
নতুন নতুন কায়দায় প্রতারণা করে অর্থ আয় করতেন তিনি। সুবিধা অনুযায়ী, কখনো নিজেকে পরিচয় দেন কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক। আবার কোথাও বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। বর্তমানে নিজেকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর দাবি করেন। নিজেকে বিত্তবান পরিচয় দিয়ে সুইস ব্যাংকে ৫৫ মিলিয়ন ডলার গচ্ছিত আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
২০০৮ সাল থেকে একাধিক প্রতারণার অভিযোগে জড়িত সেই যুবককে রাষ্ট্রদ্রোহ ও সন্ত্রাসী মামলায় বুধবার (২৬ মার্চ) শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পন্ডিসার এলাকার মাজার থেকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার হওয়া আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ওরফে মিনহাজ উদ্দিন নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার (২৮ মার্চ) তাকে শরীয়তপুর কোর্ট হাজতে পাঠানো হয়েছে।
নড়িয়া থানার ওসি মো. আসলাম উদ্দিন মোল্ল্যা বলেন, বিসিএস ক্যাডার ‘কথিত’ স্ত্রীর প্রভাব দেখিয়ে ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলার আসামি করে আবার তাদের সহযোগিতার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, মিনহাজ ও তার স্ত্রীর এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী। সম্প্রতি নতুন পন্থা অবলম্বন করে অর্থ কামানোর ধান্দায় নেমেছিলেন ওই যুবক।
জানা গেছে, আশরাফুজ্জামান নামের এই প্রতারকের উত্থান ২০০৮ সালে। ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগেই তার পরিবারের এক সদস্যকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন মিনহাজ। এরপর ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর তার পরিবারের জামাই পরিচয় দিয়ে সচিব, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করেন তিনি।
নিজে পুলিশ, আমলা ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মামলায় ফেলে আবার মামলা থেকে বাঁচানোর নামে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে টাকা আদায় তার প্রধান পেশা হয়ে ওঠে। এছাড়া কর্মকর্তাদের বিপদে ফেলেও টাকা নেন তিনি। অপরাধ করতে যখন যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের জামাই পরিচয় ব্যবহার করার ঘটনা জানতে পেরে তাকে তখন গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
সম্প্রতি নতুন পন্থা অবলম্বন করে অর্থ আয়ের পথে নেমেছেন তিনি। পতিত স্বৈরাচারের ১৬ বছরে বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও ভালো পদায়ন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে বলে ওসি মো. আসলাম উদ্দিন মোল্ল্যা জানান।
পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার সখ্য আছে- এমন দাবি করে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন মিনহাজ। এই প্রতারকের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে ঢাকাসহ বিভিন্ন থানায়।