
নেত্রকোনার কলমাকান্দায় কৃষকের কাছ থেকে ঘুষ না পেয়ে জমির সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এতে প্রায় ২০ একর জমির বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী হুমায়ূন কবীর নামের এক কৃষক আদালতে মামলা করলেও সুরাহা হয়নি।
তবে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার দাবি, তিনি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে কোনো টাকা চাননি। বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগের জন্য কোনো আবেদনও করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কলমাকান্দা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, খারনৈ ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর বৈঠাখালী গ্রামের কৃষক হুমায়ূন কবীর ২০২০ সাল থেকে কৃষি কাজে সেচ সংযোগ চালু করে আসছিলেন। এর আওতায় নিজের জমির পাশাপাশি এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষকের প্রায় ২০ একর জমিতে সেচকাজ পরিচালনা করেন। তিন বছর আগে একই গ্রামের হুজায়েল মুন্সী অন্য একটি সেচ সংযোগের আবেদন করেন। হুজায়েলের স্থাপন করা সেচ ৮০০ মিটারের ভেতরে হওয়ার অভিযোগ তুলে হুমায়ুন কবীর উপজেলা সেচ কমিটির কাছে অভিযোগ করেন। এরপর থেকে হুজায়েল সংযোগ পাননি। এদিকে, গত এপ্রিলে হুমায়ূনের বিদ্যুৎ বিল ৮ হাজার ৬৯৩ টাকা বয়েকা থাকে। কিন্তু পরের মাসে তিনি বিল পরিশোধ করলেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি।
হুমায়ূনের অভিযোগ, কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) তাপস দেবনাথ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য তার কাছে ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। উৎকোচের টাকা না দেওয়ায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে হুমায়ূন গত ৩ ফেব্রুয়ারি সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। এতে কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম এবং ডিজিএমকে বিবাদী করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জবাব না দেওয়ায় আদালত গত ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি পাঁচ দিনের মধ্যে সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি।
এদিকে, বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে স্থানীয় বৈঠাখালী খাল কৃষকরা স্যালো মেশিন দিয়ে পানি সরবরাহ করে প্রায় ১২ একর জমিতে বোরো আবাদ করেন। সম্প্রতি খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মেশিনেও পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, সীমান্ত সংলগ্ন বৈঠাখালী খালটি পানিশূন্য। পানির অভাবে ধানের চারাগুলো ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে।
গ্রামের কৃষক রতন মিয়া বলেন, আমি ২০০ শতাংশ জমিতে খাল থেকে পানি নিয়ে ধান করেছি। খালের পানি এখন শুকিয়ে গেছে। গত তিন দিন ধরে পানি না দেওয়ায় ধান গাছ ধূসর হয়ে যাচ্ছে। সেচে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ না দিলে ফসল রক্ষা করা যাবে না।
তার মতো গ্রামের ডজনখানেক কৃষক একই কথা বলেন।
হুমায়ূন কবীর বলেন, বকেয়া বিল পরিশোধ করে পুনঃসংযোগের আবেদন করতে গেলে আবেদন না নিয়ে এজিএম তাপস দেবনাথ ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষের টাকা না দেওয়ায় সংযোগটি এখনো দিচ্ছেন না। উল্টো শর্ত দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিলে সংযোগ দেওয়া হবে।
হুমায়ূনের আইনজীবী সুরঞ্জন দাস বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালত এক আদেশে পাঁচ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তাপস দেবনাথ বলেন, বিদ্যৎ পুনঃসংযোগে কোনো টাকা চাওয়া হয়নি। হুমায়ূন কবীরকে আমি কখনো দেখিনি। আসলে পুনঃসংযোগের আবেদন করাই হয়নি।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মাসুম আহমেদ কালবেলাকে বলেন, এলাকাটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, কোনো অবস্থাতেই কৃষি জমি পতিত রাখা যাবে না। খোঁজ নিয়ে দ্রুত সমাধান করা হবে।