
তারল্য সংকটে থাকা দুই ইসলামী ব্যাংককে সরাসরি সহায়তা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকা ছাপিয়ে ইসলামি ধারার সোশ্যাল ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে দেয়া হবে। আগের সপ্তাহে এসব ব্যাংক থেকে আবেদন এলে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর তাতে অনুমোদন দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিক বলেন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে দেড় হাজার কোটি টাকা ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে এক হাজার কোটি টাকার সরাসরি তারল্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এটা হাই-পাওয়ার্ড মানি কিংবা টাকা ছাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলা যায়। জামানত ছাড়াই এ তারল্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এদিকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানে ডুবতে বসেছে ব্যাংকটি।
গত বছর ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে ব্যাংক খাতেও সংস্কার শুরু হয়। ক্ষমতার পালাবদলের পর এ দুই ব্যাংকসহ সাতটি ব্যাংকের পরিচালন পরিষদের নিয়ন্ত্রণ হারায় আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপ।
সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়া হয় ড. আহসান এইচ মনসুরকে। গভর্নরের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা পরিষদের ব্যাংকগুলোয় তারল্য সহায়তা দেয়া বন্ধ করে দেন। এর পর থেকেই ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয় তীব্র তারল্য সংকট তৈরি হয়। ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে, এমন গুজবেও ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহকরা আমানত উত্তোলন করা শুরু করেন। তখন এসব ব্যাংকের তারল্যের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হয়। এমন অবস্থায় সে সময় প্রথমে আন্তঃব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নেয়ার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এটা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ২০২৪ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছয় ব্যাংকে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেয়া হয়।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে তিনি এও দাবি করেছিলেন একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরাসরি তারল্য সহায়তা দেয়া হয়েছে, যা ছাপা টাকার সমতুল্য, আবার এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের’ মাধ্যমে এসব টাকা ব্যাংকগুলো থেকে উঠিয়ে নিচ্ছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম), আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তার জামাতা বেলাল আহমেদ। নভেম্বরে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার সহায়তা দেয়ার পর আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহায়তা নিয়েছিল এসব ব্যাংক। এর মধ্যে এসআইবিএলকে ৫ হাজার ৫০০ কোটি এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টাকা ছাপিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংককে পাঁচ হাজার কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংককে দুই হাজার কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংককে ২০০ কোটি, আইসিবি ইসলামী ব্যাংককে ১০ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ২ হাজার কোটি, এক্সিম ব্যাংককে আট হাজার ৫০০ কোটি এবং এবি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা ধার দেয়া হয়েছে।
যদিও এস আলম থেকে এই ব্যাংক দুটি উদ্ধার করা গেলে এখানে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাও এস আলম থেকে কম নয়। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে একটি নিজস্ব বলয় তৈরী করেছেন। খরচ কমানোর কথা বলে একদিকে ৫৪৫ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছেন। অপরদিকে ইসলামী ব্যাংক থেকে তার বিভিন্ন সহযোগীদের ২-৪টি প্রমোশন দিয়ে দ্বিগুন বেতনে নিয়ে এসেছেন এই ব্যাংকে। যখন ব্যাংকটি গ্রহাককে ৫ হাজার টাকা আমানত দিতে হিমশিম খাচ্ছিল তখন এসব কর্মকর্তাদের প্রত্যেককে কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিয়েছেন। আবার ইসলামী ব্যাংকের একাধিক অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের (যাদের অনেকে ২ বছর কৃষি কাজও করেছেন) নিয়োগ দিয়ে বড় বড় পদে বসিয়েছেন। যার ফলাফল শূণ্য। ব্যাংকটির জিএসডি, মার্কেটিং, ট্রেনিং ইন্সটিটিউট থেকে শুরু করে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজস্ব লোক বসিয়ে কমিশন বাণিজ্য করছেন। একই সঙ্গে ব্যাংকের কনস্ট্রাকশন, ইক্যুইপমেন্ট বিজ্ঞাপনের এর ক্ষেত্রে তিনি নিজস্ব প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এদিকে প্রতি সপ্তাহে ১টি নির্দিষ্ট দলের লোকবল নিয়োগ দিচ্ছেন আব্দুল মান্নান। অথচ অনেককে চাকরিচ্যুত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।