
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। শেষ মুহূর্তে পোশাকের দোকানগুলোতে যেমন ভিড় হচ্ছে, তেমনি ঈদে রান্নার জন্য অতিপ্রয়োজনীয় বাজার সেরে ফেলছেন সবাই। শেষ সময়ে সেমাই, চিনি ও পোলাও চালসহ ঈদ পণ্যের বেচাবিক্রি বেড়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় খুশি ক্রেতারা। সরবরাহ ঠিক থাকায় দাম না বাড়ার কারণে বিক্রেতাদেরও বেগ পোহাতে হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদে বাড়েনি সেমাই-চিনিসহ ঈদ পণ্যের দাম। ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে মানুষ কেনাকাটা করছেন। বেচাবিক্রিও বেশ বেড়েছে।
গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার, মিরপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ক্রেতারা বলছেন, ঈদ এলেই বাজারে সেমাইয়ের চাহিদা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এবারের ঈদেও বাজারে বেড়েছে সেমাই-লাচ্ছা বিক্রি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবারই মানুষ স্বস্তিতে ঈদের কেনাকাটা করছে বলেও ধারণা ক্রেতাদের।
তারা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মানুষকে জিম্মি করে মুনাফা করেছে। এসব টাকা দিয়ে করপোরেট কোম্পানির মালিকরা বিদেশে এখন বিলাসী জীবনযাপন করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে এ বছর রমজান জুড়ে বাজারের সবকিছুই মানুষের নাগালের মধ্যে ছিল।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে লাচ্ছা ও চিকন সেমাই খোলা আবার প্যাকেটজাত সেমাই বিক্রি হচ্ছে। খোলা সেমাই কিনছেন যারা তারা একটু দরদাম করে নিচ্ছেন। বিভিন্ন কোম্পানির লোগো সম্বলিত প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে গায়ের মূল্য দেখে। ক্রেতারা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী প্যাকেটজাত ও খোলা সেমাই কিনছেন।
কাওরান বাজারে দেখা যায়, উন্নতমানের খোলা লাচ্ছা সেমাই লাল ও হলুদ রঙেরগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। সাদা লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর চিকন সেমাই কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। প্যাকেটজাত ২০০ গ্রাম সেমাই ব্র্যান্ডভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রেশমি লাচ্ছা ১৮০ টাকা, ডালডায় তৈরি সেমাই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, ঘিয়ে ভাজা সেমাই ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, মুঘল লাচ্ছা ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘি ও কিশমিশযুক্ত সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা কেজি দরে। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে- ওয়েলফুড, কুপারস প্রভৃতি। এসব সেমাই পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ ও ৪০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটে। এদিকে, বড় বড় কোম্পানি সেমাইয়ের বাজারে আসার পর ছোট ছোট কোম্পানির সংখ্যা কমছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, বনফুল, কিষোয়ানসহ অনেক শিল্পগোষ্ঠী বর্তমানে সেমাই বাজারজাত করছে।
ঈদ ঘিরে সেমাইয়ের দাম কমলেও তৈরির উপকরণের দাম বেড়েছে বাজারে। গত বছরের তুলনায় চীনাবাদাম, কাজুবাদাম ও কাঠবাদামের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে, প্রায় ৩০০ টাকা কমেছে পেস্তাবাদামের দাম। তবে দামে পরিবর্তন হয়নি কিশমিশের।
কাওরান বাজারে দেখা গেছে, এক মাস আগে প্রতি কেজি চীনাবাদামের দাম ছিল ১২০ টাকা। বর্তমানে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। এ ছাড়া কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এক মাস আগে দাম ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকার মতো। ভালো মানের পেস্তাবাদাম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪৫০ টাকা কেজি দরে। গত বছরের তুলনায় দাম কমেছে ৩০০ টাকা। অন্যদিকে, কাঠবাদাম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ১৫০ টাকায়। আর প্রতি কেজি কিশমিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এক মাস আগেও দাম প্রায় একই ছিল। এ ছাড়া, দেশি বাদাম ১৮০ টাকা ও ভারতীয় বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।
কাওরান বাজারে সেমাই কিনতে আসা নজরুল নয়ন বলেন, ব্যাচেলার মেসে আমরা আটজন থাকি। ঈদে সবাই বাড়িতে গেলেও আমরা কয়েকজন যেতে পারছি না। এজন্য অল্প করে কিনলাম। তবে দাম এখন যেমন আছে মোটামুটি সবার সাধ্যের মধ্যেই বলা যায়। বাংলাদেশে হুট করে তো সব জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এজন্য বলা যাচ্ছে না কি হবে। তবে আশা করছি এমনই থাকবে।
একই বাজারে নাজমুস সাকিব বলেন, আমি নিয়মিত কাওরান বাজারে বাজার করি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মানুষ স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারছে। কোনো জিনিসেরই অতিরিক্ত মূল্য নেই বলা যায়।
ঈদে মিষ্টিমুখ করার পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো পোলাও চাল। রমজান মাসের শুরু থেকেই ১-২ টাকা করে বাড়ছিল। এখন তা খোলা চিনিগুঁড়া মানভেদে ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত চাল ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে
মিরপুর কাঁচাবাজারে পণ্য কিনতে আসা আলী হযরত বলেন, এবারের রমজান নিশ্চিন্তে পার করতেছি। এই সরকার অনেকটাই সহনীয় করে এনেছে বাজারকে। এ ছাড়া চিনি, দুধ সেমাই- সব কম দামেই রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম নতুন করে বাড়ানো হয়নি দেখেই এবার সবকিছু নাগালে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় রাজধানীতে এবার ঈদে মানুষের সংখ্যা কম। অনেকদিনের ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গেছেন সবাই। এজন্যই এবার ক্রেতা সমাগম কম। গত বছর ঈদের এক সপ্তাহ আগেও যে ভিড় দেখা গেছে, তা এবার নেই। গ্রামের বাড়িতেই সবাই লাচ্ছা সেমাই, চিনি কিনবেন বলেই ক্রেতাসমাগম কম বলে মনে করছেন তারা।