Image description

বগুড়ায় মধ্যরাতে পুলিশের একজন ওসির সঙ্গে মদ্যপ অবস্থায় মাতলামি করার অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা এবং তাঁর সঙ্গে থাকা দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা এলাকায় শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। তিনি পুলিশ সুপারের বাসায় ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সপরিবার যোগ দিতে এসেছিলেন। গ্রেপ্তারের আগে ওই তিন ব্যক্তি ওসির স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বগুড়া শহর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন (৩৬), স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আহসান হাবিব (১৮) ও নুরুল ইসলাম (১৮)। তাঁরা সবাই বগুড়া শহরের মালগ্রাম চাপড়পাড়ার বাসিন্দা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে দুইটার দিকে শেরপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম পুলিশের গাড়ি নিয়ে চা পান করতে সাতমাথায় আসেন। এ সময় গাড়িতে ওসির স্ত্রী-সন্তান বসে ছিলেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রুহুল আমিন কয়েকজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে মধ্যরাতে সাতমাথা এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। পুলিশের গাড়িতে নারী দেখে স্বেচ্ছাসেবক দলের ওই নেতা গাড়িতে বসা নারীর পরিচয় জানতে চান। এ নিয়ে ওসির সঙ্গে রুহুল আমিনের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত সদর ফাঁড়ির পরিদর্শক সেরাজুল ইসলাম রুহুল আমিনসহ তিনজনকে আটক করেন।

জানতে চাইলে শেরপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে এসপি স্যারের বাংলোয় ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে সব থানার ওসিরা সপরিবার যোগ দেন। অনুষ্ঠান শেষে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে শেরপুরে ফেরার পথে সদর ফাঁড়ির পরিদর্শক সাতমাথায় চা পানের আমন্ত্রণ জানান। সাতমাথায় গাড়ি দাঁড় করানোর পর সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা কয়েকজন যুবক এগিয়ে এসে গাড়ির ভেতরে বসা আমার স্ত্রী-সন্তানের পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। সদর ফাঁড়ির পরিদর্শক সঙ্গেই ছিলেন। তিনি ওই যুবকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি গাড়ি নিয়ে শেরপুরে চলে এসেছি। পরে সেখানে কী হয়েছে সেটা বলতে পারব না।’

বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম মঈনুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তি মধ্যরাতে সাতমাথায় মদ্যপ অবস্থায় মাতলামি এবং সাধারণ মানুষকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। এসপি স্যারের বাংলোয় অনুষ্ঠান শেষে শেরপুর থানার ওসি তাঁর গাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সাতমাথায় চা খেতে এলে তাঁর সঙ্গেও ওই মদ্যপ ব্যক্তিরা মাতলামি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ ছাড়া তাঁরা বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ওপরও চড়াও হন। পরে তাঁদের আটক করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকের দেওয়া সনদ অনুযায়ী, আটক ব্যক্তিরা মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। মদ পানের অপরাধে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বুধবার তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে রুহুল আমিন বা তাঁর সহযোগীদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সরকার মুকুল এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রুহুল আমিনকে বহিষ্কারের তথ্য জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার রুহুল আমিন বগুড়া শহর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে থাকা দুজন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ নন। রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তারের পর ওসি আমাকে সদর থানায় ডেকেছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর চিকিৎসকের সনদ দেখিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, রুহুল আমিন মদ্যপ ছিলেন। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে বগুড়া মডেল জেলা। এখানে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়ালে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই। মদ পান করে মাতলামি করায় রুহুল আমিনকে ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’