
জুলাই অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। সরকার টাকা দিলেও কাজ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। যার ফলে অনেক সাইটে কাজ হচ্ছে না।
গতকাল জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসের এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেক প্রকল্প পরিচালক পালিয়ে গেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম দিকে যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প পাস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সভায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা না থাকায় চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। এডিপির আকার বেশি দেখাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার এডিপি বাস্তবায়ন মূল এডিপির তুলনায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কম হবে।
আইএমইডি সূত্র জানায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপির তুলনায়, সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) আকার কমেছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি থেকে বরাদ্দ কমেছিল ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে কমেছিল ১৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার সর্বোচ্চ এডিপি কাটছাঁট হয়েছে। এদিকে যে পরিমাণ সংশোধিত এডিপিতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে, আগে কখনো এত টাকা রাখা হয়নি। আগের বছর ১৮ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাখা হয়েছিল মাত্র তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাস্তবায়ন গতি কম থাকায় সরকারি তহবিলের চাহিদাও অনেক কমেছে। সাধারণত অন্যান্য অর্থবছরের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সরকারি তহবিল থেকে চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এডিপিতে যে পরিমাণ সিলিং বেঁধে দেওয়া হয়েছে, চাহিদা তার চেয়ে কম রয়েছে। তবে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে চাহিদার চেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে ৭০-৭৫ হাজার কোটি টাকা চাহিদা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার বৈদেশিক অর্থায়ন ব্যবহারের গুরুত্ব দেওয়ায় বরাদ্দ বাড়িয়ে ৮১ হাজার কোটি টাকার সিলিং দেওয়া হয়।
আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোন প্রকল্পটি বেশি প্রয়োজনীয়, কোনটির প্রয়োজনীয়তা কম তা যাচাই-বাছাই চলছে। প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।