Image description
ঈ দ যা ত্রা

ঈদের আর কয়েকদিন বাকি। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে রাজধানীবাসীর ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। ভিড় বাড়ছে বাস টার্মিনালগুলোতে। ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে দেড় কোটি মানুষ গ্রামে যাবেন। এর বড় অংশের যাতায়াতের মাধ্যম বাস। তবে ঈদ ঘিরে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গতকাল সরজমিন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড ঘুরে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীরা বলছেন, বাস কাউন্টারগুলোতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে। তবে টিকিটে উল্লেখ করা হচ্ছে না টাকার পরিমাণ। বিশেষ করে, লোকাল বাসগুলোর কর্মীরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে। 

ঢাকা-ফেনী-চট্টগ্রাম রুটে চলা স্টার লাইন পরিবহনের যাত্রী হাবিবুর রহমান বলেন, স্টার লাইন পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযোগোর শেষ নেই। এতদিন তারা ঢাকা-ফেনী ভাড়া নিয়েছে ৩৬০ টাকা করে। ঈদের সময় এখন ভাড়া বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করেছে।  আবার,  এদের কাউন্টারে সারা বছরই তারা টিকেটের একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রাখে। যাত্রীরা গেলে সঙ্গে সঙ্গে বলে টিকেট না-ই,  কিন্তু যে সকল যাত্রী ভাড়া কিছুটা বাড়িয়ে দেয়, তাদেরকে টিকেট বের করে দেয় ঠিকই। প্রতিটি বাসে তারা এমন কয়েকটি সিট রাখে, আর যাত্রীদের দেখায় আসলে কোনো সিট খালি নেই। 
ইকবাল নামের সার্বিক বাসের এক যাত্রী বলেন, আমি সার্বিক বাসের যাত্রী। আমি নিজেই ভুক্তভোগী। নির্ধারিত ভাড়া ৬০০ টাকা, কিন্তু তারা ডেকে ডেকে একেকজন থেকে একেক রকম ভাড়া নিচ্ছে। বাইরে হেঁটে হেঁটে যাত্রী ডাকে। আর যাত্রীদের  যার থেকে যা পারে তাই নিচ্ছে। ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।  লক্ষ্মীপুর যাওয়ার জন্য হিমাচল বাসের টিকেট কেটেছেন আকবর নামের এক যাত্রী। লক্ষ্মীপুর চৌমুহনী  যাবেন। চারটি টিকেট কেটেছেন চারজনের জন্য। আকবর বলেন, আমার ভাড়া ৬০০ টাকা। আমার কাছ থেকে রেখেছে ৭০০ টাকা। দুইটা টিকেটে আমার থেকে ২০০ টাকা করে বেশি রেখেছে। অন্য দুইটা টিকেট চৌমুহনী যাওয়ার জন্য কেটেছি। যেখানে আমার থেকে প্রতি টিকেটে ৫০ টাকা করে বেশী রেখেছে। টাকা বেশি রাখার বিষয়টি তাৎক্ষণিক  স্বীকার করেছে হিমাচল বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা। সায়েদাবাদ স্টার লাইন কাউন্টারের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ঈদের সময় কোনো বাস ভাড়া বাড়ায় না আমাকে দেখান। সব বাসই ভাড়া বাড়ায়। আমাদের বাসের ভাড়াও বেড়েছে ৪০ টাকা। তবে চার্ট অনুযায়ী আমরা ভাড়া আগে কম নিতাম। চার্ট অনুযায়ী ভাড়া ৪১৪ টাকা হলেও আমরা এখন ৪০০ টাকা নিচ্ছি। টিকেটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়তি টাকা আদায় করার বিষয়ে কথা বললে স্টার লাইন বাসের ওই কর্মকর্তা ঊষ্মা প্রকাশ করে বলেন, প্রমাণ দেখান আপনি। এ রকম কিছু ঘটে থাকলে কাগজে প্রমাণ দেখান।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, শ্যামলীতে ঢাকা-চট্রগ্রাম বা ঢাকা-সিলেট রুটে ভাড়া বাড়েনি। ঢাকা-বরিশাল রুটে বেড়েছে। এটা করার কারণ হলো ঈদের সময় গাড়ি যখন যায় তখন অনেক যাত্রী থাকলেও আসার সময় যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই কোম্পানি লোকেশানে পড়ে। ঢাকা-সিলেট  বা ঢাকা-চট্রগ্রাম রুটে এরকম খুব কম হয়।কিছু যাত্রী পাওয়া যায় সেসব রুটে।  তাই এসব ভাড়া বাড়ে না। আবার কিছু কিছু কাউন্টারে ২০-৫০ টাকা হয়তো বেশি নেয়। এ ২০-৫০ টাকা বেশী নেয় যাত্রীদের থেকে বলে-কয়ে। কোনো যাত্রী টিকেট পাচ্ছে না। এ অবস্থায় তো তাকে যেভাবে হোক টিকেটর ব্যবস্থা করতে হয়।

এদিকে বুধবার সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিয়ারটিএ। বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে কিনা সে বিষয়ে মনিটরিং করেন বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুজ্জামান। এ সময় তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমরা কাউন্টারকগুলো মনিটরিং করছি। কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে এমন প্রমাণ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা ঘুরে দেখলাম, কোথাও সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছে, কোথাও বেশি নিচ্ছে। একটু আগেও হিমাচল পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পেয়েছি, তাই সড়ক পরিবহন আইনের ৮০ ধারায় আমরা জরিমানা করছি।

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার থেকে আমরা এ কার্যক্রম করে আসছি। ঈদ যাত্রার শেষদিন পর্যন্ত আমরা এ কার্যক্রম পরিচালনা করবো, যাতে যাত্রীরা হয়রানির শিকার না হয়। তাছাড়া যাত্রীদের বলবো, যাত্রীরা যেন ২০২৪ সালে সরকার নির্ধারিত যে ভাড়ার চার্ট রয়েছে তা মেনে ভাড়া দেয়। যাত্রীদের কাছে ভাড়া বেশি চাইলে তারা যেন এখানকার পুলিশের বুথে অভিযোগ করে।

ঈদ যাত্রায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, গণপরিবহনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এবারের ঈদযাত্রায় বকশিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাড়তি ভাড়ায় আদায় করছে। শুধু রাজধানী ঢাকা ছাড়তেই দেড় কোটি যাত্রীকে বিশাল অঙ্কের এ টাকা গুনতে হবে।