Image description
♦ ইউনূস-শি জিনপিং বৈঠক ২৮ মার্চ ♦ সৌর বিদ্যুতের কারখানা তৈরি করবে চীন ♦ মোংলা বন্দর আধুনিকায়নসহ স্বাক্ষর হবে ৮ সমঝোতা স্মারক ♦ অর্থনৈতিক অঞ্চল, রোবট ফিজিওথেরাপি, কনফুসিয়াস সেন্টারসহ ১০ যৌথ ঘোষণা

প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ২৬ মার্চ বেইজিং যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সহায়তাসহ দুই দেশের মধ্যে আটটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি অর্থনেতিক অঞ্চল উদ্বোধন, রোবট ফিজিওথেরাপিসহ ১০টি যৌথ ঘোষণা আসবে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গুরুত্ব পাবে ঢাকা-বেইজিং পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সফরের মূল উদ্দেশ্য দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, চার দিনের সফরে ২৬ মার্চ চীনে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি হবে তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটা বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সে লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফরে চীনের কারখানাগুলোকে কীভাবে বাংলাদেশে স্থানান্তর করা যায়, সে বিষয়টি আলোচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।

এর আগে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্যানেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লোংগি বাংলাদেশে একটি অফিস স্থাপন এবং সোলার প্যানেল উৎপাদনে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনের বেশ কয়েকটি শীর্ষ সোলার প্যানেল নির্মাতা বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধানের জন্য ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করে। তারা খুব শিগগিরই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে। চীনের একটি নিবেদিত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল শিগগিরই কাজ করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ দুপুরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধান উপদেষ্টা। চীনে পৌঁছে ২৭ মার্চ হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেবেন ড. ইউনূস। সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে বক্তব্য দেবেন তিনি। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের বৈঠক হতে পারে। ২৮ মার্চ বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস। একই দিনে হুয়াওয়ে কোম্পানির উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন এন্টারপ্রাইজ পরিদর্শন করবেন তিনি। ২৯ মার্চ চীনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় পিকিং ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করবেন ড. ইউনূস। পরে বেইজিং থেকে চীনের একটি বিমানে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।

ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ড. ইউনূসের বেইজিং সফরকে কেন্দ্র করে ১২ থেকে ১৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। যার মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই) রয়েছে। তবে জিডিআই নিয়ে এখনই সমঝোতা স্বাক্ষর করতে চায় না ঢাকা। উভয়পক্ষের সম্মতিতে আটটির মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সহায়তা, ষষ্ঠ চীন-মেত্রী সেতুর সংস্কার, বাংলাদেশ হাইওয়ে নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন (সড়ক সংক্রান্ত দুটি সমঝোতা), খেলাধুলা, প্রতি বছর দুই দেশের নির্বাচিত ৫০টি করে বই বাংলা-চাইনিজ ভাষায় অনুবাদ ও দুর্যোগ সহযোগিতা বিষয়ক প্রকল্প সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক। এ ছাড়াও চীনের সঙ্গে পানি সহযোগিতা সমঝোতা স্মারক নবায়ন নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আসন্ন সফরে এটি নবায়ন করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি তিস্তা প্রকল্প নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও তা ইউনূস-শি জিনপিং বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে স্থান পাচ্ছে না।কূটনীতিকরা আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বেইজিং সফরে ১০টি যৌথ ঘোষণা আসবে। যার মধ্যে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে লোগো, বাংলাদেশে চাইনিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন, বাংলাদেশে রোবট ফিজিওথেরাপি পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্থাপন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১ হাজার বাংলাদেশি যুবকের চীন সফর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।