
‘আমার ছেলেটা নিখোঁজ হইছে আজ ৭ দিন। ছেলেটাকে খুঁজতে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে ঘুরতাছি। কিন্তু কেউ কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করছে না। কেউ আমার ছেলেকে খোঁজে না’- আজ শুক্রবার নিজ বাড়িতে এভাবে কথাগুলো বলে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন নেত্রকোনার খালিয়াজুরী রসূলপুর ঘাটে সংঘর্ষে নিখোঁজ ইয়াসিনের মা সুলতানা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমার ছেলেও তো এই দেশের নাগরিক। তাহলে আমার ছেলেকে খুঁজতে কেউ সাহায্য করে না কেন? জীবিত অথবা মৃত তোমরা কেউ আমার ছেলেকে এনে দাও।’
জানা যায়, নিখোঁজ ইয়াসিন মিয়া (২০) মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের রূপচান মিয়ার ছেলে।
এ ঘটনায় ইয়াসিনের মামা (১০ মার্চ) মদন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কিন্তু স্বজনদের অভিযোগ, নিখোঁজের পর থেকে পুলিশ প্রশাসনের কাছে বার বার গিয়েও কোনো সহযোগিতা মিলছে না।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাছ শিকারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালিয়াজুরির বিভিন্ন জলমহালে পলো দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন। গত শনিবার সকালে সহস্রাধিক মাছশিকারি পলো নিয়ে একটি জলমহালের মাছ শিকার করতে যান। মাছশিকারিরা ধনু নদের রসুলপুর ঘাটে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ রেখে নদ পার হতে ফেরি নৌকায় যেতে চাইলে রসুলপুর গ্রামের লোকজন তাঁদের বাধা দেন।
এ ছাড়া যানবাহন ভাঙচুরসহ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ৪ ব্যক্তি নিখোঁজ হন। সংঘর্ষের ৩ দিন পর ধনু নদ থেকে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোনার মর্গে পাঠায় লিপসার পুলিশ ফাঁড়ির নৌ পুলিশ।
নিহতরা হলেন, মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের মৃত আব্দুল কদ্দুছের ছেলে রোকন মিয়া (৪৮), আটপাড়া উপজেলার রূপচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে শহিদ মিয়া (৫০) ও কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে হৃদয় মিয়া (২৮)।
নিহত রোকন মিয়ার ভাই খোকন মিয়া জানান, ‘আমার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করে ধনু নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। জগ্ননাথপুর ও রসূলপুর লোকজনের জন্য লাশটি খুঁজতে পর্যন্ত যেতে পারিনি। সোমবার ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। আমরা হত্যা মামলা করব।’
নিখোঁজ ইয়াসিনের মামা জুলহাস মিয়া জানান, ‘ঘটনার পরদিন আমি খালিয়াজুরী থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। তাই নেতাকর্মীদের অনুরোধ করে মদন থানায় ডায়েরি করেছি। জীবিত অথবা মৃত যেই অবস্থায় হোক আমরা ইয়াসিনের সন্ধান চাই।’
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মোহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, ‘গত শনিবার খালিয়াজুরী উপজেলার রসূলপুর ফেরিঘাটে সংঘর্ষে ইয়াসিন নামের একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনাটি যেহেতু খালিয়াজুরী থানায় তাই ওই থানার পুলিশ বিষয়টির ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ইয়াসিনের স্বজনরা খালিয়াজুরী থানায় যায়নি। তবে এ ঘটনায় মদন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মকবুল হোসেন জানান, ‘সংঘর্ষের পর তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এর রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইয়াসিনের নিখোঁজের ব্যাপারে থানায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।’