Image description

কারাগার একটি বিশেষ আবাসস্থল, যেখানে আসামিরা অবস্থান করেন। এখানে বন্দিরা স্বাভাবিকভাবে মৌলিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন না। তবে রাজধানী ঢাকায় রমজানের ইফতারে কারাগারগুলো চরম সাম্যবাদী হয়ে ওঠে। ইফতারে রাজা-প্রজা সবাই সমান

ইফতারে রাজা-প্রজা সবাই সমান কারাগারে। হালে চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসীসহ নানা ধরনের অপরাধীর সঙ্গে কারাগারে রয়েছেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, বড় বড় আমলাও। তাঁদের বেশির ভাগই রোজা রাখছেন। সেই রোজাদারদের জন্য কারা কর্তৃপক্ষেরও ইফতার ও সাহরি আয়োজনের ডামাডোল চলে প্রতিদিন এবং সবাইকে একই ইফতারি খেতে দেওয়া হচ্ছে। এখানে রাজা-প্রজা বলে আলাদা বিবেচনা নেই।

জেলের ইফতারে সবাই সমানখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন আট হাজার ৭৫২ জন। সেই বন্দিদের জন্য প্রতিদিন সকাল থেকেই ছোলা, পিঁয়াজু, জিলাপি, শরবত বানানো থেকে শুরু করে অনেক ধরনের আয়োজন করা হয়। আর দুপুর থেকেই সেই ইফতারি বিতরণ শুরু হয়। বন্দিরাও নামাজ, কোরআন তিলাওয়াতসহ ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করছেন।

সাধারণ ওয়ার্ডে বন্দিরা জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন; কিন্তু যেসব বন্দিকে একা রাখা হয়, তাঁরা একা একাই নামাজ পড়েন বলে সূত্র জানায়। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানে কারা কর্তৃপক্ষ বন্দিদের ওজু ও গোসলের জন্য পানি সুবিধাসহ সব বিষয়ে বেশি খেয়াল রাখে।   

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, শাজাহান খান, আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিনসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শতাধিক ভিআইপি বন্দি। তাঁরা প্রত্যেকেই রোজা রাখছেন। কেউ কেউ কোরআন তিলাওয়াত ও ধর্মীয় বই পড়ে সময় কাটাচ্ছেন।

বন্দি মন্ত্রী ও এমপিদের কথায় একসময় দেশ চলত। বন্দি থাকায় তাঁদেরই এখন ইফতারি খেতে হচ্ছে মেলামাইনের প্লেটে। এক কারা কর্মকর্তা বলেন, ইফতারের ক্ষেত্রে ভিআইপি থেকে শুরু করে সাধারণ বন্দিদের একই ইফতারি দেওয়া হয়। মন্ত্রী ও এমপিদের মেলামাইনের আলাদা প্লেটে ইফতারি দেওয়া হয়। তাঁরা একা একা ইফতার করার সুযোগ পান। আবার কেউ চাইলে একসঙ্গে দু-তিনজন করিডরে বসে ইফতারি খেতে পারেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা আলাদাই ইফতার করছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে সাধারণ বন্দিরা ওয়ার্ডে থাকার কারণে তাঁরা বড় গামলার মধ্যে ইফতারি নিয়ে একসঙ্গে খাওয়ার সুযোগ পান। যে পরিমাণ ইফতারি দেওয়া হয় তাতে প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত বলে জানান এক কর্মকর্তা। প্রত্যেক বন্দির জন্য প্রতিদিন ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, জিলাপি, তিনটি খেজুর, একটি সাগর কলা, শরবত এবং একটি ডিম দেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজনস মো. জাহাঙ্গীর কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ইফতারের ক্ষেত্রে সব বন্দিকে একই ধরনের ইফতারি দেওয়া হয়। যেসব বন্দি রোজা রাখেন, তাঁদের জন্য আলাদা রান্না করা হয়। সাহরিতে গরম খাবার খেতে পারেন রোজাদার বন্দিরা। তিনি আরো বলেন, সময়মতো ইফতারি পৌঁছে দেওয়া কারা কর্তৃপক্ষের অপরিহার্য দায়িত্ব। এই দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট সবাই পালন করে থাকেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিদিন আমাদের আট হাজারের বেশি বন্দিকে ইফতার ও সাহরি করাতে হচ্ছে। আমাদের সিস্টেম দাঁড় করানো আছে, কোনো সমস্যা হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ দিনের চেয়ে রোজার দিনে ইফতারি আইটেম বেশি থাকে। এ কারণে বিতরণ করতে সময় একটু বেশি লাগে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারাগারে থাকা অমুসলিম, অসুস্থ এবং যাঁরা রোজা রাখতে পারেন না, সেই বন্দিদের আলাদা তালিকা করে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। তবে বন্দিদের ৯০ শতাংশের বেশি রোজা রাখেন।

কারা কর্মকর্তারা জানান, সাড়ে আট হাজারের বেশি মানুষের ইফতারি বানানোও একটি কঠিন কাজ। ফলে সকাল থেকেই ছোলা, পিঁয়াজু ভাজা থেকে শুরু করে সব কাজ করা শুরু হয়। দুপুর ১২টা থেকেই ইফতারি বিতরণ শুরু হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডের একজন করে প্রতিনিধি ইফতারি নিতে আসেন। তাতেও আড়াই শর বেশি প্রতিনিধিকে লাইন ধরে নিজ ওয়ার্ডের জন্য ইফতারি নিতে হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২৫ থেকে ৩০ জন বন্দি থাকেন।