Image description
 

ভুটান, বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ ও সুখী দেশ, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কেবল ভুটানেই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতির দোহাই দিয়ে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত কি বাস্তবসম্মত নাকি এটি একটি অতিরঞ্জিত প্রতিক্রিয়া?

নিষেধাজ্ঞার কারণ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ৪৩টি দেশকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তালিকা প্রকাশ করেছে— রেড, অরেঞ্জ এবং ইয়েলো।

  • রেড লিস্ট: সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলোর নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ। ভুটান ছাড়াও আফগানিস্তান, কিউবা এবং সিরিয়া এই তালিকায় রয়েছে।
  • অরেঞ্জ লিস্ট: এ তালিকাভুক্ত দেশের নাগরিকদের উপর নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে সীমিত প্রবেশাধিকার রয়েছে।
  • ইয়েলো লিস্ট: এসব দেশকে ৬০ দিনের মধ্যে ভ্রমণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে বলা হয়েছে, নতুবা তারা রেড বা অরেঞ্জ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।

ভুটানের অন্তর্ভুক্তির কারণ

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (DHS) তিনটি প্রধান কারণ দেখিয়ে ভুটানকে রেড লিস্টে রেখেছে—

 

১. জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ: যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ভুটান থেকে অভিবাসন প্রবাহের ধরন এবং পরিচয় যাচাই সংক্রান্ত জটিলতা নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।

২. ভিসা শর্ত লঙ্ঘনের সংখ্যা বৃদ্ধি: ২০২৩ সালে ভুটানি নাগরিকদের দ্বারা ভিসা লঙ্ঘনের হার ৩৭% বৃদ্ধি পেয়েছে।

৩. অতিরিক্ত ভিসা ওভারস্টে: ২০২২ সালে ২৯৫ জন ভুটানি নাগরিকের মধ্যে ১১২ জন নির্ধারিত সময়ের পরও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে গেছেন, যা ২০২৩ সালে ৭২ জনে পৌঁছেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত কি যৌক্তিক?

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ কিছুটা বৈধ হলেও, ভুটানের মতো শান্তিপূর্ণ ও ক্ষুদ্র জনসংখ্যার একটি দেশের জন্য সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা অতিরঞ্জিত পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

  • অন্য দেশগুলোর তুলনায় ভুটানের অপরাধ ও অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম।
  • ভুটান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যা এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাহত হতে পারে।
  • জাতীয় নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতির মধ্যে ভারসাম্য রাখা জরুরি, যাতে বৈধ ও শান্তিপূর্ণ ভ্রমণকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

কী করা উচিত?

ভুটান সরকারের উচিত কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা এবং প্রয়োজন হলে নিরাপত্তা যাচাই ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রকেও উচিত তার নিষেধাজ্ঞার মাপকাঠি পর্যালোচনা করে ন্যায্য ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া।

বিশ্ব যখন আন্তঃসীমান্ত সংযোগ ও কূটনৈতিক সহযোগিতার দিকে এগোচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক সংহতির পরিপন্থী বলে মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এর মানবিক ও কূটনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করা উচিত।