদের মতে, তথাকথিত মুসলিম লিডার জেনোসাইডাররাও মুসলিম লিডার!

তিনি বলেন, জামশেদরা হামাসের বিরুদ্ধে কাফের/খারেজি ফতোয়া দেয়। আবার এরাই আরব রাজা ও জায়োনবাদীদের সঙ্গেই উঠাবসা করে। এরা সৌদ বংশের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। এদের রাজা এমবিএস মক্কা মদিনাতে পতিতালয় স্থাপন করলেও এরা চাটবে আর বিরোধী, প্রতিবাদকারীদের বলবে- ‘আগে তোরা নিজের দেশ ঠিক কর। দেখ নিজের দেশে কত পতিতালয়। মক্কা মদিনার বিষয় সৌদিরা দেখবে’। এরা প্রটেস্টদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে ফেলেছে। বলেছে- প্রটেস্ট করা হারাম, ইভেন জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধেও না, নির্মম শাসকদের বিরুদ্ধেও না। ইউএইর কিছু মাদখালি স্কলার ফতোয়া দিয়ে ফেলেছে যে, কোনো পণ্য বয়কট করা হারাম, সেটা জায়োনিস্টদের পণ্য হলেও। তাহলে আমাদের কাজ কী? ইহুদিদের পণ্য বয়কট না করে জামশেদ মজুমদারদের ঘরের বাজারকে বয়কট করা, ঠিক না? 

জামশেদদের বয়কটের আহ্বান জানিয়ে ঢাবির সাবেক এই শিক্ষার্থী বলেন, সব মাদখালি/সালাফি/আহলে হাদিসদের সামাজিকভাবে বয়কট শুরু করুন। এরা আর কেউ না, সৌদির পেট্রোডলারে পোষা জায়োনিস্ট অনুসারী। এদের হাতেই তৈরি আইএসআইএস টেরোরিস্ট; যারা আফগানে, ইরাকে, সিরিয়াতে অসংখ্য মুসলিম হত্যা করলেও কাছেই থাকা ইসরাইলে কখনো অ্যাটাক করেনি। আইসিস সন্ত্রাসীরা এদের মাদখালি মতবাদের ফলোয়ার। 

মারুফুর আরও বলেন, এর আগেও এটা ঘটেছে। খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক জামশেদ। 

বেলাল বিন আমিন নামে আরেক ঢাবি ছাত্র লিখেছেন- জামশেদ মজুমদার যা করেছে ঠিক করেছে। কেননা সে নৈতিক দায়িত্ব থেকে তার আকিদাগত ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। কারণ ইহুদি ও সালাফি আকিদাগত ভাই ভাই। তবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে তার ‘ঘরের বাজার’ বা ইহুদি বাজারকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা। ‘ঘরের বাজার’ মূলত হচ্ছে ‘ইহুদি বাজার’।

হাসান মাহমুদ নামে একজন লিখেছেন, কৌশলে জামশেদ মজুমদার ইসরাইল ও ভারতের দালাল।

মনির উদ্দিন মনির বলেন, জামশেদ মজুমদার কখনো বলে নাই, আপনি ঘরের বাজারের মধু অর্ডার দিচ্ছেন কেন? আপনি তো নামাজই পড়েন না। নামাজ আগে নাকি মধু খাওয়া আগে। কিন্তু আজ যখন একজন সাধারণ মনুষ্যত্ব সম্পন্ন মানুষ যেখানে গাজার জন্য ব্যথিত না হয়ে পারে না, তখন তিনি প্রশ্ন শুরু করেছে, ‘গাজা নিয়ে কাঁদিস, নামাজ পড়িস ব্যাটা’। এই জামশেদ মজুমদারই ইজরাইলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিরোধিতা করে দুই বছর আগে লাইভ করেছিল। পরে ‘ঘরের বাজার' বর্জনের ডাক এলে মাফ চেয়ে ব্যবসা টেকায়। আসলে জনৈক ব্যক্তি ঠিকই বলেছিলেন, মাদখালিরা হচ্ছে উম্মাহর ইহুদি।

 

মো. তারেক রহমান বলেন, গাজা ধ্বংস করল এমন একটা সময়- যে সময় যুদ্ধ বিরতিতে গেছে গাজার যোদ্ধারা। যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে ইসরাইলের বন্দিদের কৌশলে মুক্ত করেই গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশে দিল। এই বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট এটা যে, লড়াই বন্ধ করাটাই একটা বড় ভুল ছিল। আমি এই (জামশেদ মজুমদার) লোকটির মানসিক দাসত্বের কথা ভাবছি। এরা কতটা সৌদির গোলামি করে। যখন ব্রিটেন ১৯৪৮ সালে হিটলারের ধাওয়া খাওয়া ইহুদিদের জায়গা দিতে ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় তখন থেকেই এই দ্বন্দ্ব। ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণ তখন থেকেই লড়াই করে যাচ্ছে। সৌদি আর পেট্রডলারের দাস জামশেদ মজুমদারদের মনের গভীরের ভাব ও আব্রু প্রকাশ পেয়ে গেছে। মুসলিম উম্মাহর প্রশ্ন সৌদি আরব কিছু বলে না কেন, এটাতেই ক্ষিপ্ত জামশেদ মজুমদার, যেন সৌদি সরকার তাকে এখানে কাউন্টার দিতে বসিয়ে রেখেছে। যখন জুলুমের প্রতিবাদ করা জরুরি, তখন সে জুলুমের প্রতিবাদের বিপরীতে সালাতের প্রশ্নকে ছুড়ে দিচ্ছে।

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ফিলিস্তিনের পক্ষের ভাইদের হেয় করতে জামশেদের অপচেষ্টাকে আমরা নিন্দা জানাই। বয়কট জামশেদ মজুমদার, বয়কট ঘরের বাজার।

নাসির উদ্দিন বলেন, জামশেদ মজুমদার বলছে- নামাজে গুরুত্ব দেন। ফিলিস্তিনের জন্য আপনি কাঁদতেছেন ভালো কথা, নামাজে গুরুত্ব দেন। নাটক দেখেও তো কাঁদেন। চিন্তা করেন! আজকের কান্নাকে সে নাটকের কান্না মনে করতেছে! সে কি এই হাদিস পড়ে নাই, একজন মুমিনের জীবন কাবার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ! তার ভক্তরা এসে বলবে সে খারাপ কী বলছে? ভাই তারে বইলেন মধুর বিজ্ঞাপনে নামাজের গুরুত্বের কথা বলতে।

তন্ময় সজীব বলেন, জামশেদ মুজমদার নামাজ নিয়ে কথা বলাতে কেউ ক্ষিপ্ত বা সমালোচনা করে নাই। এই খবিশের এটা উসকানিমূলক পোস্ট ছিল, সোজা কথা সৌদি আরব ও আমেরিকার দালালি। ঘুমটাওয়ালা ফতুয়াবাজ শায়েখদের মুখোশ উন্মোচন!

খালেদ সাদি বলেন, জামশেদ মজুমদার ফিলিস্তিন-গাজা ইস্যুতে আত্মিক সমালোচনা তৈরি করেছে। তার মূল খতিয়ে দেখা দরকার। একই ভুলের জন্য বারবার ক্ষমা করা যায় না।