
‘আম্মা আর বড় আব্বা (চাচা) খালি কয় আব্বা আসমানো গেছে, আইয়া পড়বো। অহন তো ঈদো গেছেগা, কই আইলো না তো। ঈদের আগে বেহেই (সবাই) আইবো কইছিন। বড় আব্বা নতুন জামা আনলেও আমার মন খারাপ।
পাঁচ বছরের মেয়ে জান্নাতুল জানে না তার বাবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে হুমায়ুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জান্নাতুল হাতে মোবাইল। বসে বসে নিজের বাবার ছবি দেখছে সে।
গত বছরের ২০ জুলাই গাজীপুরের সাইনবোর্ড বাজারে অবস্থিত বড় ভাইয়ের দোকানের ভেতরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন হুমায়ুন।
বাড়ির বাইরে বসে শোনা যাচ্ছিল ভেতরে কারো আহাজারি। পরে জানা গেল, ঘরের ভেতরে বসে কাঁদছেন শহীদ হুমায়ুনের মা ফরিদা খাতুন। গতকাল ঈদের দিন এই আহাজারি আরো কয়েক গুণ বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন হুমায়ুনের স্ত্রী আয়েশা বেগম।
ফরিদা খাতুনের একটাই দাবি, তার সন্তান হত্যার বিচার।
স্ত্রী আয়েশা জানান, প্রতি ঈদেই স্বামী তাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে যেতেন। দূরে কোথাও গিয়ে ছবি তুলতেন। এই ছবি নিজেদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করতেন। এসব এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আগের ছবি তার সম্বল। অবুঝ মেয়ের সামনে কাঁদতেও পারেন না আয়েশা।
শহীদ হুমায়ুনের বড় ভাই হযরত আলী জানান, গত বছরের ২০ জুলাই বিকেলে ভ্যানগাড়িতে করে পানের বস্তা আসে হুমায়ুনের দোকানে। পানের বস্তা দোকানে ঢুকিয়ে দোকান বন্ধ করেন হুমায়ুন। এ সময় ভ্যানচালক গুলিবিদ্ধ হয়ে দোকানের সামনে লুটিয়ে পড়ে বাঁচও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকেন। হুমায়ুন ভ্যানচালককে উদ্ধার করে তার (হযরত আলী) দোকানে ঢুকিয়ে ভেতর থেকে সাটার লাগিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর পুলিশ বাইরে থেকে সাটার খুলে ভেতরে অবস্থানরত দোকান কর্মচারীদের লক্ষ্য করে লাঠিচার্জ ও গুলি করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হুমায়ুন।