Image description

ত্রিভুজ প্রেমের বলি হয়েছেন নড়াইলের যুবক তাজকীর আহমেদ। এ ঘটনায় ওই যুবকের প্রেমিকা সীমাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জার দিয়ে তাকে ঢাকা থেকে খুলনায় ডেকে নেয় সীমার সাবেক স্বামী অভি।

পরে সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে খুন করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তদন্তে জানা যায়, প্রেমিকা সীমা সম্পর্কে ভিকটিম তাজকীর আহমেদের ভাইয়ের শ্যালিকা।

সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত জানান কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার এমএম শাকিলুজ্জামান। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা যেন সিনেমাকেও হার মানায় বলে সংবাদ সম্মেলনে বলেন এই কর্মকর্তা।

 

গত ২২ ফেব্রুয়ারি তাজকিরের মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদ তাজকির নিখোঁজ হয়েছে বলে খালিশপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর ৫ দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি খানজাহান আলী থানাধীন ভৈরব নদীর বালুর মাঠ ঘাটে বস্তা বন্দি যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

 
 

পুলিশের অনুরোধে জিডির বাদী আসিফ মাহমুদসহ তাজকীরের বাবা খুলনা মেডিকেল হাসপাতাল মর্গে লাশের পরিহিত জামাকাপড় দেখে লাশটি তাজকীর আহম্মেদের বলে শনাক্ত করেন।

 

হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় খালিশপুর থানা পুলিশ সুরাইয়া আক্তার সীমা, লাবনী বেগম এবং শহিদুল ইসলাম সাহিদকে পূর্বে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে মশিউর রহমান জিতু (২৪), খালিশপুরের বিআইডিসি রোড এলাকার শহিদুল ইসলাম কাজীর ছেলে রিয়াদ কাজীকে (২২) গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রেমিকার ব্যবহৃত হোয়াটস্অ্যাপ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে ভিকটিম তাজকীর তার ভাই রনির শ্যালিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকা থেকে খুলনায় যান। তাজকির গত ২১ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানাধীন গোয়ালখালি এলাকায় তার মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদের বাড়িতে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য যায় এবং বাসাতে কিছু সময় থেকে প্রেমিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন।

তদন্তে জানা যায় যে, প্রেমিকা সীমা সম্পর্কে ভিকটিমের ভাইয়ের শ্যালিকা। সীমার সঙ্গে এজাহারভুক্ত ১নং আসামি ইসমাইল হোসেন অভির সঙ্গে তিন বছর পূর্বে তাদের পরিবারের অমতে বিয়ে হয়। পরে অল্পদিনের মধ্যে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায় এবং অভি দেশের বাইরে চলে যায়। এই সুযোগে তাজকীর আহম্মেদের সঙ্গে সীমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডিভোর্সের ৭-৮ মাস পরে অভি দেশে ফিরে এসে প্রাক্তন স্ত্রী সীমার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক তৈরি হয়। এসময়ে ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় যা একমাত্র সীমা জানতো।

পুলিশ জানায়, সীমা একই সঙ্গে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দুই প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক চলমান রাখে যাতে কেউই বিষয়টি বুঝতে না পারে। এদিকে অভি আর সীমার পুনঃরিলেশনের বিষয়টি তাদের উভয় পরিবারের লোকজন জানলেও ভিকটিম তাজকীরের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি অপ্রকাশ্যে থেকে যায়। কিন্তু ঘটনা পরিক্রমায় অভি সীমার সঙ্গে তাজকীরের প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনে যায়। এটা নিয়ে সীমা এবং অভির মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে।

অভি ভিকটিম তাজকীরকে শায়েস্তা করার জন্য সীমার ব্যবহৃত গোপন মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটস্অ্যাপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভিকটিমকে খুলনায় আসতে বলে। তাজকীর খুলনা আসলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভি তার বন্ধুদের সহায়তায় তাকে অপহরণ করে নিজ বাসায় নিয়ে যায়। পরে অভিসহ ৪ বন্ধু মিলে তাজকীরের হাত-পা বেঁধে মুখে কচটেপ পেঁচিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ও পুরুষাঙ্গে উপর্যুপরি আঘাত করে, গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দিয়ে নৃশংসভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

পরে তারা ৪ বন্ধু মিলে ডাকবাংলা থেকে টাকা দিয়ে বস্তা কিনে তাজকীরের লাশ ওই বস্তায় ভরে ইজিবাইকে করে ভোর রাতে ৪/৫টার দিকে হার্ডবোর্ড খেয়াঘাটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পূর্বে ভাড়া করে রাখা ট্রলারযোগে দৌলতপুর যাওয়ার দিকে নদীর মাঝখানে নিয়ে লাশ ফেলে দেয়।

গ্রেপ্তারকৃত জিতু এবং রিয়াদ তাজকির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর লাশ বহনের কাজে ব্যবহৃত ইজিবাইকের চালক শহিদুল ইসলাম সাহিদকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।