
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির ফাইল সব প্রক্রিয়া শেষে এখন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে রয়েছে। আসন্ন ঈদের আগেই সুখবর পেতে চান ৪০ বছরের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষকরা। প্রথম ধাপে এক হাজার ৫১৯টি মাদরাসার এমপিওভুক্তির সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পেলে আগামী মে মাস থেকেই এসব মাদরাসার প্রায় ছয় হাজার শিক্ষকের বেতন-ভাতা চালু করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে এসব শিক্ষকের মে-জুন দুই মাসের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব। তবে আগামী অর্থবছর থেকে এমপিওভুক্ত খাতে এসব শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (মাদরাসা অনুবিভাগ) এস এম মাসুদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমপিওভুক্তির ফাইল আমরা সব প্রক্রিয়া শেষ করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই আমরা এমপিওভুক্তির কাজ শুরু করতে পারব।
এই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রকৃত সংখ্যা কত তা নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি। শিক্ষক সংগঠনগুলো বলছে, ইবতেদায়ি মাদরাসার সংখ্যা আট হাজার ৯৫৬টি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে জমা হওয়া তথ্য বলছে, মাদরাসার সংখ্যা সাত হাজার ৪৫৩।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার বর্তমান শিক্ষকসংখ্যা, অবকাঠামো নানা বিষয়ে আমরা তথ্য নিচ্ছি। যাতে এমপিওভুক্তির অনুমোদন পেলে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করা যায়।’
কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ বলছে, মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্তিতে নতুন নীতিমালা ও জনবলকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। আর মাদরাসাগুলোর প্রাক-প্রাথমিক বা নুরানি পর্যায় চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। মাদরাসাগুলোতে ছয়টি শিক্ষক পদসহ মোট সাতটি পদ থাকবে। নীতিমালায় ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান পদের বেতন নির্ধারণ করা হবে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের সমান অর্থাত্ দশম গ্রেডে। কারি শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষক পর্যায়ের পাঁচটি পদ থাকবে, যেগুলোর বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে। মাদরাসাগুলোর প্রতিটিতে অফিস সহায়ক বা এমএলএসএস পদ সৃষ্টি করা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে অনুদানভুক্ত এক হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির পর দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোডপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাকে এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। তৃতীয় পর্যায়ে সব ইবতেদায়ি মাদরাসাকে পৃথকীকরণ সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপনের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের জন্য আইন বা অধ্যাদেশ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া অনুমোদনসাপেক্ষে আরো অনেক ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
সূত্র জানায়, দেশে শুরুতে মাদরাসা শিক্ষার প্রাথমিক স্তর ফোরকানিয়া ইবতেদায়ি মাদরাসা নামে পরিচালিত হতো। ১৯৮৪ সাল থেকে তা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নামে সরকারি মঞ্জুরি পাওয়া শুরু করে। তাদের শিক্ষার্থীরাও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছে। ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা মাসে ৫০০ টাকা ভাতা পেতে শুরু করেন। রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। তবে বঞ্চিতই রয়ে যায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষা বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘৪০ বছর ধরে আমরা বঞ্চিত। শুধু ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে আমাদের কেউ বিনাবেতনে বা নামমাত্র ভাতায় শিক্ষকতা করে আসছি। প্রথম পর্যায়ে রেজিস্টার্ড মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্তির উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আসন্ন ঈদের আগেই এমপিওভুক্তির ফাইলে প্রধান উপদেষ্টার চূড়ান্ত অনুমোদনের সুখবর আমরা শুনতে চাই।’