Image description
 

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে দেশের সাতটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠককে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। বৈঠকের শুরুতে কিছু কথা বললেও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি। তবে পরবর্তী সময়ে নিশ্চয়ই সরকারকে তিনি তার মতামত জানাবেন, যা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশেষ করে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যদিও বিএনপির কোনো কোনো শীর্ষ নেতা এই বৈঠককে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, দেশের মানুষ যখন নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে, তখন নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এ ধরনের বৈঠকের গুরুত্ব ঠিক কতটুকু, তা বোধগম্য নয়।

গত শনিবার দুপুর ১টায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক ঐক্য, সিপিবি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও এনসিপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত বৈঠকটির উদ্যোক্তা জাতিসংঘের ঢাকা অফিস। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন অংশ নেন। এ সময় সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনের প্রধানরাও ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শনিবার জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজনীতিকদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হয়। রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের দলীয় মতামত ব্যক্ত করেছেন। তবে বৈঠকের শুরুতেই জাতিসংঘের মহাসচিব রাজনীতিকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন হলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দলগুলো চাইলে সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’

 

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠকে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ছিলেন। সংস্কার কমিশনের প্রধানরা ছিলেন। মূলত এখানে সংস্কারের ব্যাপারগুলো নিয়ে যেসব কমিশন করা হয়েছে সেই সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা আমাদের বক্তব্যে একই কথা বলেছি। সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে। আমরা সংস্কারের কথা আগেই বলেছি, সেই সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায়। মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সংস্কারগুলো আছে সেগুলো করে ফেলা এবং দ্রুত নির্বাচন করে বাকিগুলো সংসদের মাধ্যমে করে ফেলা। সংস্কারগুলো চলমান প্রক্রিয়া, সে বিষয়গুলো আমরা বলে এসেছি।

 
 

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দেশের মানুষ যখন একেবারেই ন্যূনতম সংস্কার শেষে অতিদ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে তখন এ ধরনের গোলটেবিল বৈঠকের তাৎপর্য তো অবশ্যই থাকবে। জাতিসংঘের মহাসচিব সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি নিশ্চয় কোনো না কোনো ভূমিকা নেবেন। কেননা, সংস্কার, নির্বাচন, কিংবা জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

 

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকের গুরুত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল রোববার তিনি কালবেলাকে বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব দেশের রাজনৈতিক দলের নেতা ও সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন। সেখানে সংস্কার, নির্বাচন ও জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়ে কথা বলেছেন। উনি বাংলাদেশের নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়ে উনার সহযোগিতার কথা বলেছেন। এটা কি গুরুত্বপূর্ণ নয়?

বৈঠকের সফলতা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে সফরে এসেছিলেন। তার মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু অন্যতম। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও জেনেছেন। এটা তো জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশাবাদী, জাতিসংঘসহ এমন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে।

গত সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দলগুলো স্বল্পমেয়াদি সংস্কার প্যাকেজে সম্মত হলে নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে আর দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্যাকেজে সম্মত হলে আগামী বছরের জুনে হবে নির্বাচন। যদিও সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলো এরই মধ্যে তাদের সংস্কার প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এরপর রাজনীতিকদের মতামতও নিয়েছে সরকার।

এমন অবস্থার মধ্যেই শনিবার জাতিসংঘ ঢাকা অফিসের উদ্যোগে রাজনীতিকদের সঙ্গে সংস্থাটির মহাসচিব সাতটি দলের নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেন। বৈঠক নিয়ে ইতিবাচক হলেও হঠাৎ এমন বৈঠক কেন, তা নিয়ে বিএনপির ভেতরেও প্রশ্ন রয়েছে। দলটির নেতারা মনে করেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের বৈঠকের খুব বেশি গুরুত্ব নেই। তবে দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের এক টেবিলে নিয়ে খোলামেলা কথা বলার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেন, দেশের মানুষ যখন নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে, তখন এ ধরনের একটি প্রোগ্রামের গুরুত্ব ঠিক কতটুকু তা বোধগম্য নয়।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি জাতিসংঘের মহাসচিবের বৈঠককে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে গতকাল কালবেলাকে বলেন, আন্তনিও গুতেরেসের বৈঠক নিঃসন্দেহে পজিটিভ। কেননা, তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর বাংলাদেশে এসেছিলেন। নিশ্চয়ই তিনি ৫ আগস্টের আগের বাংলাদেশ আর পরের বাংলাদেশ নিয়ে তুলনা করবেন। তার আসাটাই তো ইতিবাচক। বাংলাদেশে গত ১৫ থেকে ১৬ বছরে বিরোধী দলের ওপর যেভাবে অত্যাচার নিপীড়ন হয়েছে সেসব জাতিসংঘ মহাসচিবের জানা আছে। তিনি আসার পর সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন। সেখানে খোলামেলাভাবে পজিটিভ আলোচনা হয়েছে। সুতরাং অর্জন তো এখানেই যে, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে আছে এবং সেখানে একটা রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। সেখানে তিনি (জাতিসংঘ মহাসচিব) একজন মধ্যমণি হিসেবে কাজ করছেন। এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন।

এক প্রশ্নের উত্তরে এ্যানি বলেন, জাতিসংঘ সাধারণত যে কেনো দেশের নির্বাচনের বিষয়ে খুব কাছ থেকে অবজার্ভ করে। সেটা তাদের দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে।