Image description
আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব

নিহত সাইফুল সরদার ছিলেন মাদারীপুরের খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই পদ ব্যবহার করে এলাকায় হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। নিজের চাচা হোসেন সরদারকে গত বছর হাতুড়িপেটা করে পঙ্গু করে দেন। হোসেনও ছিলেন আওয়ামী লীগের লোক। শনিবার দুপুরে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে সাইফুলসহ তিনজন নিহত হয়। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই মাদারীপুর সদর থানায় নিহতের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে হোসেন সরদারকে প্রধান আসামি করে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

সরজমিন জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার খোয়াজপুরে কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল সাইফুল। গত বছর খোয়াজপুর এলাকার বালু ব্যবসায়ী হোসেন সরদারকে (৬০) প্রকাশ্যে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেন তিনি। এলাকায় সালিশ মীমাংসায় প্রভাব বিস্তার করতেন সাইফুল। অভিযোগ রয়েছে- মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা ও প্রভাব বিস্তার করে হাটের ইজারা নিয়েছিলেন তিনি। এলাকায় হিটার সাইফুল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সদর থানায় এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে। কিছুদিন জেল খেটে আবার শুরু করতেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এসব ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই হোসেনের নেতৃত্বে সাইফুল গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান। শনিবার সাইফুল (৩৫), তার ভাই আতাউর সরদার (৪০) এবং চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দু’ভাগে বিভক্ত ছিল জেলা আওয়ামী লীগ। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এবং অপরপক্ষের নেতৃত্ব দিতেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম। সাইফুল নাসিম সমর্থিত খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আর হোসেন ছিলেন শাজাহান খান সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেট ও খোয়াজপুর-টেকেরহাট বাজারের ইজারা দখল নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। গত বছরের পা ভাঙার প্রতিশোধ ও পুরো সিন্ডিকেট দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন হোসেন সরদার। এ নিয়ে মাসখানেক আগে দু’গ্রুপের মধ্যে হামলা ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটে। শনিবার সাইফুল ও তার ভাই আতাউর সরদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে হোসেন সরদারের লোকজন। গুরুতর আহত হয় আরেক ভাই অলিল সরদার ও চাচাতো ভাই পলাশ সরদার (১৫)সহ আটজন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পলাশের মৃত্যু হয়।

সাইফুলের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানান, এক সময় এলাকায় খুব প্রভাব ছিল সাইফুলের। বিভিন্ন বিচার সালিশিও করতেন তিনি। মানুষ তার কথা মানতো। সম্প্রতি সাইফুল লোকজন নিয়ে হোসেনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে তার লোকজনকে মারধর করে। হোসেনের লোকজন আবার সাইফুলের এক মামাকে তুলে নিয়ে মারধর করে। সেই ঘটনা মাসখানেক আগে মীমাংসাও হয়ে গেছে। নিহতের স্ত্রী জানান, আমার স্বামী ড্রেজারের ব্যবসা করতো। সরকারের কাছ থেকে হাট ইজারা নিয়েছিল। হাট ঘাট ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেয়ার জন্য তারা তাকে হত্যা করেছে। হোসেন জমি বিক্রি করে এলাকার সমস্ত লোকজন নিয়ে রামদা, সেনদা-অস্ত্রশস্ত্র্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়ির তিন দিক থেকে আক্রমণ করে। আমরা পালানোর চেষ্টা করি। পরে আমাদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করে আগুন দিয়ে দেয়। আমার স্বামীসহ আমার দুই ভাসুরকে মেরে ফেলে। ছোট ভাই পলাশকেও মেরে ফেলে। 

এ বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বালু ব্যবসা ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই ঘটেছে। এই মামলার ভিকটিম সাইফুল তার বংশীয় চাচা হোসেন সরদারকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেন। সেই ঘটনায় মামলা হলে জেলা পুলিশ তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মূলত বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।