Image description

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মির্জা আল শাহরিয়ার। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া মির্জা বাবা-মায়ের নিজের স্বপ্ন পূরণে সোহরাওয়ার্দী স্মরণী বিদ্যাপীঠ থেকে স্কুল এবং চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ছেড়ে ভর্তি হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় আন্দোলনকারী হিসেবে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হয়ে জেলে যেতে হয় তাকে। তিনিই একমাত্র ইবিয়ান যিনি জুলাই অভ্যুত্থানে মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন। মির্জার গ্রেপ্তার হওয়া, কারাগারে যাওয়া এবং কারান্তরীন থাকার সে দিনগুলোর গল্প শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরার

২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনের পর বাতিল হওয়া কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পরেই ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। আন্দোলনে পিছিয়ে থাকেনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। আন্দোলন তীব্রতর হয় রংপুরে আবু সাইদের মৃত্যুর পরে। মির্জার ভাষায় - ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই ক্যাম্পাসে সক্রিয় থেকে প্রতিদিন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি।

‘১৬ জুলাই বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় মা নিষেধ করে বলেছিলো আন্দোলনে যাস না, দেশের অবস্থা ভালো না। আমি বলেছিলাম মা আজকে আমাকে যেতে না দিলে তুমি কাপুরুষের মা হবে আর আমি গেলে তুমি সারাজীবন গর্ব করে বলতে পারবা তুমি কাপুরুষ জন্ম দাওনি। পরবর্তীতে আরো ২ কোর্ট হাজিরা দেওয়ার পর আমি মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাই।’

আবু সাইদ ভাই শহিদ হওয়ার পর আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে যায়। ক্যাম্পাসে আমার সর্বশেষ আন্দোলন ছিল ১৮ জুলাই যেদিন আমার ১০২ ডিগ্রি জ্বর ছিল। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলে বাসায় এসে নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গাতেও আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সমন্বয়কদের সমন্বয়হীনতা ও ভীতু মনোভাবের কারণে কর্মসূচি তেমন সফল হয়নি। উপরন্তু আমার ছোট বড় ভাই বোন সহপাঠীরা আহত ও রক্তাক্ত হয়। এমনি ভাবেই দিন যাচ্ছিলো।’

পুলিশের হাতে আটক হওয়ার বর্ণনা দিয়ে মির্জা বলেন, ‘২৫ জুলাই বিকালে আমরা ৪ বন্ধু একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই সরোজগঞ্জ ফাড়ির কয়েকজন পুলিশ পেছন থেকে এসে আমাদের ঘিরে ফেলে এবং আমাদের ফোন ছিনিয়ে নেয়। আমরা জিজ্ঞেস করলে তারা পুলিশ বলে জানায় এবং বলে যে ওপরের নির্দেশে আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের পরিবারকেও জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি তখনও। পরবর্তীতে আমাদের চুয়াডাঙ্গা ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে ২-৩ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার পর আমাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়।

আমার বন্ধুদের ফোন চেক করে তেমন কিছু না পেলেও আমার ফোনে আন্দোলনের সমস্ত ভিডিও, ছবি এবং চুয়াডাঙ্গায় আন্দোলনকারীদের জন্য নাস্তা-পানি এবং যাতায়াতের জন্য আর্থিক সাহায্যের মেসেজ দেখতে পায়। পরবর্তীতে রাত ৯ টার দিকে আমাদের ৪ জনকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সে রাতে থানা জেলেই রাখা হয়। পরের দিন শুক্রবার সকালের দিকে সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এসে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার অফিসে নিয়ে যায়।’

জিজ্ঞাসাবাদে সে এটা যে সরকার বিরোধী আন্দোলন সেটা জানে কিনা এমন প্রশ্ন ছিল উল্লেখ করে মির্জা বলেন, ‘আমি জবাবে বললাম আমি দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছি এবং এটা আমার অধিকার আদায়ের আন্দোলন বলেই জানি। তখন আমি শিবির করি কিনা এবং আন্দোলনকারীদের যাতায়াত খরচ ও নাস্তা পানির টাকার উৎস জানতে চায়। আমি বলি যে আমি কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত নেই এবং আমি টিউশন করাই, আমার নিজস্ব কোচিং আছে এবং সেখান থেকে আমি ভালো পরিমাণ ইনকাম করি।

‘আমি চাই এই নতুন বাংলাদেশে আর কাউকে যেন এভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো না হয়, কোনো পরিবারকে যেন আর এমন দুর্ভোগ না পোহাতে না হয়। একটা পরিবারই জানে একজন জেলে গেলে সামাজিক ভাবে তাদের কতটা হেনস্তার স্বীকার হতে হয়, সে যে কারণেই জেলে যাক না কেন।’

শুরুতে তুমি বলে সম্বোধন করলেও আমার এমন স্পষ্ট উত্তরে তিনি বিরক্ত হন এবং পরবর্তীতে বলেন তুই সরকার বিরোধী কাজ করেছিস এমন কেস দেব তোকে কোনোদিন সরকারি চাকরি করতে পারবি না। প্রতিউত্তরে আমি বলি আমার ক্যারিয়ার আমার জীবনের বিনিময়ে আমার বড়ভাই ছোটভাইরা যদি কোটার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয় তাহলে আমি আমার ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করতে রাজি আছি। এই উত্তরে ওই অফিসার প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ওনার ডেক্সের ওপর জোরে আঘাত করে বলেন তুই বেয়াদব তোকে কে ছাড়ায় আমিও দেখব।’

তাকে পরিবারের সাথে দেখা করার সুযোগ দেওয়া দেয়নি জানিয়ে মির্জা বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরের দিকে আমার বাকি ৩ বন্ধুকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় আর আমাকে ওইদিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কোর্ট জেলে এবং পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে নিয়ে যায়। প্রথম দিকে অনেক ভয় পেলেও পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নিই। জেলে ঢোকার সময়ে ৩ জায়গায় আমাদের তল্লাশি করা হয়। বেল্ট, হাতঘড়ি এসব সব খুলে রাখা হয়।

শুধু প্যান্ট শার্ট রাখার বিধান আছে নাকি। প্রথম দিনের বিকাল এভাবেই পার হয়ে যায়। জেলে ঢুকিয়েই এলোমেলোভাবে চুল কেটে দেওয়া হয়, বুকের ওপর স্লেট দিয়ে সেখানে কয়েদি নাম্বার লিখে ছবি তোলা হয় এবং সেই রাতে জেলের গণরুমে রাখা হয়। সেখানে রাতে বিভিন্ন নিয়ম কানুন শেখানো হয় কীভাবে জেলারকে সালাম দিতে হবে, কীভাবে কেস ফাইল (হাজিরা) দেওয়ার সময় বসতে হবে কখন কি করতে হবে এইসব।’

জেলের খাবারের ব্যাপারে জানতে চাইলে মির্জা বলেন, ‘প্রথম দিন রাতে ভাত সবজি আর ডাল দেয় ওরা। সবজিটা এত জঘন্য যে সেটা খেয়ে বমি হয়ে যায় আমার। কিন্তু জেলের নিয়ম ওখানে নিয়মিত খেতেই হবে না হলে জেলের মেডিকেলে ভর্তি করায় দেবে। তবে ধীরে ধীরে বাধ্য হয়ে বেঁচে থাকার জন্য খাবার গিলতে শুরু করি।’

জেলের প্রথম দিনের বর্ণনায় মির্জা বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৪ টায় ঘুম থেকে ডেকে তোলা হয়। এরপর জেলারের কাছে হাজিরা দিতে হয়, পরবর্তীতে জেলের বাগান পরিষ্কার করতে হয়। এভাবেই সকাল কেটে যায়। এসময় আমার নতুন ঠিকানা হয় জেলের পদ্মা-১ রুম। সেখানে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের মেহেদী ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। ভাই আমাকে জেলের দিনগুলোতে যতটা সাহায্য সহযোগিতা করেছে তা আমি আজীবন মনে রাখাব।

এরপরে পরিচয় হয় দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের পলাশ ভাই, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সিরাজুল ইসলাম মনি চাচা, ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সমিন ভাই, বাবু ভাই ও জীবননগরের সাবেক মেয়রের ছেলে তুহিন ভাইয়ের সাথে। মূলত তারাই আমাকে জেলের দিনগুলোতে সাহস যুগিয়েছে আমাকে সাপোর্ট করেছে। খাওয়া দাওয়ার খোঁজ খবর নেওয়া থেকে ওষুধ পত্র সবকিছুরই খোঁজ খবর তারা রাখত।’

মির্জা বলেন, ‘প্রতিদিন ভোর ৫টা, বেলা ১২টা ও সন্ধ্যা ৬টায় হাজিরা দিতে হতো। সন্ধ্যা ৬টার হাজিরা নিয়ে জেলের দরজা বন্ধ করে দিতো। তখন জেলের কয়েদিদের সাথেই নানারকম গল্প করতাম। সেটাও এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। সত্য মিথ্যা নানা মামলার সাজা ভোগ করছে তারা; কেউ কয়েকদিন আবার কেউ কয়েক বছর। এভাবেই সকাল যায় সন্ধ্যা আসে, কিন্তু আমার মুক্তি আর মেলে না।

আগে বাড়িতে সপ্তাহে এক দিন কথা বলার সুযোগ ছিল। কিন্তু আমি যাওয়ার কিছুদিন আগে নাকি সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে। মায়ের সাথে দিনে ২-৩ বার কথা হতো ক্যাম্পাসে থাকাকালীন কিন্তু ২৫ তারিখের পর আর কথা বলার সুযোগ হয়নি। জেলে থাকার সময় ২দিন ঝুম বৃষ্টি হয়। বাড়িতে/ক্যাম্পাসে থাকলে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম বৃষ্টিতে ভিজতে, না হয় ফুটবল খেলতাম। জেলের মধ্যে থেকে তখন ওসব দিনের কথা মনে হতো।’

রিমান্ড শুনানির দিনের বর্ণনা দিয়ে মির্জা বলেন, ‘কোর্টে যাওয়া লাগবে জন্য ভোরবেলা গোসল করে নাস্তা করে রেডি হয়ে নেই।এরপরে কোর্ট গারদে এনে রাখা হয়। সেদিন আব্বু, সেজো খালু আর ছোট খালু এসেছিল আমাকে দেখতে। মা এসব সহ্য করতে পারবে না বলে মাকে নিয়ে আসেনি। কাঠগড়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বেলা সাড়ে ১২টা-১টার দিকে। সেদিনই জানতে পারি আমার নামে কী কী মামলা হয়েছে। একটা ছিল নাশকতা মামলা (আমার এক হাতে দেশীয় অস্ত্র আরেক হাতে ককটেল ছিল ১৮ জুলাই কাঠপট্টির মধ্যে), আরেকটা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা।

সেদিন অবাক হয়ে ভাবলাম আমি ১৮ তারিখ ক্যাম্পাসে ছিলাম সেখানে আমার ছবি আছে এমনকি ফেসবুকে পোস্টও আছে আর ১৮ তারিখের মামলা দিল আমাকে! পুলিশ আমার ৩ দিনের রিমান্ড চায়। কিন্তু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ডকুমেন্টস দেখানোর পরে জজ সেটা নামঞ্জুর করে দেয়। সবচেয়ে কষ্ট লাগছিল এটা ভেবে যেই স্বপ্ন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা ছেড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ভর্তি হলাম সেই আমি ই আজ আসামির কাঠগড়ায়।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মির্জা বলেন, ‘কোর্ট গারদ থেকে জেলে আসার পর মনের মধ্যে খুব খারাপ লাগছিল মায়ের জন্য যে কতদিন মাকে দেখিনি, কথাও বলিনি। এই চাপা কষ্টটা খুব বেশি মন খারাপ করে দিচ্ছিল আমাকে। প্রতিদিনই কারো না কারোর জামিনের খবর জেলের মাইকে বলত তারা জামা কাপড় গুছিয়ে হাসি মুখ নিয়ে বাড়ি চলে যেত।

শুরুর দিকে মাইকের ঘোষণা মন দিয়ে শুনতাম আমার কথা বলছে কি না... কিন্তু কয়েকদিন পর সেটাও শুনতাম না। সাথে যারা ছিল তারা বলছিল কমপক্ষে ৪৫-৫৭ দিন থাকা লাগবে আমার কারণ এই মামলায় নাকি হাইকোর্ট ছাড়া জামিন হবে না। নেক্সট ৫৭ দিন জেলেই থাকতে হবে, সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। জেলের বাইরে দেশে কী হচ্ছে তা কিছুই জানতাম না।’

৪ আগস্ট জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন মির্জা। সেদিনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দিনটা ছিল অন্যান্য দিনের মতোই। সকালে ক্যান্টিন থেকে নাস্তা কিনে এনেছিলাম দুপুর আর রাতের খাবার। কারণ বেলা ১২টার পর আর রাতের খাবার দেয় না। দুপুরের খাবার খেয়ে তিনটা-সাড়ে তিনটার দিকে সবাই আড্ডা দিচ্ছি বাইরে দাঁড়িয়ে হঠাৎ করে মাইকে জামিনের তালিকায় আমার নাম শুনলাম। শুরুতে গুরুত্ব দিইনি যে অন্যজন হবে হয়ত কিন্তু পুনরায় মির্জা আল শাহরিয়ার শুনে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

এতটা খুশি যে অবশেষে মুক্ত হবো আমার মায়ের সাথে দেখা করব। মেহেদী ভাই, সমিন ভাই, মনি চাচা এনারা আমার থেকেও বেশি খুশি ছিল। উনারাই আমার সব জামা কাপড় গুছিয়ে ঠিক করে সবাই আমাকে বিদায় জানালো। পুনরায় ৩ জায়গায় চেকিং শেষে বেলা সাড়ে ৫ টার দিকে আমি জেল থেকে মুক্ত হই।’

‘২৫ জুলাই থেকে ৪আগস্ট; মা বাবা,আত্মীয় স্বজন, বন্ধু -বান্ধব সবাইকে ছাড়া। বাড়ি আসার পরও মন থেকে ভয় যায়নি। কারণ তখনও দেশের কি পরিস্থিতি কিছুই জানি না। আমার ফোন তখনও পুলিশ হেফাজতে। বাড়ির সামনে ডিএসবি পুলিশ মাঝে মধ্যেই ঘোরাঘুরি করছিল। ভিতরে সেই ভয় তখনো কাটেনি। পরবর্তীতে ৫ আগস্ট সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত আসে। স্বৈরাচারের পতন নিজ চোখে দেখতে পাই।

মহান আল্লাহ হয়ত আামকে দেখাতে চেয়েছিলেন সেজন্যই ৪ তারিখে মুক্ত করেন আমাকে। মনের সকল ভয়, দুশ্চিন্তা দূর হয়। সবাই একটা নতুন স্বাধীনতা পাই আমরা।যেখানে আর কাউকে এভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হবে না, জোরপূর্বক জেলে পাঠাবে না’ বলেন মির্জা।

পরিবারের ব্যাপারে মির্জা বলেন, ‘মা বাবার একমাত্র সন্তান হিসেবে সবসময়ই আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকত আমার যেন কিছু না হয়। ১৬ জুলাই বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় মা নিষেধ করে বলেছিলো আন্দোলনে যাস না, দেশের অবস্থা ভালো না। আমি বলেছিলাম মা আজকে আমাকে যেতে না দিলে তুমি কাপুরুষের মা হবে আর আমি গেলে তুমি সারাজীবন গর্ব করে বলতে পারবা তুমি কাপুরুষ জন্ম দাওনি। পরবর্তীতে আরো ২ কোর্ট হাজিরা দেওয়ার পর আমি মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাই।’

নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে মির্জা বলেন, ‘আমি চাই এই নতুন বাংলাদেশে আর কাউকে যেন এভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো না হয়, কোনো পরিবারকে যেন আর এমন দুর্ভোগ না পোহাতে না হয়। একটা পরিবারই জানে একজন জেলে গেলে সামাজিক ভাবে তাদের কতটা হেনস্তার স্বীকার হতে হয়, সে যে কারণেই জেলে যাক না কেন।’

তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার পতন না হলে আমার ও আমার পরিবারের স্বপ্ন ২৫ তারিখেই শেষ হয়ে যেত। দেশদ্রোহী মামলায় কারণে অকারণে জেলে যাওয়া লাগত। নতুন বাংলাদেশে অন্যায় অবিচার দূর হোক, জুলাইকে কেন্দ্র করে যেন মুক্তিযুদ্ধের মতো চেতনার রাজনীতি শুরু না হয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন নির্ভয়ে চলাচল করতে পারে, স্বাধীনতার আসল স্বাদ যেন পেতে পারে।’