Image description

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্রীষ্মের কারণে একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানি। দুই-য়ে মিলে ভয়াবহ অবস্থা। পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) রাজশাহী কার্যালয় বলছে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ৮৬ উপজেলায় পানির স্তর ভয়াবহভাবে নিচে নেমে গেছে। তাদের করা গবেষণার তথ্য মতে, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ৭১ শতাংশ এলাকা মাঝারি, উচ্চ ও অতিউচ্চ পর্যায়ের পানি সংকটাপন্ন।

গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, সাম্প্রতিক সময়ে কম বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি গত বছর বরেন্দ্র এলাকায় তিনটি কৃষি মৌসুমের পুরো চাষাবাদ হয়েছে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নামার পাশাপাশি নির্বিচারে পানি তোলায় এ অঞ্চলে তাপপ্রবাহের সময়সীমা যেমন বেড়েছে, তেমনি কৃষি কাজে ব্যবহার ও খাওয়ার পানির সংকট তৈরি হয়েছে। ওয়ারপোর গবেষণায় বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কম বৃষ্টিপাত, দীর্ঘস্থায়ী খরা ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামছেই। গত গ্রীষ্মে রাজশাহীর তানোর এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমেছে ১১৩ ফুট পর্যন্ত। এর পুনর্ভরণ না হওয়ায় গড়ে এ অঞ্চলে ৪ ফুট করে নেমেছে পানির স্তর। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তাপমাত্রা।  ওয়ারপোর নির্বাহী প্রকৌশলী নিলয় কুমার দাস জানান, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় চার বছর তারা ৫০টি মেশিন স্থাপন করে পানির স্তর নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাতে ৮৬ উপজেলার হাল খুবই নাজুক। মোট এলাকার ৭১ ভাগ পানির সংকটে আছে।

জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নে পানি সংকট সবচেয়ে বেশি। এখানকার বাসিন্দারা প্রায় ১ কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করছেন তাদের গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার ও খাওয়ার জন্য। একই চিত্র বাঘা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে। টিউবওয়েল ও ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে উঠছে না পানি।

এদিকে, পানির অভাবে ও চৈত্রের খরতাপে কৃষি জমি ফেটে চৌচির। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মিলছে না সেচও। এলাকাবাসী জানায়, খাবার পানি ও ঘর গৃহস্থালির কাজের জন্য পানির সংকট চরমে। ফসলের ফলন নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই তাদের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘অনাবৃষ্টি, তীব্র তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড খরায় রাজশাহী অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে জ্যামিতিক হারে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২৫-৪০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে মাটির নিচে পানি পাওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানো, পানি কম লাগে এমন ফসল চাষ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, বৃষ্টির পানির মাধ্যমে মাটির তলদেশ রিচার্জ করা গেলে এ সংকট মোকাবিলা করা যাবে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে তারা কৃষকদের উদ্বুব্ধ করছেন কম পানি ব্যবহার হয়, এমন ফসল চাষে। গবেষণার তথ্যে বলা হয়, ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির গড় স্তর ছিল ১২৬ ফুট নিচে। খাওয়ার পানি ছাড়াও কৃষিজমিতে সেচ এবং মাছ চাষে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় ২০১০ সালে পানির গড় নিম্নস্তর ছিল ১৫০ ফুট। ২০২১ সালে এ স্তর আরও নিচে নেমে দাঁড়ায় ১৬০ ফুটে। ২০২৪ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৬৫ ফুটে গিয়েও পানির দেখা মিলছে না।