
ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাতে রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানায় ভিড় জমিয়েছে হাজারো মানুষ।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ঈদের দ্বিতীয় দিন সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। সকাল ১১টার দিকেই চিড়িয়াখানার সামনের সড়কটি পূর্ণ হয়ে গেছে দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে। এ সময় চিড়িয়াখানা টিকিট কাউন্টার ও প্রবেশপথে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় সোয়া এক লাখ দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে, যা দিন শেষে দুই লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে তাদের ধারণা
এদিকে রিকশা, বাস, বাইকে করে চিড়িয়াখানার দিকে দর্শনার্থীদের ভিড় করায় আশপাশের এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়, ফলে অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে।
চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায় যে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে শিশু থেকে বৃদ্ধ— সব বয়সের মানুষ চিড়িয়াখানায় এসেছে। অনেকে পরিবারের ছোট সদস্যদের প্রকৃতির কাছাকাছি এনে প্রাণীদের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছেন।
তবে শিশুদের মধ্যে ছিল আলাদা উচ্ছ্বাস। তারা পশুর খাঁচার সামনে দীর্ঘ সময় কাটান, অবাক চোখে পশুদের পর্যবেক্ষণ করেন। কেউ কেউ পশুদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য আওয়াজ করে ডাকার চেষ্টা করেন।
এবার চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তিনটি জেব্রা শাবক ও ১১ মাস বয়সী দুটি বাঘের শাবক দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেছে।
আগত দর্শনার্থীদের অনেকেই ঢাকার আশপাশের এলাকা— সাভার, গাজীপুর থেকে এসেছেন। কেউ কেউ ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসে এখানে ঘুরতে এসেছেন। এছাড়া যারা এবার ঢাকায় ঈদ করছেন, তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন। আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকে একাধিকবার এসেছেন, প্রতিবারই যেন স্মৃতি রোমন্থন করেন।
উত্তরা থেকে আসা মো. বশির মিয়া বলেন, গ্রামের আত্মীয় ও ছোট ছেলেকে নিয়ে এসেছি চিড়িয়াখানায়। এত ভিড় হবে বুঝতে পারিনি, তবে বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ আর হাতি দেখে দারুণ লাগছে।
খিলগাঁও থেকে পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে এসেছেন ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, এবার ঢাকায় ঈদ করা হয়েছে, তাই সবাইকে নিয়ে বের হয়েছি। অনেক দিন আগে একবার এসেছিলাম, তখন মানুষের ভিড় কম ছিল। এবার অনেক ভিড়। তবে ছোটরা খুব উপভোগ করেছে। বাঘ দেখে তারা আনন্দে চিৎকার করেছে, কারণ এতদিন তারা এসব শুধু বই আর টিভিতে দেখেছে।
লালকুঠি এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ঢাকায় চিড়িয়াখানা ছাড়া তেমন বড় বিনোদন কেন্দ্র নেই, যেখানে পরিবার নিয়ে যাওয়া যায়। গাছপালা ও প্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটানো দারুণ লাগে।
তিনি আরও বলেন, আমার ছোট মেয়েটা প্রাণীগুলো দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছে, সামনে থেকে ডাকাডাকি করেছে। ওর আনন্দ দেখে খুব ভালো লাগলো।
ঈদ উপলক্ষে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ করেছে। গাছের গোঁড়ায় রং করা হয়েছে, বসানো হয়েছে নতুন দিকনির্দেশক ও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড। এ বছর দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ ছিল তিনটি জেব্রা শাবক এবং ১১ মাস বয়সী বাঘ শাবক ‘শাপলা’ ও ‘পদ্ম’।
গত বছর হাতির খেলা দেখতে গিয়ে এক কিশোরের মৃত্যু হওয়ায় এবার কোনও পশুর খেলা দেখানো হচ্ছে না। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তাকর্মীরা তৎপর ছিলেন।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় প্রায় সোয়া এক লাখ দর্শনার্থী এসেছে। বিকাল পর্যন্ত এই সংখ্যা দুই লাখে পৌঁছাতে পারে। নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছেন।