Image description

সারা দেশের মতো হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায়ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে জুলাইয়ে তীব্র আন্দোলন হয়। এই আন্দোলনের একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন আকিনুর মিয়া।

কেবল নিজেই আন্দোলনে অংশ নেননি, অন্যদেরও সংগঠিত করে আন্দোলনে নিয়ে যেতেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে বানিয়াচং থানার সামনে পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডারদের গুলিতে শহীদ হন তিনি।

শহীদ আকিনুরের বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। তার বাড়ি বানিয়াচং উপজেলার কামালখানি গ্রামের বন্দেরবাড়ি। তার স্ত্রী রাকিয়া আক্তার। আকিনুর-রাকিয়া দম্পতির দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে রাবিয়ার বয়স ৯ আর ছোট মেয়ে সামিহার বয়স ৫ বছর। ছেলের আব্দুল্লাহর বয়স ২ বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আকিনুর। তাকে হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাকিয়া।

মাদরাসায় পড়াশোনা করা আকিনুর ছেলেমেয়েদেরও মাদরাসায় দিয়েছেন। তাদের দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করার ইচ্ছা ছিল তার। সেজন্যই শহীদ হওয়ার দিন সকালেও তিনি স্ত্রীকে বলে যান, আমি না ফিরলেও আমার সন্তানদের তুমি দ্বীনি শিক্ষা দিও।

জুলাইয়ের শুরু থেকেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন আকিনুর। তার স্ত্রীর ভাষ্যমতে, আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন এতে অংশগ্রহণ করতেন তিনি। এমন কোনো দিন নেই যেদিন তিনি আন্দোলনের জন্য ঘর থেকে বের হননি। তিনি সব সময়ই বলতেন, ‘এইবার কিছু একটা হবেই। এইবার কিছু একটা করতেই হবে। না হয় দেশটার আর রক্ষা নাই। তোমরা (বউ বাচ্চা) ঘরে বসে বসে দোয়া করতে থাক। এইবার দেশ স্বাধীন হবে।’

‘স্থানীয় লোকজনের মতে, আকিনুর মিয়া ছিলেন বানিয়াচংয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক।

৫ আগস্ট সকালে এক দফার আন্দোলনে অংশ নিতে ঘর থেকে বের হন তিনি। যাওয়ার আগে স্ত্রী রাকিয়ার কাছে বলেন, ছেলেমেয়েদের দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করার কথা। দোয়া চান দেশের জন্য, ফ্যাসিবাদের কবল থেকে দেশের মুক্তির জন্য, বিজয়ের জন্য। সেদিন তিনি বলেন, ‘দেইখো, আজ একটা ফয়সালা হবে ইনশাআল্লাহ।’ সেদিন ফয়সালা হয়েছিল, বিজয়ও ঠিকই এসেছিল, ফিরেছিল হারানো স্বাধীনতা। কিন্তু সেদিন লাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছিল বিজয়ের পেছনে থাকা সাহসী যোদ্ধা আকিনুরকে।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আকিনুর। স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্ত্রী রাকিয়া। স্বামীর করা অছিয়ত পূরণ করার চেষ্টা করছেন অক্ষরে অক্ষরে। কিন্তু স্বামীর অছিয়ত পূরণ আর বেঁচে থাকার জন্য যে অর্থ দরকার তা নেই রাকিয়ার।

স্থানীয়রা জানান, আকিনুরের স্ত্রী ওর সন্তানদের নিয়ে বিপদে আছে। যে দায়িত্ব তার উপর পড়েছে তা একা সামলানো তার পক্ষে কঠিন। সরকার ও সমাজের সবার সহযোগিতা ছাড়া এই পরিবার চলতে পারবে না।