Image description

করোনাভাইরাসের টিকা কেনার নামে ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দুদক মহাপরিচালক বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা বিতরণের খরচ দেখানো হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খরচ হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সালমান এফ রহমান ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

দুদক জানায়, করোনাভাইরাসের টিকাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল একটি সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটে আরও ছিলেন- তৎকালীন স্বাস্থ্যসচিব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএসআরসি) চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস। এই সিন্ডিকেটের শক্তির বলয়েই আটকে যায় দেশে আবিষ্কৃত টিকা বঙ্গভ্যাক্স।

তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, কোভিড-১৯ টিকা ক্রয় এবং বিতরণের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খরচ সর্বোচ্চ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

চক্রটি তাদের পকেট ভারী করতেই মূলত বাংলাদেশ আবিষ্কৃত করোনা টিকার অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে গড়িমসি করে। সিরাম থেকে সালমান এফ রহমান আলাদা কমিশন নিয়েছেন, যা আর কোনো দেশে ঘটেনি।

দুদক সূত্রে জানা যায়, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ভারত থেকে আমদানি করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিড ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজ থেকে অন্য সব খরচ মিটিয়ে ৭৭ টাকা করে লাভ করেছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ড্যাম্বাসিনের ৭০ মিলিয়ন ডোজ পেয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪২৫ টাকা। টিকায় মোট খরচ হয়েছে ২ হাজার ১৭৫ বিলিয়ন টাকা। অন্যদিকে চীন থেকে সিনোফার্মার ভ্যাকসিনের ৩.১৫ মিলিয়ন ডোজ আমদানিতে ২৭.৪৭৫ বিলিয়ন টাকা খরচ হয়েছে, যা প্রতিটি ৮ হাজার ৭২২.২০ টাকা বা প্রায় ১০০ ডলার। অথচ সরকারি কমিটি ১৫ মিলিয়ন ডোজ সিনোফার্মার ভ্যাকসিনের প্রতিটি ১০ ডলারে কেনার অনুমোদন দেয়। এখানে ক্রয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আমদানি করে চত্রুটি অন্তত ২২ হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছে। সালমান এফ রহমান তার নিজের প্রতিষ্ঠানকে তার প্রভাব খাটিয়ে লাভবান করেছেন, রাষ্ট্রের সম্পদের অপচয় হয়েছে, আর বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে পদদলিত করেছেন।