
গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে গত ৪ঠা আগস্ট নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। গুলিতে নিহত হয়েছেন একজন আন্দোলনকারী। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গুলি করা ব্যক্তি ছিলেন বেগমগঞ্জ উপজেলার ১২ নং কুতুবপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতা শেখ মো. রাসেল। যিনি ওই এলাকার এমপি মামুনুর রশীদ কিরণের ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জিহান আল-রশিদের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। ছাত্রহত্যায় অভিযুক্ত সেই রাসেলই এখন জুলাই আন্দোলনে আহতদের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও তার নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ছাত্র হত্যায় অভিযুক্তকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।
সূত্রমতে, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের তৎকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রাসেল ছাত্রলীগের ঘোষিত ‘৭ মিনিটের আন্দোলন’-এ যোগ দিয়ে ৪ঠা আগস্টে চৌমুহুনী চৌরাস্তার মোড়ে বিভিন্ন গাড়ি থেকে লোক নামিয়ে ফেসবুক আইডি চেক করেন। এসময় আন্দোলনে সম্পৃক্ততা পেলে করা হয় নির্যাতন। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে চৌমুহুনী বাজারে ‘নাইস হোম কনস্ট্রাকশন’ মালিক ইঞ্জি. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শেখ রাসেল কুতুবপুরের ত্রাস। সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ প্রকাশ্যে জুলাই আন্দোলনের ছাত্র-জনতাকে হুমকি, মারধর সহ নানা অপরাধে জড়িত। গত ৪ঠা আগস্ট সকাল ১১টা বাজে আমি সহ আন্দোলনকারীরা মাইজদী থেকে এখলাছপুর যাচ্ছিলাম। এমন সময় শেখ রাসেল ও তার বাহিনী আমাদের উপর হামলা চালায়। আমরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় রাসেল ও তার সহযোগীরা জালাল উদ্দিন স্কুলের দীঘির পাড় দিয়ে দৌড়ে পলায়ন করে। কিন্তু ছাত্র- জনতার ইট ও লাঠির আঘাতে রাসেল কিছুটা আহত হলেও দৌড়ে পালাতে সক্ষম হয়। সেই আহত হওয়ার চিকিৎসাপত্র দেখিয়ে সরকারিভাবে আহতদের তালিকায় স্থান পায়। এমনকি স্থানীয় ডিসি অফিসের মাধ্যমে তার আহত হওয়ার কোনো তদন্তই করা হয়নি। এতে সাবেক এমপি’র প্রভাব থাকতে পারে। কারণ এখনো ফ্যাসিস্টের লোক বিভিন্ন সরকারি পদ দখল করে আছে।
কাজীর হাট বাজারের থাই গ্লাসের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান মানবজমিনকে বলেন, শেখ রাসেল উচ্ছৃঙ্খল ছেলে। হাসিনা সরকারের আমলে তার এলাকায় সামান্য খেলা নিয়ে ঝগড়া করে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে। স্থানীয় এমপি’র প্রভাব থাকায় সে ঘটনায় মামলা হলেও তাকে কেউ অ্যারেস্ট করার সাহস পায়নি। জুলাই আন্দোলনেও সে আওয়ামী লীগের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন ছাত্রকে ডেকে নিয়ে মারধরও করে আন্দোলনে না যেতে। সর্বশেষ ৪ঠা আগস্ট সে হামলা চালালে ছাত্র-জনতা প্রতিরোধ গড়লে সে সামান্য আহত হলেও পালাতে সক্ষম হয়। কিন্তু এখন সে সরকারিভাবে আহতদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। আমার মনে হয় সে ভাতা পাওয়ার জন্য নয়, নিহত এবং আহতদের তালিকাকে বিতর্কিত করতেই এই কাজ করেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে মেহেদী বলেন অবিলম্বে তাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হোক। পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মো. মশিউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদ এবং আহতদের ভাতা দেয়া সংক্রান্ত গেজেটের তালিকা সিভিল সার্জন অফিস, ডিসি অফিস এবং বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে করা হয়েছে। কেউ যদি এসব জায়গায় ভুল তথ্য দিয়ে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় সেটার দায় আমার না। এখনো খুলনা ও রংপুর বিভাগের গেজেট বাকি আছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু প্রকৃত আহত বাদ যাবে আর ভুয়া আহত তালিকায় নাম দিয়ে দিবে এমনটা যেন না হয় সেটা আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সকল জেলার গেজেট হয়ে গেলে পরবর্তী মিটিং এ আমি বিষয়টি উত্থাপন করবো তখন এটা সমাধানের সিদ্ধান্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।