Image description
ওয়ার অন টেররের পরের দুনিয়াতে আমরা আছি। মানে, আফগানিস্তানের যুদ্ধ শেষ হওয়া এবং আফগান যোদ্ধাদের বিজয়ের পরে ওয়ার অন টেররের রাজনীতি শেষ হয়েছে বলা যায়। আমেরিকান পলিসির দিক থেকে শেষ হয়েছে বলা যায়। না হলে তারা সৈন্য ফেরত নিতো না। কিন্তু দুনিয়ার দুইটা বড় ইসলামোফোব হাব পুরো মাত্রায় একটিভ আছে । অন্যদের পজিশনে হের-ফের হয়। কিন্তু এদের পজিশন একই রকম রয়ে গেছে। এরা আবার পরস্পরে জানের দোস্ত। একটা হলো- ইসরায়েল আর একটা হলো ডারত।এর মধ্যে গাজার গণহত্যার মিশন চলছেই। এই গণহত্যা শুধু মুসলিমদের জন্য না, যে কেনা মানুষের জন্যই পানিশমেন্ট। আমরা একটা কালেকটিভ পানিশমেন্টের মধ্যে আছি। গাজার দিকে তাকালে দুনিয়াকে জাহান্নাম মনে হয়। এই দুনিয়ার, এই আধুনিকতাবাদি বিকার গ্রস্থ সভ্যতার কোন ভবিষ্যৎ যে নাই তা পরিস্কার হয়ে যায়। এটা নিয়ে বিখ্যাত চিন্তক, পঙ্কজ মিশ্র একটা বই লিখেছেন সম্প্রতি। বইটার নাম, The World After Gaza। বইটা ধরে আমি বিস্তারিত কথা বলবো। তবে এটা ঠিক গাজার এই গণহত্যার আগের দুনিয়া আর পরের দুনিয়া এক না। দুনিয়ার স্বাদ/সাধ/সাধ্য পাল্টে গেছে। সম্পর্ক-ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে মানুষের মোহ ভেঙে গেছে। শিশুদের লাশের গন্ধে পৃথিবীর বাতাস ভারী হয়ে গেছে। আমরা এখন একটা গণহত্যাময় দুনিয়ায় বেঁচে আছি।
 
যাহোক, ইসলামোফোবিয়ার হাব- আর একটা দেশ হলো এই ডারত। যা ইসলামোফোবিয়ার একটা বড় এবং খুবই একটিভ কারখানা। এই কারখানার বিরুদ্ধে সারা দুনিয়াকে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের এখানের একশ্রেণীর বুদ্ধিজিবি আধুনিকতা বলতে হিন্দুত্ববাদি আধুনিকতাকে বুঝেন। ফলে আমরা যখন পোস্ট-মর্ডান পয়েন্ট অব ভিউ থেকে ইসলাম নিয়ে কথা বলি। আধুনিকতার ক্রিটিক করি তখন আমাদের বক্তব্যকে চিন্তা দিয়ে মোকাবেলা না করে, ছোট ক্লিপ ছড়িয়ে দিয়ে বর্ণবাদি ঘৃণা ছড়ায়। নিজেদের উগ্রবাদিতাকে আধুনিকতা হিসেবে ধরে নিয়ে আমাদের প্রতীকৃয়াশীল বলে হাজির করে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভাষা ইনিস্টিটিউটের এক শিক্ষক আমার এক বক্তব্য নিয়ে এই ধরণের মূর্খতার চর্চা করেছে। আমাকে অনেকে সেই ভিডিও পাঠিয়েছেন। আমি তার নিরাপত্তার কথা ভেবে বিস্তরিত বলছি না। সে একা না। চারুকলার বিজ্ঞানময়ী হিন্দুত্ববাদি আধুনিকার হেজিমনিই এখানে মূলধারা। এরা বিজ্ঞানকে পূজা করে। বিজ্ঞানের দার্শনিক গুরুত্ব না বুঝে প্রযুক্তির আগ্রাসি বিকাশকেই প্রগতী মনে করে। আধুনিকার ক্রিটিক একটা ৫০ বছরের পুরানা ব্যাপার কিন্তু এরা এটাকেই আকড়ে ধরে আছে। এবং নিজেদের সেরা ও জ্ঞানী মনে করে। এই ধরণের মূর্খতার অহং আমাদের জাতীয় বিকাশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে।
 
কিন্তু এরাই বাংলাদেশের বুদ্ধিজিবিতার বাপ-মা সেজে বসেছিল এবং আছে। মিডিয়া তাদেরই জ্ঞানের প্রকৃত ইজারাদার হিসেবে সমাজে হাজির করেছে। এডওয়ার্ড সাঈদ পার হয়ে দুনিয়া এখন হাল্লাকের মতো চিন্তকদের নিয়ে আগ্রহী । তালাল আসাদ অল-রেডি পশ্চিমা আধুনিকতাবাদির সামনে ইসলামকে এন্টি-আধুনিক হিসেবে পদ্ধিতীগত ভাবে হাজির করেছেন। আশিস নন্দী আরও ২০ বছর আগে এন্টি সেকুলার মেনিফেস্টো লিখেছেন। আর এরা এখনও আধুনিকার ক্রিটিক নিতে পারে না। কতো বড় কুশিক্ষিত হলে সমাজে আবার মুখ দেখায়, বুদ্ধিজিবিতা করে বেড়ায়। কতো বড় বেহায়া এগুলা?
কাজেই আমাদের সাংস্কৃতিক যুদ্ধটা গুরুত্ব দিয়ে করতে পারতে হবে। কান্টার কালচার ও দার্শনিক লড়াই করে এদের চিন্তার দিক থেকে বিনাশ করতে পারতে হবে। এই জন্য থিওরিটিক্যাল ভায়োলেন্স দরকার। নইলে বাংলাদেশের মুক্তি আসবে না।
অন্যদিকে, উগ্র-হিন্দুত্ববাদ একটা গ্লোবাল সমস্যা। এরা গুপ্ত হত্যার রাজনীতির সাথেও জড়িত। বিভিন্ন দেশে এদের নিয়ে অনেকেই সোচ্চার। এই রমজানে নামাজরত মুসল্লিদের উপর ডারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রতিনিয়ত আক্রমণ হচ্ছে। আমাদের দেশের আওয়ামী ঘাতদের বিরুদ্ধে জনগনের মুক্তিকামী প্রতিরোধকে এরা মাইনরিটির উপর আক্রমণ হিসেবে প্রচার করছে। এরা ভুয়া তথ্যের ইন্ডাসট্রি গড়ে তুলেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।
 
আপনারা দেখেছেন, তুলসীকে প্রভোক করে এমন মন্তব্য দেয়াইছে যা বাংলাদেশকে বিব্রত করতে পারে। সরকার শক্ত পজিশন নিছে । ধন্যবাদ। যদিও সে এটা শুধু এই আমল নিয়ে বলে নাই। কিন্তু পরে তাদের অনুগত মিডিয়াতে এটা আমেরিকার পজিশন বলে প্রচার করেছে। অথচ এটা ছিল তুলসির মতামত। প্রশ্নের পিঠে দেয়া উত্তর। সেটাও বিকৃত করে উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।আমাদের দেশে যদি সত্যিকারের সিভিল সোসাইটি থাকতো। যদি আসলেই বুদ্ধিজিবি বলে কিছু থাকতো তাইলে ডারতের মাইনরিটিকে যে ভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে সেটা নিয়ে আমরা সোচ্চার হতাম। আমরা প্রতিনিয়ত বিবৃতি দেখতাম কাগজে। আমাদের উচিত ডারতের ইসরামোফোবিয়া ও মাইনরিটিকে আক্রমণের বিষয়ে নিয়মিত ভয়েস রেইস করা। পত্রিকায় লেখা। বিৃতি দেয়া। বিভিন্ন মিডিয়াতে আমাদের একটিভিজম যাতে গুরুত্বের সাথে প্রচার হয় তেমন ভাবে আয়োজন করা । প্রতিনিয়ত সোচ্চার হওয়া। ভারতের প্রতিটি ঘটনায় পথে নামা। বিবৃতি দেয়া। ও বিদেশী মিডিয়াতে ব্যাপক কাভারেজ দেয়ার আয়োজন করা। ডারতের ঘটনা ঘটতে দেড়ি আমাদের পজিশন নিতে যেন দেড়ি না হয়। মশালের ডিব্বায় তেল রিজার্ভ রাখা। ঘটনা ঘটার সাথে সাথে জ্বজালায়ে দিয়ে মিছিল শুরু করা। ইংরেজি প্লে কার্ড থাকবে প্রচুর। যাতে বিদেশী মিডিয়াতে ঠিক-ঠাক ঘটনা আসতে পারে।আর নির্বাচনের পরেও ড. ইউনূসকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের রাখতে হবে বাংলাদেশের জন্য ( রাষ্ট্রপতি করা যেতে পারে)। যে দলই ক্ষমতায় আসুক এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।সারা দুনিয়াকে বুঝানো গোটা সাউথ এশিয়ার ঐক্য ও হারমনির শত্রু এই উগ্রদেশটির একাংশ। এবং সেই দেশের ইসলামোফোব বিরোধী লেখক ও একটিভিস্টদের সাথে ঐক্য গড়ে তুলে গেটা সাব কনটিনেন্ট জুড়ে এদের উগ্রতার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। এই দেশটির অশিক্ষিত রাষ্ট্র প্রধান গোটা রিজিয়নকে পিছিয়ে দিচ্ছে এটা দুনিয়াকে জানাতে হবে।



রেজাউল করিম রনি