Image description

নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামে পাঁচজন, মেহেরপুরে তিনজন, বগুড়ায় তিনজন, কিশোরগঞ্জে দুইজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইজন, ময়মনসিংহে দুইজন, নওগাঁয় এক যুবক, ফেনীতে একজন, ফরিদপুরে একজন, পিরোজপুরে একজন ও নাটোরে একজন রয়েছেন।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে দেশজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামে পাঁচজন, মেহেরপুরে তিনজন, বগুড়ায় তিনজন, কিশোরগঞ্জে দুইজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইজন, ময়মনসিংহে দুইজন, নওগাঁয় এক যুবক, ফেনীতে একজন, ফরিদপুরে একজন, পিরোজপুরে একজন ও নাটোরে একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

সোমবার (৩১ মার্চ) এই প্রাণহানির ছড়াছড়ির শুরুতে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগড়ার জাঙ্গালিয়া মাজার গেট এলাকায় সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস ও একটি মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে নয়জন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন- লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের আধার মানিক এলাকার মোহাম্মদ আলমের ছেলে রিফাত হোসেন (১৯), একই এলাকার সোনা মিয়ার ছেলে আরাফাত হোসেন (২১), একই ইউনিয়নের চকোরিয়া পাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে নাজিম উদ্দিন (২৫), একই উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি মৌলভী পাড়ার আমির হোসেনের ছেলে জিসান হোসেন (২২) ও সাতকানিয়া উপজেলার ডেলিপাড়া এলাকার মোহাম্মদ সাত্তারের ছেলে মোহাম্মদ সিদ্দিক (২০)।

মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। সোমবার বিকেলে শহরের উপকণ্ঠে আহমদ আলী টেকনিক্যাল কলেজের সামনে দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- আল ইমরান, আখতারুজ্জামান শোভন ও শিশু জুবায়ের হোসেন। আল ইমরান মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়ি বাঁকা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে। নিহত জুবায়ের মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা ধানখোলা গ্রামের আলী হাসানের ছেলে, আখতারুজ্জামান শোভন সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের হাসানুজ্জামান মোল্লার ছেলে ও এনআরবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা। আহতরা হলেন- গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের নবিছদ্দিনের ছেলে ভ্যানচালক হাসান আলী ও মাইক্রোচালক গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন পলাশ। 

নিহত আখতারুজ্জামান শোভন এবং আল ইমরান দুই বন্ধু। তারা একই মোটরসাইকেলে আমঝুপি যাচ্ছিলেন। অপরদিকে, সাজ্জাদ হোসেন পলাশ নামের এক ব্যক্তি একটি জিপ গাড়ি চালিয়ে মেহেরপুরের দিকে আসছিলেন। একই সময়ে আলী আসান নামের এক ব্যক্তি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্যান চালিয়ে আমঝুপির দিকে যাওয়ার পথে আহমদ আলী টেকনিক্যাল কলেজের সামনে ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয় বেপরোয়া গতির জিপ গাড়িটি। ভ্যানচালকসহ যাত্রীরা সবাই রাস্তার পাশে ছিটকে পড়েন। ওই সময় আখতারুজ্জামান ও তার বন্ধু আল ইমরান মেহেরপুর একটি মোটরসাইকেল চালিয়ে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় জিপ গাড়িটি মোটরসাইকেলও ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেল চালকসহ আরোহী দুইজন রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে আহতদের মধ্যে যোবায়ের ও আল ইমরানকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে পথেই তারা মারা যান।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় তিন বন্ধু পাশের টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর বাজারের কাছে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মিনহাজ মারা যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আশিকুর মারা যায়। এ ঘটনায় তাদের সঙ্গে থাকা অপর বন্ধু জিহাদ গুরুতর আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহতরা হলেন- উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের কাহালগাঁও ভাওড়পাড়া এলাকার আজহারুল ইসলামের ছেলে আশিকুর হক (১৬) ও একই গ্রামের মক্তবপাড়া এলাকার আকরামের ছেলে মিনহাজ (১৬)। আশিকুর এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। 

বগুড়ার শেরপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ও তার শিশুকন্যা এবং আরেক ঘটনায় এক যুবক নিহত হয়েছেন এবং প্রাইভেটকার ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুজন। তাদের মধ্যে মোটরসাইকেলে করে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীতে বেড়াতে যাওয়ার সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের ঝুপুনিয়া সেতুর মোড়ে তাদের মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে একটি গাছে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের হিন্দু পানিসাড়া গ্রামের অলোক সরকার (২০), জয়ন্ত সরকার (২০) ও শুভ সরকার (১৯)। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অলোক সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত জয়ন্ত সরকারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং শুভ সরকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

অন্যদিকে দুপুর সোয়া ২টার দিকে বগুড়ায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার মহিপুর জামতলা এলাকায় আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। শরিফুল ইসলাম (৩২) ও তার কন্যা শিশু সেজদাকে (৩) মোটরসাইকেলে নিয়ে মহাসড়কের পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে যাওয়ার সময় ঢাকাগামী একটি বাস তাদের চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক বাবা ও মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন। 

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- গোবরিয়া নামাকান্দা গ্রামের কৃষক নোহাজ উদ্দিনের ছেলে শামীম মিয়া (২৫) এবং লক্ষ্মীপুর কাছারীপাড়া গ্রামের কৃষক তারা মিয়ার ছেলে আল আমিন (২৭)। দুজন পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। বিকেল ৩টায় আগরপুর-পোড়াদিয়া সড়কের লক্ষ্মীপুর মধ্যপাড়া এলাকায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই শামীমের মৃত্যু হয়। গুরুতর অবস্থায় আল আমিনকে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। 

বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় রাজমনি হোটেলের সামনে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী সোহাগ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে বিপরীত দিক থেকে আসা সিএনজিচালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহতদের একজন কিশোরগঞ্জ জেলার দ্বীন ইসলাম। তবে, অপর নিহত সিএনজি অটোরিক্সা চালকের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। আহতরা হলেন, আশুগঞ্জের সোহাগপুর গ্রামের সৈয়দ হোসেনের ছেলে সৈয়দ তাজবীর (১৭) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের জুয়েল মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ নোবেল (১৭)। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।  

নওগাঁর সাপাহারে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শাহিন আলম (১৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুইজন। দুপুরের দিকে উপজেলার কালাইবাড়ী-দিঘিরহাট আঞ্চলিক সড়কের মিরাপাড়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিন আলম পোরশা উপজেলার পশ্চিম হরিপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ছেলে। আহতরা হলেন- সাপাহারের আলাদীপুর গ্রামের তাহিরের ছেলে আহসান আলী (১৭) এবং জামিরুল ইসলাম (১৭)। জামিরুল ইসলাম পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল গ্রামের মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে।

ফেনীতে দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার জনপথ বিভাগের রেস্ট হাউজের সামনে দ্রুতগতিতে আসা মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী সাকিবুল হাসান (২৪) নামের এক তরুণ নিহত হন। এ সময় তার সাথে থাকা দুই আরোহী গুরুতর আহত হন। নিহত সাকিবুল হাসান চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলমের ছেলে। আহতরা হলেন- কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ছাতিয়ানি গ্রামের ইউসুফের ছেলে রায়হান (২২) ও একই গ্রামের বেলালের ছেলে শাকিল আহমেদ (২৩)।

ফরিদপুরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটাহাঁটির ‌পিছন থেকে একটি মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা লেগে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে রাস্তায় পড়ে যান মালেক ব্যাপারী ‌(৮০) নামে এক ব্যক্তি। তাকে দ্রুত ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানকার ৬ তলায় ক্যাজুয়ালটি সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাহাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুপুরে পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মহিউদ্দিন তুহিন (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। উপজেলার ইন্দুরকানী-চন্ডিপুর সড়কের ফকির বাড়ি জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় তার স্ত্রী মিম আক্তার আহত হয়েছেন। নিহত মহিউদ্দিন তুহিন ও তার স্ত্রী মিম আক্তার ঈদ উপলক্ষে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হন। পরে উপজেলার চন্ডিপুর ও ইন্দুরকানী সড়কের ফকির বাড়ি জামে মসজিদ এলাকায় সড়কের বাক ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা সড়ক বাতির পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে মোটরসাইকেলসহ মহিউদ্দিন তুহিন ও তার স্ত্রী সড়কের নিচে পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মহিউদ্দিন তুহিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিকেলে নাটোরের বড়াইগ্রামে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লেগে আব্দুল্লাহ (১৮) নামে এক রংমিস্ত্রি নিহত হয়েছেন। তিনি বড়াইগ্রাম থানা মোড় এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে। আবদুল্লাহ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে লক্ষ্মীকোল বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। বাড়ি থেকে মাত্র ২০০ গজ দুরে ঈদগাহ এলাকায় যেতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল রাস্তার পাশের গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে খবর পেয়ে স্বজনরা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।