Image description

চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান অনেকের কাছেই মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। শেখ হাসিনা সরকারের সময় নানাভাবে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ফোনে আড়ি পেতে কল রেকর্ড ফাঁস, অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও উঠেছিল।

জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগেও অভিযুক্ত এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি কারাবন্দি এবং তাঁর অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া চলমান।  তাঁর আচারণ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা, নতুন তথ্য প্রকাশ থেমে নেই।

সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভুঁইয়া (আইকেবি) তাঁর ফেসবুক পেজে বিজিবি, র‌্যাব, এসএসএফ ও আনসার নিয়ে আমার যত অভিজ্ঞতা শিরোনামে ছয় পর্বের লেখায় জিয়াউল আহসান সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য তুলে ধরেছেন।

জানিয়েছেন, জিয়াউল আহসান তাঁকে মেরে ফেলতে পারেনএমন তথ্যে তিনি আতঙ্কিত হন। একদিন সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে বোমা আতঙ্ক দেখা দেয়। জিয়াউলের নেতৃত্বে র‌্যাব কিভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল, তাও লিখেছেন তিনি। ২০১২ সালের ২৫ জুন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরই জেনারেল আইকেবি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছিলেন, তিনি র‌্যাব থেকে সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিতে চান।
পুলিশের সঙ্গে মিশে কাজ করতে গিয়ে সেনা অফিসাররা নৈতিক বিচ্যুতির শিকার হচ্ছেন। শেখ হাসিনাও সম্মতিসূচক ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, র‌্যাব জাতীয় রক্ষী বাহিনীর চেয়েও খারাপ। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির পরিবর্তন আসেনি। শেখ হাসিনা পরে র‌্যাবে আরো সেনাসদস্য পাঠাতে চাপ সৃষ্টি করেন। 

আইকেবি আরো জানান, তিনি জিয়াউল আহসানকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ক্রসফায়ার বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। ঢাকা সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জিয়াউলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তিনি। জিয়াউলের আচরণ আরো উচ্ছৃঙ্খল হলে তাঁকে বোঝানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় উচ্চপদস্থ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে। কিন্তু পরে ওই সেনা কর্মকর্তারা জানান, তাঁর (জিয়াউলের) মস্তিষ্ক পাথর বা ইটের টুকরা দিয়ে ঠাসা, বোঝানোর কোনো উপায় নেই।

সাবেক এই সেনাপ্রধান আরো উল্লেখ করেন, একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিকী, প্রধানমন্ত্রীর মিলিটারি সেক্রেটারি ও অ্যাসিস্ট্যান্ড মিলিটারি  সেক্রেটারির সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে জিয়াউল আহসান আমার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করা শুরু করেন।

আইকেবি র‌্যাবসহ অন্য কয়েকটি বাহিনীতে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগ সম্পর্কে বলেছেন, আমি (সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর)  বিস্ময়ের সঙ্গে আবিষ্কার করলাম, মাত্র ২০-২১ বছরের অফিসারদের এমন সব দায়িত্বে টেনে নেওয়া হয়েছে, যার সঙ্গে তাঁদের আসল সামরিক সেবার কোনোই মিল নেই। তাঁরা কী করছেন বা কেন করছেন তা নিজেরাও স্পষ্ট জানতেন না। এটি ছিল বিএমএ (বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি) কর্তৃক ক্যাডেটদের থিংকিং লিডার হিসেবে গড়ে তোলার সম্পূর্ণ ব্যর্থতা।

র‌্যাব বিলুপ্তির পক্ষে মতামত জানিয়ে তিনি বলেছেন, আজকে আমরা এমন একটা অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি, র‌্যাব সম্পর্কে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া বাঞ্ছনীয়। আমি সেনাপ্রধানকে অনুরোধ করব, যেন তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেন। সেটি সম্ভব না হলে সামরিক অফিসারদের র‌্যাব থেকে যেন স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করে নিয়ে আসেন। এটি করার জন্য বর্তমান সেনাপ্রধানের যে স্বাধীনতা তৈরি হয়েছে, আগের কোনো সেনাপ্রধানের তা ছিল না। তাঁর এই নতুন লব্ধ অবস্থানের জন্যই তাঁকে অনুরোধ করছি, তিনি যেন আমরা যে কাজটি করতে পারিনি সেটি সম্পন্ন করেন।

সাবেক সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাম-উদ-দৌলা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি  সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য এবং সাবেক সেনাপ্রধান। তিনি যা লিখেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। এ বিষয়ে আইএসপিআরের কোনো মন্তব্য নেই।

জিয়াউলের বিস্ময়কর  উত্থান :  আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন জিয়াউল আহসান। ২০০৯ সালে র‌্যাব-২-এর টুআইসি হিসেবে যোগদান করেন। লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র‌্যাব সদর দপ্তরে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে কর্নেল পদে পদোন্নতি দিয়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদে তাঁকে পদায়ন করা হয়। ওই বছরের মে মাসে শাপলা চত্বরের হেফাজতের মহাসমাবেশের সময় তিনি র‌্যাবের অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে খুনের ঘটনার সময়ও তিনি র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ছিলেন।  ২০১৫ সালে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। এরপর তাঁকে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) পদে পদায়ন করা হয়। এক বছর পরে তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) পরিচালক করা হয়। ২০২১ সালে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়ে এনটিএমসির মহাপরিচালক হন।

জিয়াউল আহসানের এই বিস্ময়কর উত্থান পর্বের মধ্যেই জেনারেল ( অব.) ইকবাল করিম ভুঁইয়া (আইকেবি) ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

যার মস্তিষ্ক পাথর বা ইটের টুকরা দিয়ে ঠাসা : জিয়াউল সম্পর্কে আইকেবি লিখেছেন, (সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার) কয়েক দিন পর আমি কর্নেল (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও ডিজি এসএসএফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন) মুজিবকে যিনি তখন র‌্যাবের এডিজি ছিলেন, ডেকে বলি যেন তিনি  লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং আর যেন কোনো ক্রসফায়ার না ঘটে। কর্নেল মুজিব এ ব্যাপারে আমাকে কথা দেন এবং বিদায় নেওয়ার সময় তাঁকে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হয়। পরের কয়েক দিন পত্রপত্রিকায় লক্ষ্য করলাম, নতুন কোনো ক্রসফায়ারের খবর নেই। এতে মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। এরপর কর্নেল মুজিব একাধিকবার আমাকে এসে জানিয়েছিলেন, সত্যিই ক্রসফায়ারের ঘটনা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পর আমি বুঝতে পারি ঘটনা ঠিকই ঘটছে; কিন্তু সেগুলোর খবর চাপা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে, যখন কর্নেল মুজিব র‌্যাব ছেড়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যান; আর কর্নেল জিয়া, যিনি আগে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার দায়িত্বে ছিলেন; নতুন ডিজি বেনজীর আসার সঙ্গে সঙ্গেই এডিজি র‌্যাব হিসেবে দায়িত্ব নেন।

এরপর আর্মি নিরাপত্তা ইউনিট (এএসইউ) সূত্রে খবর পাই যে  কর্নেল জিয়া নিজের আবাসিক টাওয়ারে একজন গার্ড রেখেছেন, বাসায় অস্ত্র রাখছেন এবং পুরো ফ্ল্যাটে সিসিটিভি বসিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বলা হয় গার্ড সরিয়ে নিতে, ক্যামেরাগুলো খুলে ফেলতে, বাসায় অস্ত্র রাখা থেকে বিরত থাকতে এবং অফিশিয়াল কোয়ার্টারে যে সামরিক নিয়ম-কানুন আছে, সেগুলো মেনে চলতে। পরবর্তী সময়ে তাঁর আচরণ আরো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। ডাইরেক্টর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (ডিএমআই) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জগলুল তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন; কিন্তু তাতে কর্নেল জিয়া কোনো কর্নপাত করেননি। পরে আর্মি নিরাপত্তা ইউনিটের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল তাঁকে আলাপের জন্য ডাকেন। পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল আমাকে জানান, জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মনে হয়েছে  যেন তিনি এমন একজনের সঙ্গে কথা বলছেন, যার মস্তিষ্ক পাথর বা ইটের টুকরা দিয়ে ঠাসা, বোঝানোর কোনো উপায় নেই।

ঢাকা সেনানিবাসের একাংশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা : জিয়াউল আহসানকে সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা সম্পর্কে আইকেবি লিখেছেন, একপর্যায়ে, নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিকী, এমএসপিএম (প্রধানমন্ত্রীর মিলিটারি সেক্রেটারি) আর তাঁর কোর্সমেট এএমএসপিএম কর্নেল মাহবুবের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে কর্নেল জিয়া আমার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করা শুরু করেন। আমার আর কোনো উপায় ছিল না। আমি তাঁকে রেললাইনের পশ্চিম পাশের ক্যান্টনমেন্টে পারসোনা নন গ্রাটা ( পিএনজি) বা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করি। তবে পূর্ব পাশের আবাসনটিতে উনাকে থাকতে দিয়েছিলাম। লজিস্টিকস এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বলি। যার ফলস্বরূপ আগে জানানো হয়নি বলে তাঁকেও নিরাপত্তা উপদেষ্টার বিরাগভাজন হতে হয়েছিল।

কর্নেল জিয়া পরিস্থিতির গুরুত্ব তখনই পুরোপুরি বুঝলেন, যখন মিলিটারি পুলিশ তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে সেনানিবাসের ভেতরে সিএমএইচে যাওয়ার পথে চেকপোস্টে আটকে দেয়। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই এমএসপিএম আমাকে ফোন করে জানতে চাইলেন, একজন চাকরিরত অফিসারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে পড়ে কি না, না এটা বিশেষ কোনো পদক্ষেপ। আমি বললাম, এটা ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা। যদি তুমিও চিফের আদেশ অমান্য করো, তাহলে তোমাকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। পরের দিন তিনি আবার ফোন করে জিয়ার ওপর থেকে এই বিধি তুলে নেওয়ার অনুরোধ করলেন। এ ঘটনার পর কর্নেল জিয়া কিছুটা নিয়মের মধ্যে আসেন। বুঝতে পারেন তিনি এখনো সেনাবাহিনীর অধীনে আছেন। তবু আমি তাঁকে আমার অফিসে ঢুকতে দিইনি। কারণ জানতাম, তিনি শুধু এসে নিজের কাজের সপক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে আমার সময় নষ্ট করবেন।

 

চতুর্থ অংশ

হত্যায় উৎসাহ দিতেন জিয়া :  সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি আরো লিখেছেন, (র‌্যাবে) নতুনভাবে বদলি পাওয়া অফিসারদের আমি যথাসাধ্য বোঝানোর চেষ্টা করতাম, যেন তারা অমানবিক অপরাধে না জড়ায়।... কারো হাত-পা বেঁধে তাকে হত্যা করাটা চরম কাপুরুষতা। সত্যিকারের সাহসিকতা হলো শত্রুর হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে সামনাসামনি মোকাবেলা করা। কিন্তু কয়েক দিন পর ডিএমআই জানালেন, আমাদের এই চেষ্টা কোনো কাজে আসছে না। অফিসাররা র‌্যাবে নতুন কর্মস্থলে আসামাত্র জিয়া নাকি তাদের হত্যা করতে উৎসাহ দিচ্ছেন।

তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম যে ছিল না, তাও নয়। দুজন অফিসার র‌্যাবে যোগ দেওয়ার প্রথম রাতেই হত্যার নির্দেশ পেয়ে তা অস্বীকার করেন এবং আদেশ না মেনে এমপি (মিলিটারি পুলিশ)  চেকপোস্টে চলে আসেন। ডিএমআই বিষয়টি জানালে আমি তাঁদের সেনাবাহিনীতে সম্মানের সঙ্গে পুনর্বাসিত করি। একজন মেজর, যিনি আমি এসআইঅ্যান্ডটিতে কমান্ড্যান্ট থাকাকালে স্পেশাল ওয়ারফেয়ার উইংয়ে প্রশিক্ষক ছিলেন, র‌্যাবে যোগ দেওয়ার পর সেনাভবনে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। জানতে পারি, তিনি রেডিসন হোটেলের এক কর্মীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে সন্দেহভাজনদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। আমি তাঁকে সাবধান করে দিই, যেন তিনি নিজ হাতে বিচার তুলে না নেন। তিনি বললেন, আর করবেন না। কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখি, তিনি নিজেই ফেসবুুকে একটা ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি শাপলা চত্বরের ধোঁয়াটে পটভূমিতে জিয়ার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন।

র‌্যাব, ডিজিএফআই এবং বিজিবিতে অফিসার না পাঠনোর সিদ্ধান্ত : সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি তাঁর লেখায় র‌্যাব, ডিজিএফআই এবং বিজিবিতে আর কাউকে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, ডিজি বিজিবি মেজর জেনারেল আজিজ (পরে জেনারেল) ও সেনাপ্রধান এবং কর্নেল জিয়া  প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে অভিযোগ করেন এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে বলেন। ডিজি ডিজিএফআই মেজর জেনারেল আকবর বারবার অনুরোধ করলে  শেষ পর্যন্ত আমি নিজে একটি ১০-১২ জনের অফিসার দলের তালিকা তৈরি করে তাঁকে দিই। এদিকে কর্নেল জিয়া আরো লবিং চালিয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা, এমএসপিএম আর নিজের কোর্সমেট এএমএসপিএমের সহায়তায় আমার ডিএমআইকে অপসারণ করেন। কারণ তিনি ভাবতেন, ডিএমআই-ই আমাকে তাঁর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছে। স্বাভাবিক নিয়মে সেনাপ্রধানই ডিএমআই আর সিও এএসইউ নিয়োগ দেন। কিন্তু আমার আপত্তি সত্ত্বেও ডিএমআইকে সরিয়ে দেওয়া হয়, যা আমাকে যথেষ্ট অপমানিত করে। তবে সিও এএসইউ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলকে (বর্তমানে নির্বাচন কমিশনার) আমার তীব্র বিরোধিতার মুখে সরাতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তী সময়ে মিস্টার  বেনজীর স্বয়ং আমার কাছে আসেন এবং র‌্যাব চালাতে আমার সহায়তা চান। কিন্তু আমি তাঁকে অফিসার দেওয়ার কোনো নিশ্চয়তা দিইনি। এমএসপিএম আমাকে কয়েকবার ফোন করে জানান যে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব, বিজিবি আর ডিজিএফআইতে আরো অফিসার চাচ্ছেন। আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় থাকি। চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসন উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে আমাকে ডেকে র‌্যাবে আরো জুনিয়র অফিসার বদলি দিতে বলেন। আমি বুঝিয়ে বলি, পিজিআর, এসএসএফ, ডিজিএফআই, বিজিবি সব খানেই ইতিমধ্যে এত অফিসার দেওয়া হয়েছে যে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত অফিসার দেওয়ার মতো অবস্থা সেনাবাহিনীর নেই। তিনি জোরাজুরি করলেও আমি আমার অবস্থানে শেষ পর্যন্ত অটল থাকি।