Image description
 

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) যান্ত্রিক বিভাগে কয়েকশ কোটি টাকা দামের যন্ত্রপাতির সঙ্গে রয়েছে শতাধিক ট্রাক ও গাড়ি। চলতি বছর যুক্ত হচ্ছে আধুনিক বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র, নতুন দুটি কংক্রিট ও অ্যাসফল্ট প্লান্ট। অথচ হাজার কোটি টাকা দামের এসব গাড়ি-যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও দেখভাল করার কেউ নেই। বিভাগটির নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীর পদ শূন্য রয়েছে।জানা যায়, নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের উন্নয়নকাজ দেখার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর তিনটি ও সহকারী প্রকৌশলীর দুটি পদ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই পাঁচ পদের চারটিই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। একই অবস্থা বিদ্যুৎ বিভাগে। নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলীর পদ শূন্য থাকায় মাত্র একজন উপসহকারী প্রকৌশলী সামলাচ্ছেন ২৭ হাজার বৈদ্যুতিক বাতিসহ কেসিসির সব বৈদ্যুতিক কাজ।

 
 

কর্মকর্তারা জানান, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় নাগরিক সেবা গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কাজের মান যাচাই করাও কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে প্রেষণে সরকারের অন্য সংস্থা থেকে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী এনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার দাবি উঠেছে।যান্ত্রিক বিভাগ থেকে জানা গেছে, কেসিসিতে বর্তমানে ১৮৬টি যানবাহন ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি রয়েছে। এগুলোর আর্থিক মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। গত  বছর যন্ত্রপাতির বহরে যোগ হয়েছে আধুনিক বর্জ্য বহন ট্রাক, লংবুম এক্সক্যাভেটর, নদী থেকে ভাসমান ময়লা অপসারণ ও খনন যন্ত্র। প্রতিদিন নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে সম্পৃক্ত ৪০টি ট্রাক, কনটেইনারবাহী ট্রাকগুলো এই বিভাগ থেকে পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া মশক নিধন, বিশেষ বর্জ্য অপসারণের কাজও যান্ত্রিক বিভাগ দেখভাল করে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটির অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। এখানে নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলীসহ গুরুত্বপূর্ণ চার পদের মধ্যে তিনটিই শূন্য।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১১ মার্চ যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল আজিজ অবসরে যান। বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি এই বিভাগের অধীনে থাকায় প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা করা হয়েছিল তাঁকে। প্রায় ৪০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকও ছিলেন তিনি। প্রকল্পের আওতায় আরও বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি কেনার কথা রয়েছে। এ ছাড়া নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিনি শলুয়ায় বর্জ্য থেকে সার, বিদ্যুৎ ও ডিজেল উৎপাদন কেন্দ্র তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর অবসর বিভাগটিতে বড় শূন্যতা তৈরি করেছে। 

রুটিন কাজ চালিয়ে নিতে ১১ মার্চ কেসিসির সচিব শরীফ আসিফ রহমানকে নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণাকে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রশাসন ক্যাডারের দুই কর্মকর্তা যান্ত্রিক বিভাগ কতটা সামলাতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশয় দেখা দিয়েছে এই বিভাগের আওতায় থাকা খুলনার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন নামের ৪০৪ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েও। এখন পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একই অবস্থা কেসিসির পূর্ত বিভাগের। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর তিনটি পদের দুটি ও সহকারী প্রকৌশলীর দুটি পদই শূন্য। ৩১টি ওয়ার্ডে উন্নয়নকাজ তদারকির জন্য উপসহকারী প্রকৌশলীর পদ রয়েছে ১০টি। কিন্তু কাজ সামলাচ্ছেন মাত্র তিনজনে। নতুন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, ৩১টি ওয়ার্ডে ১৬ জন উপসহকারী ও ৩২ জন কার্য সহকারী প্রয়োজন। অথচ আছে মাত্র দু’জন। 

কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, নগরজুড়ে উন্নয়নকাজ চলায় পাঁচ প্রকৌশলীর কাজ একজনকে করতে হচ্ছে। তাও কাজ শেষ হচ্ছে না। জরুরি অনেক কাজ আটকে থাকছে। জরুরি ভিত্তিতে নতুন নিয়োগ অথবা সরকারের অন্য সংস্থা থেকে প্রেষণে প্রকৌশলী আনা প্রয়োজন। 

কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, অন্য সংস্থা থেকে প্রেষণে প্রকৌশলী দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর যতদিন নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদ পূরণ না হয়, ততদিন আবদুল আজিজকে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা, সে বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।