
গাজীপুরের শ্রীপুরে মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নার্স-আয়া মিলে এক নারীর প্রসব করান। গর্ভে উল্টে থাকা শিশুটিকে দীর্ঘ সময় টানাটানির পর প্রসব করানো হয়। প্রসবের পরপরই নবজাতক শিশুটির মৃত্যু হয়।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বরমী সড়ক সংলগ্ন কথিত মালা ডাক্তারের বাড়ির মা-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শিশুটির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রসূতিকে প্রথামে শ্রীপুর, পরে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভুক্তভোগী নারী উপজেলার বেড়াইদের চালা গ্রামের মো. আরিফের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন (২৪)।
স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, শনিবার বিকেলে সুনিয়ার প্রসব ব্যাথা শুরু হয়। ফোনে বিষয়টি ডাক্তার মালাকে জানালে তিনি তার ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আমরা ওই ক্লিনিকে যাই। সেখানে মালা অনুপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি জানান ঢাকায় আছেন। মেয়েরা ডেলিভারি করাতে পারবে সমস্যা নেই। একপর্যায়ে নার্স সুমাইয়া ও আয়া জরিনা ও মারজিয়া একাধিক ফরমে প্রাসূতির মা, প্রসূতি ও তার স্বামীর স্বাক্ষর নেন। পরে ওই নার্স-আয়া সাড়ে ৫টার দিকে প্রসব করাতে থাকেন। প্রথমে শিশুটির দুই পা বের হয়, তবে দুই হাত আটকে যায়। অনেক টানাটানি করে দুই হাত বের করা হয়। তখন মাথা আটকে যায়। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে নার্স-আয়ারা ঘার মুচড়ে চাপ দিয়ে মাথা বের করার চেষ্টা করেন। তখনো শিশুটির প্রাণ ছিল। টানাটানি করে বের করার পর মুহূর্তেই নবজাতক মারা যায়।
স্বজনদের অভিযোগ ডাক্তার মালার নির্দেশনায় নার্স আয়ারা প্রসব করানোর সময় তাদের অদক্ষতা আর দায়িত্বহীনতার কারণে আমাদের শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
প্রসূতির মা বলেন, সুনিয়া তিন মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা অবস্থা থেকে মালা ডাক্তার তার চিকিৎসা করতেন। অনেকবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করে বলেছেন, বাচ্চা উল্টা। অনেক ওষুধ দিয়ে মালাকে বলেছেন নরমাল ডেরিভারি হবে। সুনিয়ার প্রসব ব্যাথা শুরু হলে ডাক্তার মালার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি তার ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন। আমরা সেখানে গিয়ে তাকে পাইনি।
তিনি জানান, তার মেয়ের সিজার হয়েছে, ঢাকায় আছেন। কোনো সমস্যা হবে না। মেয়েরা প্রসব করাতে পারবে। পরে আমাদের নিকট থেকে একাধিক ফরমে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরে প্রসব করানোন সময় প্রথমে শিশুটির দুই পা বের হয়, কিন্তু দুই হাত আটকে যায়। অনেক টানাটানি করে দুই হাত বের করা হয়। তখন মাথা আটকে যায়। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে নার্স আয়ারা ঘার মুচড়ে চাপ দিয়ে মাথা বের করার চেষ্টা করে। তখনো শিশুটির প্রাণ ছিল। টানাটানি করে বের করার পর মুহূর্তেই নবজাতক মারা যায়। নার্স আয়ারা টানাটানি করে প্রসব করাতে গিয়ে শিশুটিকে মেরে ফেলেন।
এদিকে মালা ডাক্তারের বাড়িতে শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়ে স্থানীয়রা জড়ো হন। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মতিনুর বেগম মালা একজন স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি নিজেকে ডাক্তার লিখে রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। তার ক্লিনিকে একাধিকবার নারী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এলাকাসী এ অপসিচিকৎসা বন্ধের দাবি করছি।
মোবাইল ফোনে গণমাধ্যমকে কথিত ডাক্তার মালা জানান, মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় হাসপাতালে রয়েছেন। তাকে ফোন করে জানানো হয়েছে। বাচ্চা নরমাল হবে। পনেরো বিশ মিনিটের মধ্যে নরমাল বাচ্চা হয়েছে। তাদেরকে অন্যত্র নিতে বলা হয়েছিল। তারা যায়নি। পরে শুনেছি দুর্ঘটনার কথা। আমি এসে বিষয়টি দেখব।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এমবিবিএস, বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার লেখতে পারবে না। জাহাঙ্গীর আলম ও মতিনুর বেগম প্যাডে ডাক্তার লিখেছে এটা করতে পারেন না। অগ্রীম পেড লিখে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি অপরাধ। কোনো ডাক্তার অগ্রিম প্রেসকিপসন লিখে রাখতে পারে না। মা-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করা হবে। শিশু মৃত্যুর বিষয়ে বলেন, ওই ক্লিনিকে প্রসবকরানোর সময় এক শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনোয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, এ বিষয়ে এখনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।