Image description

দেশজুড়ে যখন ঈদের আনন্দে ভাসছে সবাই, পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য ছুটছে মানুষ, তখনও দায়িত্বের ডোরে বাঁধা একদল মানুষ। তারা ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারেন না, পরিবারের সঙ্গে বসে ঈদের খাবার খাওয়ার সুযোগ হয় না, ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েও থাকে দায়িত্বের তাগিদ। তাদের কেবলই পাহারায় থাকতে হয়, নিরাপত্তার প্রহরী হয়ে মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করতে হয়। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আনসার সদস্য, নিরাপত্তারক্ষী—নীরবে নিজেদের ঈদ উৎসর্গ করেন অন্যের নিরাপত্তার জন্য।  

শপিং মল থেকে আবাসিক এলাকা, অফিস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর—সব জায়গাতেই তারা সতর্ক পাহারায় থাকেন। দিন-রাত সমান তালে দায়িত্ব পালন করেন, যেন সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে ঈদ উদযাপন করতে পারেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা ভুলে যান নিজের আনন্দ, ঈদের দিনেও পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টকে অভ্যাসে পরিণত করেন।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত এক আনসার সদস্য বলেন, ‘প্রথম যখন চাকরি শুরু করেছিলাম, পরিবারের সঙ্গে ঈদ না করতে পারায় খুব কষ্ট লাগত, কান্না আসত। কিন্তু পরে বুঝেছি, আমরা যদি দায়িত্ব পালন না করি, তাহলে নিরাপত্তা দেবে কে? এখন আর খারাপ লাগে না, অভ্যাস হয়ে গেছে।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের দিনে কোনো বিশেষ আয়োজন করা হয় কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। অন্য প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের সময় ঈদের দিনে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হতো বলে জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এমন কিছু করলে তাদের দিনটি আরও আনন্দময় হয়ে উঠবে বলে আশা করেন।

পরিবার-পরিজন ছেড়ে দায়িত্ব পালন করতে এসে প্রথমদিকে অনেক কষ্ট লাগলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা অভ্যাস হয়ে যায় বলে জানান এক আনসার সদস্য। তিনি আরও বলেন, সবার ঈদ কাটে পরিবারে, আমাদের কাটে দায়িত্বের পাহারায়।

দায়িত্ব পালনের সময় নানা রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। অনেকেই তাদের প্রতি কঠোর ব্যবহার করেন, যা কষ্ট দেয়। ওই আনসার সদস্য বলেন, ‘আমরা নিয়ম মেনে কাজ করি, কিন্তু অনেক সময় শিক্ষার্থী বা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিরস্কার শুনতে হয়। যদি ভালোভাবে বুঝিয়ে বলা হয়, তাহলেই তো আমরা বুঝতে পারি।’  

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনীতে বদলির নিয়ম থাকায় নতুন কর্মীদের দায়িত্ব বুঝে নিতে কিছুটা সময় লাগে। ফলে নিরাপত্তার দায়িত্ব আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।  

আনসার কমান্ডার সামাদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করার সময় একবার ঈদের জামাতে উপাচার্যের পিছনের সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে পাশে নিলেন। আমার মতো সাধারণ একজন আনসার কমান্ডারের জন্য এটি ছিল দারুণ সম্মানের মুহূর্ত।’  

নিরাপত্তাকর্মীদের ছুটি ব্যবস্থাপনা নিয়েও রয়েছে কড়াকড়ি নিয়ম। যারা এবারের ঈদুল ফিতরে ছুটি পেয়েছেন, তারা কোরবানির ঈদে ছুটি পাবেন না। আবার যারা এবার দায়িত্ব পালন করছেন, তারা পরের ঈদে ছুটিতে যাবেন। আনসার বাহিনীর মোট সদস্যদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ ঈদে ছুটির সুযোগ পান।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা প্রতিদিন বাড়ি যেতে পারলেও, দূরে থাকা কর্মীদের জন্য ছুটি অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ না কাটালে আনন্দ অপূর্ণ থেকে যায়। অনেক সময় জরুরি দরকার থাকলেও ছুটির জটিলতার কারণে বাড়ি যেতে পারি না। তখন মনে হয়, চাকরিটাই ছেড়ে দিই!’  

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের দিনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিজন কর্মী ৩৬০ টাকা পান, আর বিশেষ খাবারের জন্য দেওয়া হয় ২০০-২৫০ টাকা। তবে তারা চান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য আরও ভালো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হোক।  

ওই নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘আমাদের কাজ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া। কিছু শিক্ষার্থী যখন আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে, তখন সমস্ত কষ্ট ভুলে যাই। তবে সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একই আচরণ পাওয়া যায় না।’  

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ইনচার্জ রবিউল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বর্তমানে পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মী ঈদের ছুটিতে রয়েছেন, আর বাকি সবাই নতুন শিডিউল অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছেন। ছুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই দায়িত্ব পালনের রুটিন চলবে।  

ঈদের দিনে পরিবারের সঙ্গে হাসিমুখে বসে খাবার খাওয়া, প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ নেই তাদের। তবু তারা নীরবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যান, যেন অন্যরা নিরাপদে ঈদ উদযাপন করতে পারেন। ঈদের খুশির মাঝে তাদের আত্মত্যাগের কথাও মনে রাখা দরকার।