Image description

জুলাই অভ্যুত্থানের সাত মাস পার হয়ে গেলেও আন্দোলনকারীদের অনেকেই এখনো নিখোঁজ। এরকম ৩১টি ঘটনা অনুসন্ধান করেছি আমরা—যার মধ্যে ছয়জনকে রায়েরবাজার কবরস্থানে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়েছে, চারজনকে আশুলিয়ায় পোড়ানো মরদেহগুলোর মধ্য থেকে শনাক্ত করা হয়েছে, দুজনের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ১৯ জন আজও নিখোঁজ। হাসপাতালের নথিপত্র ও মরদেহ লুকিয়ে ফেলার মাধ্যমে শহীদদের যেন খুঁজে বের করা না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে বিগত সরকারের পরিকল্পিত প্রয়াসের প্রমাণ মিলেছে এই অনুসন্ধানে। চার পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, কীভাবে হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ নিয়ে যেতে পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি এবং এখনও স্বজনদের মরদেহের অপেক্ষায় কী দুঃসহ দিনযাপন করছেন তারা। আজ চতুর্থ ও শেষ পর্ব

ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই সাতজনের মধ্যে একজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি গুলিস্তানের ব্যবসায়ী মো. হাসানের (১৮)। ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

হাসান নিখোঁজ হয়েছিলেন ৫ আগস্ট, যেদিন শেখ হাসিনার পতন ও তিনি পালিয়ে যান। পরের কয়েক মাসে ছেলের খোঁজে ঢাকার অসংখ্য হাসপাতাল, ক্লিনিক, কবরস্থানে ছুটে গেছেন তার বাবা মনির হোসেন। খোঁজ করেন আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামেও।

ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এই খোঁজাখুঁজির মধ্যেই থেকেছেন তিনি।

'চার মাস পর, কয়েকজন সমন্বয়ক আমাকে জানায় ঢামেকে নাকি সাতটি লাশ পড়ে আছে। সেখানে পরনের কাপড় দেখে হাসানকে চিনতে পারি। ও সবসময় সাদা কাপড় পরত,' বলেন মনির।

সিলেট থেকে ছেলের খোঁজে ঢাকায় আসা মো. সগিরের বিশ্বাস, তার সন্তান—হাতিরপুলের ব্যবসায়ী মো. ওয়ালী উল্লাহর (২৫) লাশও ঢামেকের মর্গে আছে।

'আমার ছেলেটা জুলাই থেকে নিখোঁজ। ওরে পাঁচ মাস ধরে এখানে-সেখানে খুঁজেছি। (ঢামেকের) লাশগুলার অবস্থা এতটাই খারাপ যে চেনার উপায় নাই কোনটা কে। ওয়ালীর ডান পায়ে একটা অপারেশন হয়েছিল, একটা লাশের ডান পায়ের দাগ দেখে সেই অপারেশনের দাগের মতো মনে হয়েছে,' বলেন সগির।

সগির তার ডিএনএ নমুনা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) জমা দিয়েছেন।

তার মতো আরও কয়েকজন বাকি ছয় লাশের মধ্যে তাদের হারিয়ে যাওয়া বাবা, ছেলে, ভাই বা স্বামী থাকতে পারেন, এই আশায় ডিএনএ নমুনা জমা দিয়েছেন।

কিন্তু নমুনা না মিললে এবং নতুন কেউ এই মরদেহের খোঁজে না এলে তারাও 'অজ্ঞাতনামা' পরিচয়ে দাফন হবেন। অথচ এদের সবারই পরিবার ছিল, পরিচয় ছিল। (বিস্তারিত প্রথম পর্বে)

নিখোঁজদের শনাক্তে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা 

সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ২৫ জানুয়ারি রায়েরবাজার কবরস্থান জিয়ারত করেন, সেখানে শায়িত জুলাই শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির এই শীর্ষ নেতা সেদিন নিহতদের পরিবারের উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অজ্ঞাতনামা কবরগুলোর পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ করছে সরকার।

দল ঘোষণার পর ৪ মার্চ আবার রায়েরবাজার যান নাহিদ। এবার সঙ্গে ছিলেন নাগরিক পার্টির অন্যান্য ছাত্র নেতারাও।

সেদিন অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় শনাক্তের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন নাহিদ।

কিন্তু বাস্তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে এই প্রক্রিয়া।

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে রায়েরবাজার কবরস্থানে সোহেল রানার মা রাশেদা বেগম। ছবি: স্টার

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেল' আন্দোলনে নিখোঁজদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে নভেম্বর মাসে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পেতেও বেগ পেতে হয়েছে আমাদের।

সেখানে তথ্য দেওয়ার জন্য মাত্র ১২ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

অভ্যুত্থান সেলের দাবি, কোনো নিখোঁজের পরিবারই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

আমরা যেই ৩১ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের কেউই এই বিজ্ঞপ্তি দেখেনি। পত্রিকায় প্রকাশিত অভ্যুত্থান সেলের বিজ্ঞাপনও কারো চোখে পড়েনি। এমন একটি সেল আছে, সেটাই জানে না সিংহভাগ পরিবার। আর যারা সেলের নাম শুনেছে, তারাও এর কার্যালয় কোথায় জানে না।

জুলাই ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহবুব উল্লাহ মজুমদার আঞ্জুমানের নথি থেকে সাত জনের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। সেখানে আছেন আমাদের অনুসন্ধানে উঠে আসা [বিস্তারিত প্রথম পর্বে] রায়েবাজারে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হওয়া ছয়জন। এর বাইরে তালিকায় সাভারের একজন নিখোঁজ আন্দোলনকারী আছেন।

মাহবুব জানান, তিনি এই তালিকা গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেলে জমা দিয়েছেন। সেল থেকে জানানো হয়, তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে এই তালিকাসহ একটি চিঠি পাঠিয়েছে।

এই সেলে দায়িত্বরত তিনজন সরকারি কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নিখোঁজ লাশ শনাক্তের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় 'বেশ গুরুত্বের সঙ্গে' দেখছে। তারা এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

সাইদুর রহমান জানান, বিষয়টি যুগ্ম সচিব ড. মুস্তাফিজ দেখছেন।

যুগ্ম সচিব আমাদের জানান, তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঢাকার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এরকম কোনো চিঠি তার দপ্তরে আসেনি।

তিনি আরও বলেন, 'কবর থেকে লাশ তোলার ক্ষেত্রে ঘটনার সঙ্গে হওয়া মামলার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে অনুরোধ আসতে হবে। আমরা থানা থেকেও এমন কোনো অনুরোধ পাইনি।'

এই প্রক্রিয়া পুরোপুরিই আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে গেছে। কিন্তু সোহেল রানা, ফয়সাল সরকার, মো. আসাদুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম, মাহিন মিয়া, আহমেদ জিলানির মতো নিখোঁজদের পরিবার এখনো সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে।

রায়েরবাজারের ব্লক চারে দাফন হওয়া ১১৪টি কবরের মধ্যে কোনটি তাদের আপনজনের, সেটি জানার অপেক্ষায় আছে এসব পরিবার। বৃষ্টিতে সেসব কবরও এখন সমান হয়ে গেছে, প্রত্যেক কবরের সামনে থাকা বাঁশের খুঁটিগুলোতেও পচন ধরেছে।  

যদিও এসব খুঁটির গায়ে কোনো তথ্য নেই। এগুলোতে যদি জিডি নম্বর, ছবি বা অন্য কোনো তথ্য সংযুক্ত থাকত, তাহলে হয়তো অজ্ঞাতনামা লাশগুলোর পরিচয় জানার একটি উপায় থাকত। 

ছবি: স্টার

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দাফন কর্মকর্তা কামরুল আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দাফন হওয়া অজ্ঞাতদের পরিচয় পাওয়া গেলেও তাদের কবর কোনটা সেটা বের করা কঠিন হবে। কারণ কখনো কখনো ১৫-১৬টা লাশ একসঙ্গে দাফন করা হয়েছে। কে কোন কবরে, সেটা বের করার উপায় নেই।'

ঢামেক, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মতো দেশের বেশ কিছু শীর্ষ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, 'অজ্ঞাত লাশগুলো দাফনের আগে যদি ডিএনএ নমুনা রাখা হতো, সেটাও এখন আর কাজে দিত না। কারণ কোনটা কার কবর, বোঝার উপায় নেই।' 

'এখন ডিএনএ নমুনা নেওয়ার জন্য সব লাশ তুলতে হবে। তারপর এগুলো তাদের পরিবারের কারো ডিএনএ'র সঙ্গে মেলাতে হবে। খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়া। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটা করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে,' যোগ করেন তিনি।

আমাদের অনুসন্ধানে খুঁজে পাওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে মাত্র ছয়টি পরিবার জানে তাদের স্বজনেরা রায়েরবাজারে শায়িত আছেন।

আমাদের সঙ্গে কথা বলা অনেক পরিবার জানেই না বেওয়ারিশ লাশ খুঁজতে আঞ্জুমান বা রায়েরবাজারে যেতে হয়। তারা পুলিশের কাছে গেছেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব কম সহায়তা পেয়েছেন।  

সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরির প্রধান আহমাদ ফেরদৌস জানান, তারা অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ১১টি লাশের ডিএনএ প্রোফাইলিং সম্পন্ন করেছেন। এদের মধ্যে নমুনা মিলিয়ে পাঁচজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু বাকি ছয়জনের পরিবার সিআইডির শরণাপন্ন না হওয়ায় তারা এখনো অজ্ঞাত রয়ে গেছেন।

অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট আরও ১০টি লাশের ডিএনএ প্রোফাইলিং বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানিয়েছেন ফেরদৌস।

এদিকে, অনেক নিখোঁজের পরিবার এখনো প্রতিদিন ঢামেকের মর্গে ধরনা দিচ্ছেন—অজ্ঞাত ছয় লাশের মধ্যে একটি হয়তো তাদের বাবা, সন্তান, ভাই বা স্বামীর—এই আশায়।

সোহেল রানার মা রাশেদা বেগম এখনো রায়েরবাজারের ব্লক চারে যান, সন্তানের কথা ভেবে চোখের পানি ফেলেন। কাউকে পেলে জিজ্ঞেস করেন, 'আমার ছেলের কবর কোনটা, বাবা?'

আসাদুল্লাহর ১০ ও চার বছর বয়সী দুই শিশুও তার স্ত্রী ফারজানা আক্তারকে জিজ্ঞেস করে যায়, 'বাবা কোথায়?'

হৃদয়, মিরাজ, সোহেল শেখদের পরিবার জানতে চায়, তারা কোথায় হারিয়ে গেলেন। তারা কি বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন? কী হয়েছিল তাদের সঙ্গে? প্রতিটি পরিবারের মনেই অসংখ্য প্রশ্ন।

রাষ্ট্রের কাছে তারা উত্তর চায়, সেই উত্তর যত কষ্টেরই হোক না কেন। এসব পরিবারের জন্য শোকের চেয়ে অনিশ্চয়তাই বেশি কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিদিন আতঙ্ক আর হতাশার মধ্যে কাটানো আসাদুল্লাহর বিধবা স্ত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, 'আমার সন্তানেরা তো জিজ্ঞেস করে, বাবা কোথায়? আমি তো তাদের বাবাকে ফেরত আনতে পারব না, তিনি কোথায় শায়িত আছেন সেটা অন্তত তাদের জানাতে চাই। যেন তারা বড় হয়ে অন্তত বাবার কবরটা জিয়ারত করতে পারে, বাবার কথা মনে করতে পারে।'

আরও যারা নিখোঁজ

টঙ্গীর সবজি বিক্রেতা সোহেল শেখ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিজয় মিছিলে যোগ দেন। হাজারো জনতার মতো রওনা হন গণভবনের দিকে।

সোহেল শেখ। ছবি: সংগৃহীত

সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার স্ত্রী আয়েশা আক্তারের কাছে একটি ফোন আসে। তাকে জানানো হয়, উত্তরা পূর্ব থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সোহেল। বিক্ষোভকারীরা সেদিন থানায় হামলার চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে সেদিন অনেক মানুষ নিহত হন।

যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি আয়েশাকে জানান সোহেলকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কারফিউর মধ্যেই পিরোজপুর থেকে আয়েশা ঢাকায় আসেন। ঢাকায় ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও ঢামেকে স্বামীর খোঁজ করেন। কিন্তু কোনো সন্ধান পান না।

তিনি ঢাকায় দুই মাসের জন্য একটি বাসা ভাড়া নিয়ে আরও কয়েক জায়গায় খোঁজ করেন।

পুলিশের কাছে যান। মামলা করতে চান। কিন্তু পুলিশ সেই মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

অবশেষে তাকে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করতে বলে উত্তরা পূর্ব থানা। সেখানে গুলির কথা উল্লেখ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

থানায় পরে যতবার যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা জানিয়েছে, সোহেলের ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।

'আমি সোহেলকে খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। তাকে খুঁজতে ঋণ করে দুই মাস ঢাকায় থেকেছি। কিন্তু কেউ আমাকে কোনো সাহায্য করেনি। এখন আমি পিরোজপুরে শ্বশুরবাড়িতে চলে এসেছি,' বলেন আয়েশা।

৫ আগস্ট আয়েশাকে যিনি ফোন করেছিলেন, তার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি আমরা।

তিনি এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন, সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তবে এরপর তার কী হয়েছে, তা কেউ জানে না।

কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মিরাজ। ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে যখন আবু সাঈদ নিহত হন, ক্ষুব্ধ মিরাজ এ নিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট লেখেন। পরদিনই আন্দোলনে যোগ দেন তিনি।

শহীদুল ইসলাম মিরাজ। ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া তার পোস্টগুলো থেকে জানা যায়, ১৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া এলাকায় আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি।

বড় ভাই মো. সাইফুল ইসলাম মিথিল অনেকবার সতর্ক করেন মিরাজকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকতে বলেন।

কিন্তু ২৭ জুলাই ভাইকে কিছু না জানিয়েই বাসা থেকে বের হন মিরাজ। এরপর আর কখনো বাড়ি ফেরেননি মিরাজ।

যাত্রাবাড়ী এলাকার অন্তত পাঁচজন আন্দোলনকারী জানিয়েছেন, তারা ৫ আগস্ট মিরাজকে যাত্রাবাড়ী থানায় দেখেছেন। কিন্তু এই পত্রিকা তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

গত সাত মাস ধরে মর্গ, থানা, আঞ্জুমান, রায়েরবাজারসহ সব জায়গায় ভাইকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন মিথিল।

ভাই বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে—সেটি শুধু জানতে চান তিনি।

এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. মারুফ। এই ১৭ বছর বয়সী ২০ জুলাই—কারফিউয়ের প্রথম দিন— মিরপুরের বাসা থেকে বের হন দুপুরের আগেই ফেরত আসবেন বলে।

এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ।

মো. মারুফ। ছবি: সংগৃহীত

৫ আগস্টের পর তার মা মৌসুমী আক্তার বহুবার থানায় গিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তাকে কোনো সহযোগিতা করেনি।

ঘটনার প্রায় চার মাস পর, নভেম্বরে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিতে রাজি হয় রূপনগর থানা।

পেশায় গৃহকর্মী মৌসুমী ছেলের সন্ধান চেয়ে বারবার থানায় ধরনা দিতে থাকলেও প্রতিবার তাকে একই কথা বলা হয়—'সময় লাগবে।'

ঘটনার ছয় মাস পর, জানুয়ারিতে একটি মামলা নিতে রাজি হয় পুলিশ। কিন্তু এরপরই মৌসুমীকে জানানো হয়, তার ছেলে আত্মহত্যা করেছে।

এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ বা মারুফের মরদেহের সন্ধান দেয়নি পুলিশ।

আমরা মিরপুরের রূপনগর থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিমকে জিজ্ঞেস করি, কিসের ভিত্তিতে মারুফ আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করছেন তারা?

জবাবে তিনি শুধু বলেন, 'মারুফ! মারুফ কে? এমন কারো কথা তো শুনিনি।'