Image description

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন শনিবার (২২ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) অসাংবাদিক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাসসের সেবাগ্রহীতার সংখ্যা আশানুরূপ বৃদ্ধি না পেলেও অনুমোদিত জনবল বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাত দিয়ে বলা হয়, অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ১৪৫ জন হলেও বর্তমানে সেখানে কর্মরত আছেন দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, অনুমোদিত জনবল ১৯৯ জন। যার মধ্যে ৯৯ জন সাংবাদিক এবং ১০০ জন অসাংবাদিক।

তার মতে, প্রতিষ্ঠানটিতে রিপোর্টার ও সাব-এডিটর খুঁজে পাওয়া যায় না কেননা অধিকাংশ বিশেষ সংবাদদাতা বা বিশেষ গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্ত। একে উল্টা পিরামিডের মতো প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনি অবহিত করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকাংশ তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন। পরিচালনা বোর্ডের হাতে নিয়োগবিধি ও প্রক্রিয়া নির্ধারণের কথা বলা হলেও তা মূলত মন্ত্রণালয়ের কথা মতো এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একক কর্তৃত্বে হয়ে থাকে।

একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মতে, সরকারের পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো বাসসকে তাদের মতাদর্শের সাংবাদিকদের পুনর্বাসন কেন্দ্র বলে মনে করে। নেতাদের আত্মীয়-স্বজনের কর্মসংস্থানেরও একটি উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে এটি গণ্য হয়ে থাকে।

সাবেক দুজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমিশনকে জানান, মন্ত্রী-এমপিদের চাপে লোক নিয়োগ দিতে হয়। তাদের একজন জানিয়েছেন সাবেক এক তথ্যমন্ত্রী ১৩ জনের নিয়োগের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

 

গণমাধ্যমে সংবাদকর্মীদের বহুল প্রচলিত একটি ধারণা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বাসসে সরকারঘোষিত ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা শতভাগ। ফলে অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বাসসে চাকরির জন্য ইউনিয়নের ভেতরে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়।

প্রধান সম্পাদক বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগের ক্ষেত্রেও কোনো যোগ্যতার মাপকাঠি অনুসরণ হয় না-এমন মতামত কর্মরত সাংবাদিক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কথায়ও উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয় নেতৃত্ব এবং ব্যবস্থাপনার দায়-এ দুইয়ের মিশ্রণ সম্পাদকীয় নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বলেও ধারণা পাওয়া যায়।

একজন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভাষায়, গণতন্ত্রের সময়ও বিরোধীদলের বক্তব্য সরকার যতটুকু সহ্য করবে বাসস ঠিক ততটুকুই প্রচার করতে পেরেছে। তবে গণতন্ত্রহীনতায় সামগ্রিকভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা বড় বাধা তৈরি করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকারের কার্যক্রমের খবর বাইরে বাসসের সাংবাদিকতায় ব্যতিক্রম বা সৃজনশীলতার তেমন একটা প্রতিফলন দেখা যায় না। কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে থেকেই কমিশনকে বলা হয়েছে, জনদুর্ভোগ বা কোনো সেবা সংস্থা বা সরকারি দপ্তরের প্রশাসনিক ব্যর্থতা বা দুর্বলতার বিষয়ে রিপোর্ট করলে সরকার বিব্রত হবে এমন ধারণার কারণে এক ধরনের সেলফ সেন্সরশিপ কাজ করে।

জনদুর্ভোগ, দুর্নীতি, রাষ্ট্র ও সমাজজীবনের নানান অসংগতির বিষয় নিয়ে কোনো গভীর অনুসন্ধান অথবা শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি কিংবা খেলাধুলার বিষয়ে সংবাদ ও বিশ্লেষণের বিশেষত্ব অর্জনে প্রতিষ্ঠানটি পিছিয়ে আছে।

সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট বা পিআইডির বিজ্ঞপ্তি পুনর্লিখন করে প্রচার করাই যেন বাসসের মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত সাংবাদিক এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে পর্যবেক্ষণ এসেছে।

ভিন্নমতকে স্থান দেওয়ার চেয়ে এড়িয়ে যাওয়াই প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদকীয় রীতিতে পরিণত হয়েছে। সাবেক একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভাষায়, প্রতিষ্ঠানটির সবার ধারণা- সরকার ইচ্ছার বাইরে যাওয়া যাবে না।

প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করা হয়।