
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ উত্থাপিত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ খণ্ডন করেছে পুলিশের মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানী দল। সংগঠনটির দাবি, বাংলাদেশে অতীতের মতোই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের মাঠপর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওইসব ঘটনা সংখ্যালঘু নির্যাতন বা সাম্প্রদায়িক ঘটনার জন্য নয়।
ব্যক্তিগত বিরোধ, জমিজিরাত নিয়ে বিরোধ, পাওনা টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে হামলা, চুরিসংক্রান্ত, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, ডাকাতি, অবৈধ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণ ও মানসিক রোগীর দ্বারা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ৯২টি ঘটনা প্রকাশ করা হয়। তবে পুলিশ বলছে, ৫৯টি ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও বাকি ৩৩টি ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
আবার এই ৫৯টি ঘটনাও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে মূল ঘটনাকে আড়াল করে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চক্রান্তের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওইসব প্রত্যেক ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। তাতে তদন্ত করে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরে মামলা দায়ের হয়েছে। কোনো কোনো মামলা তদন্ত চলছে। আবার অনেক মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কিছু ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো ৮ জানুয়ারি গাইবান্ধা জেলার সদর থানার চকচকা এলাকায় ডিপুল সরকারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে জানা যায়, সে একজন পেশাদার ডাকাত। তার নামে সংশ্লিষ্ট থানায় ডাকাতির মামলা রয়েছে। মূলত ডাকাতিকে কেন্দ্র করে ওই খুনের ঘটনা ঘটে।
গত ৯ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলার সদর থানার বড় বাজার শালর্থী কনভেনশন এলাকায় দিলীপ কুমারকে (৭১) হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর-১৫। অজ্ঞাত আঁততায়ীরা তার বাড়িতেই তাকে খুন করে। ওই সময় তার স্ত্রী ঢাকার বাসায় ছিলেন। পুলিশ মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে জানতে পারে ঘটনাটি মূলত চুরিকে কেন্দ্র করে।
এ ছাড়াও গত ১৫ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর থানার নয়ানগর এলাকায় পলাশের মাফলার পেঁচানো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় অপরাধীরা তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় বলে পুলিশ জানতে পারে।
এ ছাড়াও মৌলভীবাজারে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে দীপেন মুন্ডাকে খুন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে পূর্ববর্তী সংঘাতের সঙ্গে জড়িত অজ্ঞাত আঁততায়ীরা গুলি করে হত্যা করে বলে পুলিশ মাঠপর্যায়ের তদন্তে জানতে পারে।
পুলিশ জানায়, ওইসব মামলার ব্যক্তিগত বিরোধ, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা দুর্ঘটনার ফলে হয়েছিল, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে নয়।
এর আগেও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এই ধরনের ঘটনা ভুলভাবে প্রকাশ করেছে। বারবার তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে বিতর্কিত দাবি করেছে। কিন্তু সত্য ঘটনা তাদের সামনে প্রকাশ পেলেও তারা তা স্বীকার করে না।
এদিকে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দেওয়া প্রতিবেদন মোটিভেটেড বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, তাদের মোটিভেটেড রিপোর্টের ওপর বাংলাদেশকে অনেকেই পোট্রে করতে চাচ্ছে। সেখানে দেখাতে চাচ্ছে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে এ ধরনের প্রজেকশনটা করে। তাদের তৃতীয় প্রতিবেদনে উল্লিখিত ১১টি ঘটনা পুলিশ তদন্ত করেছে। তদন্তে দেখা গেছে, একটির সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সম্পৃক্ততা নেই। সংগঠনটি যে প্রতিবেদন তৈরি করে, সেটা বিশ্বের অনেকেই টুইট করে। দেখা যাচ্ছে, ইউএসএ সিনেটে বা ইউকে কমনসে এ প্রতিবেদনগুলো উদ্ধৃতি (সাইটেশন) করা হয়।
ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি নাÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপাতত আমরা চাচ্ছি তারা গঠনমূলক রোল পালন করবে। আমরা চাই দেশের মানবাধিকার নিয়ে সবাই রিপোর্ট করুক, সত্যটা উঠে আসুক।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যে প্রতিবেদন দিচ্ছে, সেগুলোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাকে যাচাই-বাছাই করার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। একই অনুরোধ দেশীয় মানবাধিকার সংস্থার প্রতিও করেন তিনি।