
মকবুল হোসেন নামে এক সাক্ষীকে অপহরণ করে হত্যার ভয় দেখিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।
দলটি আজহারের মামলার রায় বাতিল করে তাকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।শনিবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয় বলে দলের সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।ওই রায়ের ২ নম্বর, ৩ নম্বর এবং ৪ নম্বর অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয় যার মধ্যে ২ ও ৩ নম্বর অভিযোগের রায় দেওয়া হয়েছে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর রাজানাথপুর হাজীপাড়ার বাসিন্দা মকবুল হোসেনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে।
৫ আগস্ট স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মকবুল হোসেন মানবাধিকার সংস্থা অ্যালায়েন্স ফর উইটনেস ট্রান্সপারেন্সি-এডব্লিউটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন তাকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছিল।মকবুল হোসেন বলেছেন, তাকে সরকারি বাহিনী মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করতে শ্বশুর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে রংপুর সার্কিট হাউজে আটকে রেখে মিথ্যা সাক্ষ্য শেখায়। এরপর ঢাকায় একটা সেফ হোমে আটকে রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চার বার চেষ্টা করেও এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে হত্যার হুমকির মুখে পঞ্চম বারে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াতে সক্ষম হয়। আর এ জবরদস্তিমূলক সাক্ষ্যেই এটিএম আজহারের ফাঁসির রায় হয়।
মিথ্যা সাক্ষ্যে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রসংঘের সশস্ত্র সদস্য এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে এটিএম আজহার ট্রেনে করে নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ট্যাক্সেরহাট রেলগুমটিতে যান। সেখান থেকে ধাপপাড়া যাওয়ার পথে দুই পাশের একাধিক গ্রামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায় তারা। ধাপপাড়ায় পৌঁছে তারা মোকসেদপুর গ্রামে গুলি চালিয়ে ১৪ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করে।কিন্তু শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এখন মকবুল হোসেন বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তিনি ও তার মা দৌড়াতে থাকলে তার মা গুলিতে নিহত হন। ওই সময় তিনি পালাতে সক্ষম হন। তিনি পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে এটিএম আজহারকে দেখেননি বলে ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে চাননি।বিবৃতিতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ মকবুল হোসেনের অভিযোগের পর এটিএম আজহারের মামলার রায় বাতিল করে তাকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘ দেড় দশক মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী করে রাখায় তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।