
কিডনি প্রতিস্থাপন করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন বিশিষ্ট কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা: মো: কামরুল ইসলাম। তিনি গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত একাই এক হাজার ৮০০ কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। সিকেডি হাসপাতাল সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তিনি রাজধানীর শ্যামলীর সিকেডি ইউরোলজি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করে থাকেন। হাসপাতালের প্রধান ফটকে সিকেডি লেখা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটা সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল। এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা: মো: কামরুল ইসলাম নিজেই।
তিনি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রোগীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেন না, এটা বিনামূল্যেই করে থাকেন। ফলে অনেক স্বল্প মূল্যে মানুষ সফলতার সাথে কিডনি প্রতিস্থাপনের সেবা নিতে পারছেন। প্রতিস্থাপন বিনামূল্যে করে থাকেন ‘মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি দায়িত্ব’ পালন হিসেবে। তিনি মনে করেন, এই জ্ঞানটা আল্লাহ তাকে দিয়েছেন আর তা তিনি মানুষের সেবায় কাজে লাগাচ্ছেন। অধ্যাপক ডা: কামরুল ইসলাম বলেন, সিকেডির প্রতি আস্থা রাখায় রোগীদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।’
এর আগে ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত এক হাজার ৩০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত অধ্যাপক ডা: কামরুল ইসলাম ১ হাজার ৪০০ কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন করেন। ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যেই তিনি দেড় হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক স্পর্শ করেন। প্রথম এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনে এই সার্জনের ১৪ বছর লাগলেও পরবর্তী ২৬ মাসে সফলতার সাথে ৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করে ফেলেন। ১০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট থেকে একই বছরের ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর ১২০০তম রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করেন প্রখ্যাত এই চিকিৎসক।
অধ্যাপক ডা: কামরুল ইসলাম ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করে আসছেন। সাফল্যের হার শতকরা ৯৫ শতাংশ। পৃথিবীর যেসব দেশে সফলতার সাথে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় অধ্যাপক কামরুল ইসলাম সেই আন্তর্জাতিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জনদের সমপর্যায়ের একজন এবং দক্ষতার সাথে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করছেন। অধ্যাপক কামরুল ইসলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কে-৪০ ব্যাচের শিক্ষার্থী। ১৯৯৩ সালে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের (কিডনি হাসপাতাল) সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রতিষ্ঠা করেন সিকেডি হাসপাতাল। শেরেবাংলা নগরের কিডনি হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে তিনি কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু করলেও তার সফলতার কাক্সিক্ষত স্বীকৃতি তিনি পাননি। দলীয় লোকজন পদোন্নতি পেলেও তিনি দলবাজ ছিলেন না বলে তাকে যথাযথ মর্যাদা দেয়া হয়নি। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেখানেও দলবাজদের দৌরাত্ম্যের কারণে যেতে পারেননি। পরে তিনি নিজেই শ্যামলীতে সিকেডি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় অবদান রাখার জন্য ২০২২ সালে অধ্যাপক ডা: কামরুল ইসলামকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়।