
মাস দুয়েকের ব্যবধানে রাজধানীতে আরেক দফা বেড়েছে চালের দাম; আর শীতকালীন অল্প কিছু বাদে অন্যান্য সবজির বাজারও চড়া।
স্থিতিশীল বলতে কেবল মশলার বাজার; পেঁয়াজ-কাঁচামরিচ কিংবা আদা-রসুনের মত পণ্য মিলছে আগের দরেই।
শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার ও ‘সাততলা’ এলাকার বটতলা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে আট টাকা।
চালের বাড়তি দাম নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন ক্রেতারা। বিক্রেতাদের বক্তব্য, চালের দাম মিল পর্যায়েই বেড়ে গেছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারের ‘চাঁদপুর ট্রেডার্সের’ বিক্রেতা আলিফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আঠাশ আর পাইজাম ছাড়া সব চালের দাম ২ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে।
“মিল পর্যায়েই দাম বেড়ে গেছে, তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গেল সপ্তাহে রশিদ মিনিকেট (অপেক্ষাকৃত মোটা) চালের কেজি ছিল ৭৬ থেকে ৭৮ টাকার মধ্যে। এ সপ্তাহে সে চালের দাম হয়েছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা।
আর মোজাম্মেল মিনিকেট (অপেক্ষাকৃত সরু) গেল সপ্তাহে বিক্রি হয় ৯২ থেকে ৯৫ টাকায়। এ সপ্তাহে সেটি ১০০ টাকাও নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীতে গেল সপ্তাহে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় মিনিকেট চালের দামও কেজিতে বেড়েছে দুই টাকার মত।
শুধু আঠাশ আর পাইজামের কেজি গত সপ্তাহের মত ৬০ থেকে ৬২ টাকাতেই মিলছে।
গেল সপ্তাহে নাজিরশাইল চালের (মোটা) কেজি বিক্রি হয় ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। এ সপ্তাহে ৭২ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
আর চিকন নাজিরশাইল গেল সপ্তাহে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে হয়েছে ৭৬ থেকে ৮০ টাকা।
দাম বেড়েছে ‘গরিবের’ মোটা চালেরও। গেল সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া চাল এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়।
কাঁচাবাজারের চেয়ে রাজধানীর পাড়া-মহল্লার দোকানে চালের দাম অবশ্য কেজিতে আরও দু-চার টাকা বেশি।
দামের এ হেরফের সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাখালীর সাততলা এলাকার বটতলা বাজারের ‘রিপা ট্রেডার্সের’ বিক্রেতা ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু চাল যারা বিক্রি করেন কারওয়ানবাজার বা মহাখালী কাঁচাবাজারে, তাদের তুলনায় স্থানীয় মুদি দোকানে দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেশি।
“কারণ আমরা অত বেশি পরিমাণে চাল কিনি না। আবার নিয়ে আসারও একটা খরচ আছে। এজন্য দামের সামান্য হেরফের হয়।”
মহাখালী বাজারে চাল কিনতে এসেছিলেন একটি বহুজাতিক কোম্পানির চাকুরে সুনিপুণ বিশ্বাস। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিন দিন আগে মোজাম্মেল মিনিকেট নিলাম ৯৪ টাকায়। আজ শুনি ১০০ টাকা। এখন মনে হচ্ছে বস্তা না কিনে ভুলই করলাম।”
ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে
গেল ৮ মার্চ ভারত থেকে সরকারিভাবে আমদানি করা ৬ হাজার টন সেদ্ধ চালের একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে।
এর আগে ৫ মার্চ বুধবার পাকিস্তানের কাসিম বন্দর থেকে আসে ২৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আতপ চাল।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ‘জিটুজি’ ভিত্তিতে আমদানির চুক্তি হওয়া ৫০ হাজার মেট্রিক টন চালের প্রথম চালান এটি।
আগামী ১০ মার্চ নাগাদ পাকিস্তানি চালের দ্বিতীয় চালান বাংলাদেশে আসার কথা।
রোজার আগে উত্তাপ ছড়ানো বেগুনের দাম এখনও কমেনি। তবে শসা আর লেবুর দাম কমেছে।
দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এর আগে জিটুজি ভিত্তিতে মিয়ানমার থেকেও চাল আমদানি করা হয়।
এসব উদ্যোগের পরও বাজারে কেন চালের দাম বাড়ল, তা জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এ এম লায়েক আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। তাই চালের দামও বেড়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাবও আছে।
“অনেকেই যাচাই-বাছাই না করে মিল মালিকদের ওপর দোষ চাপান। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারের তরফে নিয়মিত ধান-চালের বাজার তদারকি করা হচ্ছে। সব কিছু আধুনিক পদ্ধতিতে হচ্ছে। এখানে মিল মালিকদের মজুদ করে রাখার কোনো সুযোগ নেই।”
এ ব্যবসায়ী নেতা পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন, “রোজার আগে যখন চালের দাম কমতে-কমতে বিক্রিই কমে গেল, তখন তো নিউজ করলেন না। আপনারা শুধু দাম বাড়লেই নিউজ করেন। আপনারা মফস্বল পর্যায়ে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন দাম কেনো বেড়েছে।”
চড়ছে সবজির বাজারও
শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হলেও বাজারে এখনও শিম, ফুলকপি, টমেটো, বাঁধাকপি, শালগমের মতো কিছু পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। দামও কম।
তবে গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম চড়া। রোজার আগে উত্তাপ ছড়ানো বেগুনের দাম এখনো কমেনি। তবে শসা আর লেবুর দাম কমেছে।
বাজারে বড় সাইজের গোল বেগুন ১২০ টাকা ও লম্বা বেগুন ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শসার কেজি ১০ টাকা কমে ৬০ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। লেবুর হালি মিলছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
শীতকালীন সবজির মধ্যে শিমের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শালগম ৫০, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ এবং একেকটি ফুলকপি কিংবা বাঁধাকপি আকৃতিভেদে মিলছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে ঢেঁড়স ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১১০ টাকায়, পটল ১০০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর মুখী ১২০ টাকা, কচুর লতি ১২০ টাকা ও ঝিঙার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে।
কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও ক্ষীরার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারে ধনে পাতার কেজি গড়ে ১৪০ টাকা, ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা, একেকটি মিষ্টি কুমড়া ৮০ টাকা এবং কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শীতকালীন সবজি কমে গেছে; মৌসুম শেষ প্রায়। গ্রীষ্মকালীন সবজি বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে। এজন্য দাম একটু বেশি। সরবরাহ বাড়লেই দাম কমে যাবে।”
বাজারে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। নতুন আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর বগুড়ার লাল আলুর কেজি ৩৫ টাকা।
রাজধানীর কাঁচাবাজারগেুলোয় শুক্রবার ভুট্টার বেসনের কেজি ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে।
মশলাজাতীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল
বাজারে মশলাজাতীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ সংকট না থাকায় এসব পণ্যের দাম বাড়েনি।
বাজারে পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, আদা ১৪০ থেকে ২৮০, দেশি রসুন ১০০ ও ভারতীয় রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ছোলার কেজি আগের মতই ১০০ থেকে ১১০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ভারতীয় মশুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা ও খেসারির ডাল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ভুট্টার বেসনের কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। অ্যাংকরের বেসন মিলছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আর চিনির কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।
মহাখালী কাঁচাবাজারের ‘মাসুমা জেনারেল স্টোরের' বিক্রেতা আল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে এসব পণ্যের সংকট নেই। এজন্য অন্যান্যবারের মত দাম বাড়েনি। তেল ছাড়া অন্যান্য মুদি পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।”