
"রাগ হচ্ছিল…ভীষণ রাগ। ভেবেই পাচ্ছিলাম না কেন! কেন এমনটা হলো। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, কীভাবে আমার স্তন ক্যান্সার হতে পারে? সবে তিরিশে পা দিয়েছি," বলছিলেন নীদা সরফরাজ। দিল্লির বাসিন্দা তিনি। প্রায় দশ বছর আগে তার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন,"২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের ঘটনা। আমার স্তনে ছোট বলের মতো কিছু একটা অনুভব করি। তখনও বুঝিনি বিষয়টা এত গুরুতর। মাকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি কয়েকটা টেস্ট করাতে বলেছিলেন আমাকে।"
"পরে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক যখন জানালেন, আমি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত তখন ভীষণ শকড ছিলাম। তবে শকের চেয়েও বেশি রাগ হচ্ছিল। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কেন?" থেমে থেমে কথাগুলো বলছিলেন তিনি। তারপর যোগ করেন, "চিকিৎসক মাকে জানান, সময় নষ্ট করার মানে হয় না। দ্রুত সার্জারি করা দরকার।"
ততদিনে সংক্রমণ অনেকটাই ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, "আমি ভেবেছিলাম ছোট সার্জারি। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমার স্তনের একটা বড় অংশ বাদ দিতে হয়।"
মিজ সরফরাজ একা নন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আরও এক নারী। যে স্টেজে তার স্তন ক্যান্সার ধরা পরেছিল, সেই সময় সার্জারির মাধ্যমে স্তন অপসারণ করা ছাড়া উপায় ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা ওই ক্যান্সার সারভাইভার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে অল্পবয়সীদের স্তন ক্যান্সার হয় না। পুরো ব্যাপারটাই এতটা কষ্টদায়ক যে সেই সমস্ত মুহূর্তের কথা ভাবলে এখনও শিউড়ে উঠি।"
ভারতীয় অভিনেত্রী হিনা খান স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন গত বছর। হিন্দি টেলিভিশনের পরিচিত মুখ তিনি, বয়স ৩৬।
ভারতে এমন বহু ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের বয়স ৪০-এর নিচে বা তার চেয়েও অনেকটা কম। এই কম বয়সীদের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মুম্বাইয়ের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সুমিত শাহ বলেছেন, "আগে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিভাগই পঞ্চাশ বা ষাঠোর্দ্ধ নারীদের দেখা যেত। কিন্তু এখন সেই বয়সসীমা অনেকটাই কমে এসেছে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে অনেকেই ৪০ বছরের নীচে। আবার তার চাইতে কম বয়সের অনেক নারীও এতে আক্রান্ত।"
একই মত প্রকাশ করেছেন, কলকাতার চিকিৎসক ডা. ঋতুপর্ণা চতুর্বেদী। তিনি জেনারেল ল্যাপারোস্কোপিক এবং ব্রেস্ট সার্জন। বিবিসি বাংলাকে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, "অল্পবয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার বৃদ্ধি পাওয়া একটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে তিরিশের ঘরে থাকা নারী দেখেছি, আবার তার চাইতে অনেকটা কম বয়সী রোগীও পেয়েছি। আমার অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে কম বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর বয়স ছিল ১৭ বছর।"

ছবির উৎস,Getty Images
সমীক্ষা কী বলছে
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি ২০ জন নারীর মধ্যে অন্তত একজন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। এই হার অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে নতুন স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছরের হিসেবে ৩২ লাখেরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) বলছে, ভারতীয় নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার সবচাইতে বেশি দেখা যায়। ভারতের জাতীয় ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রামের (এনসিআরপি) তথ্য উদ্ধৃত করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংসদে গত বছর জানিয়েছিল, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের মোট সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে ভারতে স্তন ক্যান্সারের দুই লাখেরও বেশি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। ২০২৩ সালে ওই পরিসংখ্যান প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে ২.২ লাখে দাঁড়িয়েছে।
চলতি বছরে 'নেচার' জার্নালে প্রকাশিত 'ইকনমিক বার্ডেন অফ ব্রেস্ট ক্যান্সার ইন ইন্ডিয়া-২০২০-২০২১ অ্যান্ড ফোরকাস্ট টু ২০৩০' প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে ২০২১ থেকে ২০৩০ এর মধ্যে প্রতিবছর স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন নারীদের সংখ্যা ০.৫ মিলিয়ন (৫০ হাজার) করে বাড়বে এবং এর ফলে চিকিৎসাজনিত খরচ ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের কারণে বার্ষিক আর্থিক বোঝাও পাল্লা দিয়ে বাড়বে।
ভারতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের বয়সসীমার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন দেখা গিয়েছে।
আগে ভারতে ৪০-৫০ বা তার বেশি বয়সের নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঘটনা রিপোর্ট করা হলেও, ৪০-এর কম বয়সের নারীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অ্যাপোলো রিসার্চ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেড়লাখ ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখেছে, কমবয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে । অ্যাপোলোর স্ক্রিনিং থেকে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ২৫ শতাংশের বয়স ৩৯ বছর বা তারও কম।
দিল্লির অ্যাপেলো হসপিটালের সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট রুকেয়া আহমেদ মীর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "ভারতে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার গত পাঁচ বছরে বেশ বেড়েছে এবং এটা উদ্বেগজনক বিষয়।"
"আমার অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে কম বয়সী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর বয়স ছিল ২৪।"
কলকাতা-ভিত্তিক সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট গৌতম মুখার্জীও তার অভিজ্ঞতায় স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী বেশি দেখছেন। তিনি বলেন, "ভারতে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও আগে জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল।"

ছবির উৎস,canprotectfoundation.com
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
কলকাতার ডিসান হসপিটালের মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট শ্রেয়া মল্লিক জানিয়েছেন, তার দেখা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর বয়স ২৩ বছর। তিনি বলেছেন, "আমার অভিজ্ঞতায়, ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার অনেকটাই বেড়েছে। কমবয়সীদের মধ্যে ক্যান্সার কিন্তু খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।"
এক্ষেত্রে দ্রুত শনাক্ত করা দরকার বলে জানিয়েছেন তিনি। তার কথায়, "ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মাল্টিপল ফ্যাক্টর কাজ করে। আর্লি ডায়াগনোসিস হওয়াটা প্রয়োজন।"
উত্তরাখণ্ডের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুমিতা প্রভাকর দীর্ঘদিন ধরে নারীস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন। উত্তর ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে 'ক্যান প্রোটেক্ট ফাউন্ডেশন' নামে একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও গঠন করেছেন।
তিনি বলেছেন, "গত কয়েক বছরে অল্প বয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ছে। এটা শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে নয় গ্রামেও হচ্ছে। বিনামূল্যে স্তন ক্যান্সারের স্ক্রিনিং করতে গিয়ে এমন অনেক ঘটনা লক্ষ্য করেছি উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায়।"
"দেহরাদুনের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত এক কিশোরীকে পেয়েছিলাম যার বয়স ১৫। সেই সময় আমরা ঠিক করি ওই গ্রামের স্কুলের মেয়েদের স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, তাই স্থানীয় স্কুলে ক্যাম্প করেছিলাম।"

ছবির উৎস,Getty Images
কারণ কী?
কম বয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে একাধিক কারণ থাকতে পারে।
ক্যান্সার গবেষক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'অনকোলিঙ্ক ইন্ডিয়া'র প্রতিষ্ঠাতা ড. অমিত কান্তি সরকার বলেন, "খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে ওবেসিটি, ধূমপান, পরিবেশ দূষণের মতো একাধিক ফ্যাক্টর এই প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি জেনেটিক ফ্যাক্টর তো আছেই।"
জীবনযাত্রাকে একটা বড় ফ্যাক্টর বলে উল্লেখ করেছেন ডা. রোকেয়া আহমেদ মীর এবং ডা. সুমিতা প্রভাকর দু'জনেই।
"জাঙ্কফুড নির্ভর ডায়েট, শারীরিক কসরতের অভাব, ধূমপানের মতো ফ্যাক্টর যা ব্রেস্ট ক্যান্সারসহ অন্যান্য অনেক ধরনের রোগ এবং ক্যান্সারের প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়" বলেছেন ডা. রোকেয়া আহমেদ মীর।
অন্যদিকে, ডা. প্রভাকর বলেন, "আগে মনে করা হতো স্তন ক্যান্সারের ঘটনা শহরে বেশি দেখা যায়। কিন্তু এখন তা নয়। যেমন উত্তরাখণ্ডের গ্রামেও কমবয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার লক্ষ্য করা গিয়েছে।"

ছবির উৎস,Getty Images
মোকাবিলার উপায় কী?
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই রোগের সত্ত্বর শনাক্ত হওয়া দরকার। ডা. গৌতম মুখার্জী বলেন, "আর্লি ডিটেকশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে একাধিক ফ্যাক্টর থাকে। রোগের ধরন এবং স্টেজের উপর নির্ভর করে কী চিকিৎসা হবে, কতদিন লাগতে পারে এবং সম্ভাব্য আউটকাম কী হতে পারে, তা বলা যেতে পারে।"
কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই ব্রেস্ট ক্যান্সার যতদিনে শনাক্ত হয়, ততদিনে ক্যান্সার অ্যাডভান্স স্টেজে চলে যায়।
ডা. চতুর্বেদী বলেন, "আমরা সব সময় মেয়েদের এই বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করি যে, স্তনে কোনওরকম অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কিন্তু অনেক সময়ই মেয়েরা দেরি করে ফেলেন।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্তনের আকারের পরিবর্তন, স্তন বা বগলে ব্যথাহীন পিণ্ড, স্তনের ত্বকের পরিবর্তন, স্তনবৃন্ত থেকে নিঃসরণ ইত্যাদি ক্যান্সারের উপসর্গ হতে পারে।

ছবির উৎস,Silverline Care
'কমবয়সীদের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, সচেতনতার অভাব'
ডা. সুমিত শাহ বলেছেন, "আমাদের দেশের নারীরা নিজেদের খুব অবহেলা করেন, মায়েরা তো বটেই। খুব খারাপ লাগত। আর কমবয়সীদের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, সচেতনতার অভাব।"
"৪০ বছরের কাছাকাছি বয়স বা তার উপরের নারীদের নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের কথা বলা হয়। অল্পবয়সীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেরি করে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার কারণ ওই বয়সে নিয়মিত স্ক্রিনিং সাধারণ বিষয় নয়, তাই ধরা পড়তে দেরি হয়," বলেছেন, কলকাতার কৃষ্ণা দত্ত।
'হিতৈষিণী' নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আক্রান্তদের জন্য কাজ করেন তারা। ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি কেয়ার গিভার হিসাবে কাজ করেছেন। ৭৩ বছর বয়স্ক এই নারীর ২০২১ সালে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়েছিল।
ডা. সুমিত শাহ বলেন, "আগে সাধারণত ৪০ এর কাছাকাছি বয়স থেকে শুরু করে সমস্ত নারীদের নিয়মিত ব্যবধানে চেক আপের পরামর্শ দেওয়া হতো। কিন্তু এখন ওই বয়সসীমা অনেকটাই নেমে আসায় উদ্বেগ বেড়েছে। কম বয়সীদের ক্ষেত্রে সেল্ফ এগজামিনেশন একটা বড় উপায়। কিন্তু তা কীভাবে করতে হবে তা জানতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় হাসপাতাল, চিকিৎসক বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্য করতে পারে।"
"ভয়, সচেতনতার অভাবও বড় সমস্যা। স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও এগুলো সমস্যা বাড়ায়। এছাড়া ডিনায়াল আছে। আমার কিছু হয়নি বা এটা কিছু নয় ভাবাটা বিষয়টাকে আরও জটিল করে তোলে। আবার ডিটেকশন হওয়া সত্ত্বেও সঠিক চিকিৎসা শুরু না করা সমস্যা বাড়ায়। আমাদের বুঝতে হবে ইন্টারনেটে লক্ষণ সার্চ করে সমস্ত কিছু হয় না," বলেছেন ডা. চতুর্বেদী।
এক্ষেত্রে স্টিগমাও কাজ করে। ডা. প্রভাকর বলেন, "গ্রামাঞ্চলে ক্যাম্প করতে গিয়ে দেখেছি কীরকম স্টিগমা কাজ করে, কতটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। হরিয়ানার এক প্রত্যন্ত গ্রামে সেখানকার প্রধান আমাদের বলেছিলেন সেখানকার নারীদের সামনে স্তন বা জরায়ু শব্দগুলো ব্যবহার করা যাবে না। ক্যাম্পে একহাত ঘোমটার আড়ালে থাকা নারীদের ল্ফ এগজামিনেশন কথা বলায় জানা গেল, একে তারা গর্হিত কাজ বলে মনে করে। অনেক গ্রামেই গিয়ে শুনেছি, নারীদের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে স্তন বারবার পরীক্ষা করলে ক্যান্সার হয়।"
পাশাপাশি অন্য বিষয়ও রয়েছে। "ক্যান্সার রোগটা নিয়েই নানা স্টিগমা আছে, স্তন ক্যান্সার তো বটেই। স্তনকে শরীরের অংশ হিসাবে না দেখে সৌন্দর্য্য হিসাবে দেখেন যে কারণে বিষয়টা আরও জটিল হয়ে ওঠে। অনেকে এই নিয়ে কথা বলতে বা চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না," বলেছেন ড. সরকার।

ছবির উৎস,Getty Images
উপায় কী?
সচেতনতা বৃদ্ধি, সেল্ফ এগজামিনেশন, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, অবহেলা না করা মতো খুঁটিনাটি বিষয় এই রোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. ঋতুপর্ণা চতুর্বেদীর কথায়, "আগের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে সচেতনতা বেড়েছে, তাই অনেক ঘটনায় সত্ত্বর ডিটেকশন হচ্ছে বা অল্পবয়সীদের স্তন ক্যান্সারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে । কিন্তু তা সত্ত্বেও বলব আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে।"
জীবনযাত্রার পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা, সুষম আহার অনেক রোগের সম্ভাবনাই কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু একইসঙ্গে তারা জানিয়েছেন, রোগ ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই আগে চিকিৎসা শুরু হলে অ্যাডভান্স স্টেজের জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী নীদা সরফরাজ বলছিলেন, "দশ বছর স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধে বুঝছি, হেরে যাওয়াটা অপশন নয়, একমাত্র পথ হলো লড়াই। তাই মনোবল মজবুত রাখতে হবে।"