Image description

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় পুলিশের একটি চেকপোস্ট রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেও চলছিল চেকপোস্টে তল্লাশি। বৃহস্পতিবার রাত তখন আনুমানিক ২টা। তখন ওই চেকপোস্ট পার হচ্ছিল সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার। পুলিশ সেটি থামিয়ে তল্লাশি শুরু করে। পেছনের ঢাকনা খুলতেই ব্যাগে দেখা যায় সারি সারি টাকার বান্ডিল!

ঘটনা সেখানেই শেষ নয়। চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা গাড়িতে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খবর দেন। তখন গাড়িতে থাকা আরোহী নিজেকে পরিচয় দেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে। কিছুটা হম্বিতম্বিও করেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও ঘটনাস্থলে আসে যৌথ বাহিনী। টাকাসহ ওই ব্যক্তিকে হেফাজতে নেওয়ার পর নিজের নাম জানান মো. ছাবিউল ইসলাম। তিনি গাইবান্ধা জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডির) নির্বাহী প্রকৌশলী।

তবে তিনি গভীর রাতে এত টাকা নিয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন—সে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও জবাব দিয়েছেন, টাকাগুলো তার জমি বিক্রির; কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত তার দাবির পক্ষে প্রমাণ হাতে পায়নি পুলিশ।

 

এদিকে বিপুল অঙ্কের টাকাসহ নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলামকে আটকের বিষয়ে তার কর্মস্থল গাইবান্ধাতে তোলপাড় চলছে। তার অফিসের লোকজনই বলাবলি করছেন, ‘এবার স্যার ধরা খাইছে।’ গাইবান্ধা এলজিইডি অফিসের সূত্রগুলো বলছে, প্রতি বৃহস্পতিবার রাতেই এই নির্বাহী প্রকৌশলী সন্দেহজনক ব্যাগ ভরে রাজশাহী সদরে নিজের বাড়িতে যান।

 
 

গাইবান্ধার লোকজন বলছেন, এলজিইডির এই কর্মকর্তা দীর্ঘ ২১ বছর ধরে গাইবান্ধায় কর্মরত। সেখানকার ঠিকাদার থেকে শুরু করে পতিত আওয়ামী লীগের লোকজন তাকে চেনেন প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার পালক ছেলে হিসেবে। সেই দাপট দেখিয়ে তিনি ঠিকারদারদের কাছ থেকে নিয়মিতই অবৈধ সুবিধা নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তার অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ্যে থাকলেও এতদিন তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেনি কেউ।

 

বৃহস্পতিবার গভীর রাতের অভিযানের বিষয়ে সিংড়া থানার ওসি মো. আসমাউল হক জানান, প্রতি রাতের মতো বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তাদের একটি দল নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি করছিল। ওই সময় গাইবান্ধা থেকে রাজশাহীগামী একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকারকে থামানোর জন্য সিগন্যাল দেওয়া হয়। পরে ওই গাড়িটি তল্লাশির সময়ে ওই গাড়ির ব্যাক ডালায় বিপুল টাকা পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশের যৌথ টিম ঘটনাস্থলে যায় এবং অভিযান চালায়।

ওসি বলেন, এলজিইডির প্রকৌশলী পরিচয়দানকারী ছাবিউল ইসলাম পুলিশের কাছে অসংলগ্ন তথ্য দেওয়ায় তাকে টাকাসহ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে তাকে আটকের পর বিষয়টি দুদকের সিডিউলভুক্ত হওয়ায় আদালতের মাধ্যমে দুদকে হস্তান্তর করা হয়েছে। টাকাগুলো জব্দ রেখে ওই প্রকৌশলীকে স্বজনদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। বৈধ প্রমাণ দেখাতে না পারলে দুদক ব্যবস্থা নেবে।

নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একরামুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, তল্লাশির সময় গাড়িতে থাকা ব্যক্তি গাইবান্ধার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পরিচয় দেন। তবে গাড়িতে বিপুল অঙ্কের টাকা পাওয়ায় স্থানীয় থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

পুলিশের হাতে আটক ছাবিউল ইসলাম দাবি করেন, জমি বিক্রির বৈধ টাকা নিয়ে তিনি গাইবান্ধা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিলেন।

গাইবান্ধা এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হাসনাইন মো. হেইকেল কালবেলাকে বলেন, ‘স্যার বৃহস্পতিবার হলেই সাদা গাড়ি নিয়ে তার বাড়ি যান। তিনি এত টাকা কই পেয়েছেন তা তিনি জানেন না।’

গাইবান্ধা এলজিইডির এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, পাঁচ দিন অফিস করে ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন নেন নির্বাহী প্রকৌশলী। সেগুলো গাড়িতে করে বাড়ি নিয়ে যান। অফিসে চোখের সামনে কোটি টাকার খেলা হয়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসের বাইরেও রিয়াজ নামে এক লোককে ব্যক্তিগত অর্থায়নে সহকারী হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছেন। সব সময় তিনি ঘুষ নিলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতেন। এবার তিনি ধরা খাইছেন।